মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রসঙ্গ : হক ও নাহক

আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

নগদ অর্থ সম্পত্তি বা সম্পত্তির কাগজ পত্র যার কাছে থাকে তিনি মনে করেন সব কিছু তাঁর বা তাদের। বিশেষ করে বাবা মারা যাওয়ার পর আল্লাহ চাচা মামাদেরকে ছায়া স্বরূপ অভিভাবক নির্ধারন করে দিয়েছেন। নিকটাত্বীয়দের মধ্য এই দুই পক্ষ সন্তানদের জন্য যেমনি মুহরিম তেমনি নিরাপদ রাখার একমাত্র আশ্রয় স্থল। মা জীবিত থাকলেও মায়েরা কখনও বাবার মতো বাইরের কাজ করতে পারেননা, বাইরের ব্যপার জানেনওনা। পরিবারের মূল পরিচালক থাকেন বাবা। বাবার অনুপস্থিতিতে চাচা আর মামারা সমস্যার সমাধান যেমনি করতে সক্ষম তেমনি তাদের জন্য সহজও বটে। মায়ের বাবার বাড়িতে যদি মায়ের সম্পদ থাকে সেটা মামাদের কাছে থাকে, বাবার বাড়িতে চাচাদের কাছে। যাদের চাচাও নেই তাদের যোগ্য বড় ভাই বড় বোন বা স্থানীয় প্রতিবেশিও আত্বীয়গণ এসব বিষয়ে সহযোগিতা করেন। কিন্তু যখন কেউ সব নিজের মনে করে নিজের আয়ত্বে রাখেন তখনই বাঁধে বিপত্তি। বহু হকদার আছেন সব সময় দুহাত তুলে বা নামাযে বসে আঁচল ধরে আল্লাহর দরবারে এ নিয়ে বিচার দিতে থাকেন। হাটতে চলতে ফিরতে দীর্ঘ নিঃশ্বাসে অভিশাপ দিয়ে থাকেন, কখনো কখনো যদি আল্লাহ শুনেই ফেলেন, তবে তাদের উপর অশান্তি ও ভোগান্তি নাযিল করবেন, কখনো তা আল্লাহ সবরে রেখে দেন।

এমনি সম্পদের ব্যপারে পরিবারে একটি বিষয় পরীক্ষিত। তাহলো- এক পরিবারে একজন সম্পদশালী হলে তার পরবর্তী দুতিন সিঁড়ি তার থেকে বেশি সম্পদশালী হতে পারেনা। বরং কমতে থাকে এক পর্যায়ে অভাবী হয়ে পড়ে। তারপর আবার একজনকে আল্লাহ মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে তুলে নেন উপরে অনেক উপরে। মূলত মেধাই মানুষের আসল সম্পদ আর মেধা একমাত্র আল্লাহর দান, এটি কেউ ইচ্ছা করলেই অর্জন করতে পারেনা। এতে আল্লাহর হেকমত লুকায়িত।

পিতা মাতার হক সম্পর্কে আমরা অনেকে ওয়াকিফহাল নয়।পিতা মাতাই জান্নাতও জাহান্নাম এই বিষয়ে আমাদের জ্ঞান নেই। আবার এমন সবক আমাদের বিদ্যালয়েও দেয়া হয়না। আমাদের পাঠ্য বই গুলো এখন অনেকটা ইতিহাস নির্ভর, প্রযুক্তি নির্ভর এবং কর্তৃত্ব ও কৃতিত্ব নির্ভর। আদর্শ নীতি নৈতিকতা শিক্ষার পথ কম। মহানবী (সঃ) ও সাহাবাদের জীবনী পাঠ্য বইতে থাকলে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সমাজ ও ব্যক্তি আদর্শিক হয়ে ওঠতো। সন্তানরা সম্পদশালী হলে বা সম্পদের বিবাদে অনেক সময় মা বাবার খোঁজও নেয়না। এজন্য আল্লাহ সর্বাবস্থায় মা বাবাকে শ্রদ্ধা সম্মানের আসনে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এখনতো অতিরিক্ত মেধার গুনে বৃদ্ধাশ্রম তৈরী হয়েছে।

মামারা হলেন মায়ের ভাই। মা মা দুবার যোগ করলে মামা হয়। মামার সাথে সংশ্লিষ্ট চলাচলের কাহিনী কার না আছে। মামা নিয়ে মামা বাড়ি নিয়ে কত লিখা লিখেছেন কবি সাহিত্যিকগণ। যাদের নানা বাড়িতে জন্ম তাদের মামা কাহিনী লিখার জন্য কোন তথ্য উপাত্ত খুঁজতে হয়না। মামা কারো একজন কারো বহুজন। যাদের বহুজন তারা মামার আদর স্নেহ পেয়ে থাকেন বেশি। কিন্তু এই মামাদের কাছে যখনই মায়ের হক নিয়ে কথা হয় তখনই দূরত্ব চলতে থাকে। যেখানে মামারা বোন ভাগিনাকে ডেকে এনে বলবে তোমাদের পাওনা নিয়ে যাও সেখানে তাঁরা উল্টোটা করেন। কোনো কোনো আলেম মামারা নিজ বৃদ্ধ মাতাকে পুশলিয়ে নিজ নামে দান পত্র করে নেন যা সরাসরি সকল ভাই বোনের হক। তাঁরা সম্পদের ভাগ জানতে চাইলেই অসন্তুষ্ট হন। এমন মামাও আছেন যারা বলেন পারলে কাগজ পত্র খুঁজে বের করে দেখাও,, যেন হক দাবী করে এক মহা অন্যায় করে ফেলেছে।

আর চাচাদের ব্যপারতো আরেক রকম। চাচারা সাধারণত নিজেদের থেকে সম্পদের ভাগীদার বেশি হয় এবং বেশিই ভোগ করে থাকে, ভাগের কথা ওঠলেই মনে কষ্ট।

যে পরিবারে বড় ভাই থাকেন যদি তিনি যোগ্য হন তবে তিনি সবাইকে জানিয়ে সমান বন্টন করে দিবেন এটি উত্তম। কিন্তু কোরানে কঠোর নির্দেশ রয়েছে এতিমের বা বঞ্চিতদের সম্পদ যেন কেউ অন্যায় ভাবে ভোগ না করে। বন্টনের ক্ষেত্রে যেন আল্লাহকে ভয় করে। বর্তমানে প্রতিটি পরিবারে এসব নিয়ে ঝামেলা থাকে। মানুষজন বৃদ্ধ হওয়ার আগেই হঠাৎ হঠাৎ মৃত্যু বরণ করে থাকেন। তাই প্রাপ্ত সম্পত্তির হক নগদে নগদে দিয়ে দেয়া উচিত। এই হক মানুষের জন্য এক ধরনের নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা। পুরুষগণ বাবা থেকে মা থেকে পাবেন, নারীগণ বাবা মা এবং স্বামী থেকে হক পাবেন।

স্বামীরা ঠিক মতো স্ত্রীদের হক বিশেষ করে মোহরানা আদায় করেন না। স্ত্রীরাও শরীয়ত মোতাবেক স্বামীদের আনুগত্য করেন না, ফলে সংসারে যা হবার তাই হয়। সন্তান বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার আগে সন্তানকে নগদ মোহরানা পরিশোধ করে বিয়ে করার শিক্ষাটা এক হাজার অভিভাবকের একজনেও দেননা, দেয়ার প্রয়োজনও মনে করেন না। ফলে যোগ্য পাত্র মোতাবেক বিবাহ হয়না, বিবাহের হকও আদায় হয়না। অথচ বিয়েতে গ্রামবাসী বা প্রতিবেশি বা পাঞ্চায়েত কমিটিকে খাওয়াতে গিয়ে হয়তো মোহরানার বেশি টাকাও খরচ করে ফেলেছেন, এই নাহকের উদাসীনতা সকলের। কোনো কোনো ছেলের বাবা বিয়ে পড়িয়ে বউ নিয়ে ঘরে আসতে পারলেই বাঁচেন। আর মেয়ের বাবা বিয়ে দিয়ে স্বামী বাড়ি পরিচয় করে দিয়েই স্বস্তিবোধ করেন। স্বামীরা স্ত্রীদের রেখে বিদেশ চলে যান আর স্ত্রীরা নিজের মতো বা মা বাবার মতো বা অন্যদের সাথে চলাফেরা করতে করতে এক রকম জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন, পরে তাদেরকে আর আয়ত্বে রাখা যায়না। স্বামীরা বিদেশ থেকে বছরের পর বছর টাকা পাঠানোটাকেই হক মনে করেন। পরে এসে নিজেদের মতো করে কিছুই করার থাকেনা, এতে উভয়ের হক নষ্ট হয়। সন্তান সন্ততীও মা বাবা উভয়ের আদর পায়না। আর চাকুরীজীবী নারীগণ শিক্ষকতা ব্যতিত অন্যান্য স্তরে চাকুরী করে কিভাবে স্বামী সন্তানের হক আদায় করেন জানিনা।
লেখক : গবেষক, শিক্ষাবিদ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন