বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পেঁয়াজ ইস্যুতে কথা রাখেনি ভারত

মিসর চীন তুরস্ক মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আমদানির উদ্যোগ

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

কথা রাখেনি ভারত। কথা ছিল, ভারত অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে। এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আগেভাগেই বাংলাদেশকে জানাবে তারা। শেষ পর্যন্ত এই কথা রাখেনি ভারত। গত ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটি। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতকে কূটনৈতিক চ্যানেলে বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশ খুব দ্রুত ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা করছে।

এদিকে, দেশে পিয়াজের বাজারে সরবরাহ সংকটের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে চলতি সেপ্টেম্বর থেকেই মিসর, চীন, তুরস্ক, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পিয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পেঁয়াজ রফতানি বন্ধে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। ভারত সরকারের এই ঘোষণা দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালের আলোচনায় যে কথা এবং পারস্পরিক সমাঝোতা হয়, তার প্রতি অবিচার হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় অবস্থিত ভারতের হাইকমিশনে গত মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) একটি ক‚টনৈতিক চিঠি পাঠায়।

ঢাকায় অবস্থিত ভারতের হাইকমিশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ রফতানি বিষয়ে হঠাৎ করে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ। বিষয়টি বাংলাদেশের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ সম্মানের সঙ্গে জানাতে চায় যে, চলতি বছরের ১৫-১৬ জানুয়ারি দুদিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের যে বৈঠক হয়েছিল, সেই বৈঠকে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ভারতকে অনুরোধ করেছিল। বাংলাদেশ আরও অনুরোধ করেছিল যে, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের ওপর যদি নিষধাজ্ঞা দিতেই হয় তাহলে বাংলাদেশকে যেন আগাম জানানো হয়। এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর অক্টোবরে ভারতে ভিভিআইপি সফরেও তুলেছিলেন এবং তখনও অনুরোধ করা হয়েছিল যে, এমন ঘটনা ঘটলে তা যেন আগাম জানানো হয়।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালে যে কথা এবং সমাঝোতা হয়েছিল, ভারত সরকারের ১৪ সেপ্টেম্বরের ঘোষণা, সেই কথা এবং সমাঝোতার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে পারেনি। দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যে সোনালী অধ্যায় বিরাজ করছে, বাংলাদেশ সেই সম্পর্কের খাতিরে হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারতের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশে আবার পেঁয়াজ রফতানি চালুর অনুরোধ জানাচ্ছে।’

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের নোটিশটি আমরা জানা মাত্রই নয়াদিল্লির বাংলাদেশ মিশন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে অলিখিত কথা ছিল যে, ভারত অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতনি করবে এবং এ নিয়ে যদি কোনো পরিবর্তন থাকে তবে ভারত বাংলাদেশকে আগে জানিয়ে দিবে। বন্ধুপ্রতিম দেশ দুটির মধ্যে এরকম একটি সমাঝোতা আছে। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারতের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছি এবং প্রত্যাশা করছি খুব দ্রুত ভালো ফলাফল পাব।

অন্যদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘গত ছয় মাসে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রায় দু’গুণ বেড়েছে। সামনেই বিহারের বিধানসভা ভোট এবং মধ্যপ্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচন। তার আগে পেঁয়াজের অগ্নিমূল্যের খেসারত দিতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। সে কারণেই কোনো ঝুঁকি না নিয়ে সোমবার রাতে পেঁয়াজের রফতানির উপরে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।’

এদিকে, ভারত বাংলাদেশে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার পর পিয়াজের বাজারে এক অস্তিরতা বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ। খুচরা বাজারে পিয়াজ ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হলেও পাড়া-মহল্লায় সেটা ১১০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সোমবার দেশি পিয়াজের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং আমদানি করা পিয়াজের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। পিয়াজের বাড়তি দামে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে পিয়াজের সংকট না থাকলেও ইচ্ছে করেই দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে পিয়াজের সংকটে দাম বেড়েছে। গতকাল বুধবার যাত্রাবাড়ীর পাইকারি বাজারে ৮০-৮৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। শনিরআখড়ার খুচরা বাজারে দেখা গেছে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি আকারের পেঁয়াজ।

এদিকে দেশে পিয়াজের বাজারে সরবরাহ সংকটের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে চলতি সেপ্টেম্বর থেকেই মিসর, চীন, তুরস্ক, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পিয়াজ আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য সরকারের কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ বা কোয়ারেন্টিন দপ্তর থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ৯ হাজার টন পিয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) সনদ নিয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার এক দিনেই আরো ১০ হাজার ৭৪২ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসছে মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে। আর সব পিয়াজের চালান দেশে আসবে সমুদ্রপথে।

চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার টন পিয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া ট্রেড ইমপেক্সের ফারুক আহমদ বলেন, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আমি চালানটি আনার চেষ্টা করছি। অনুমতি নেওয়ার এক দিন পর ব্যাংক থেকে ঋণপত্র খুলেছি। ব্যবসায়ীরা জানান, জাহাজীকরণের পর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে ১৪ দিন লাগবে। পাকিস্তান ও চীন দুই দেশ থেকেই বিভিন্ন চালানে পেঁয়াজ আসবে।

গত বছরও ভারত হুট করে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছিল। এতে বাংলাদেশে পিয়াজের দাম বেড়েছিল হু হু করে। সেসময় খুচরা বাজারে রেকর্ড ৩০০ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি হয়েছে। এবার পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পরপরই দেশের খুচরা বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় নগরীতে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গতকাল বুধবার ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও বহদ্দারহাটে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

কেনা দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়ত আল আরাফাত ট্রেডার্সকে ১২ হাজার টাকা এবং বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের খাজা আজমীর স্টোরকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানের সময় অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেয়া হয়। এ সময় পাইকারি বাজারে মানভেদে ৬০-৬৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৭০-৭৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে বলে জানান অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
md anwar ali ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:১৭ এএম says : 0
ওরা আমাদের বন্ধু নয়, দুশমন।
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৪২ এএম says : 0
Varoter onnoyon amader onnoyon .................................. shomporko, kothai amader poro rashtro montri ebar kisu bolen na keno? Amra eilish mas diase tader piaj proyojon tai bondhu rashtrer jonno shob kisui dete hobe
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন