আজকের শিশু একটি দেশ বা জাতির উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। জন্মের পর একটি শিশুকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে স্বাগত জানায়। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। একটি শিশু সকল প্রকার জীর্ণতাকে ভেঙ্গে নতুন স্বপ্ন দেখে পরিবার থেকে। উদ্দমিত, উচ্ছ্বসিত উন্মত্ত হয়ে আলোর মশাল জ্বালিয়ে এক নতুন পৃথিবী সৃষ্টির দিকে সদাশয় সে ধাবিত হয়। পরিবারকে কেন্দ্র করে শিশুরা অপার সম্ভাবনাময় সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। শিশুর সাথে পারিবারিক মেলবন্ধন শিশুটির বেড়ে ওঠার নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। তাই শিশুর সাথে পরিবারের আচরণ হওয়া চাই কোমল ও বন্ধুসুলভ। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায়, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশে পরিবার একটি মাধ্যম। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার আগে থেকেই তার মায়ের আচরণ তার উপর প্রতিফলিত হতে থাকে। এ সময় অনেক যত্নবান হতে হয় যেন শিশুর উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। কোমলমতি শিশুরা সাধারণত মা’কেই বেশি অনুকরণ করে থাকে। এজন্য বিশেষ করে মাকে সতর্ক থাকলে হবে। নেপোলিয়ান হয়ত এজন্যই বলেছিলেন, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও। আমি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব’। বেড়ে উঠার সাথে সাথে তার মধ্যে নানান প্রশ্ন উঁকি দিতে থাকে। শিশুটি প্রশ্ন করতে শেখে। কোন বিরক্তিসূচক শব্দ ব্যবহার না করে শিশুকে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করতে হবে। এটি শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে। অনেক পরিবারে শিশু প্রশ্ন করলে ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দেয়া হয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে হতে শিশুটি প্রশ্ন করতে ভয় পেতে শুরু করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একই ভয় কাজ করে বলে কাক্সিক্ষত জ্ঞানার্জন করতে সে সক্ষম হয় না।
পিতামাতা সৎ ও সুন্দর স্বভাবের অধিকারী হলে শিশুটি ও অনুরূপ স্বভাবের হতে থাকে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বলেছেন- ‘শিশুরা হচ্ছে বাগানের কাদা মাটির মত। তাদেরকে খুব সতর্ক ও আদর সোহাগ দিয়ে যত্ন করতে হবে’। সত্যিই তাই। কাদামাটিকে যেরূপ ইচ্ছে আকৃতি দেয়া যায়, শুকিয়ে গেলে তা আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। শিশুরাও ঠিক তেমনই। ছোটবেলায় তৈরিকৃত সকল অভ্যাস পরিণত বয়সে স্থায়ী বৈশিষ্ট্যে রূপান্তরিত হয়।
স্কুলে যাওয়া, খেলার সাথী বাছাই করা, সহপাঠীদের সাথে মেলামেশা বাড়ির চারপাশের পরিবেশ শিশুর মানসিক বিকাশে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পারিবারিক কলহ শিশুর মনে সহিংসতার বীজ বপন করে। মা-বাবার মিথ্যে বলার অভ্যাস থাকলে শিশুর মনে তা সঞ্চারিত হয়। ফলে শিশুটির মধ্যে মিথ্যে বলার প্রবণতা তৈরি হতে থাকে। যতদূর সম্ভব পিতামাতাকে সতর্ক হতে হবে নয়তো শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ভাল পরিবেশে বা দর্শনীয় স্থানে শিশুকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া শিশুর মানসিকতাকে নির্মল করে। সেসব দেখে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করার ফলে শিশুর অনুসন্ধিৎসু মনে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
ছোটবেলা থেকে শিশুকে মুক্তমনের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। ভাল কাজে উৎসাহ ও মন্দ কাজে নিরুৎসাহিত করা হলে শিশু ভাল-মন্দ বিচার করতে শেখে; যা তার মানসিক উন্নয়নে সহায়তা করে। স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য স্বাভাবিক বিষয়। সন্তানের উপর যেন এর ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে সেদিকে উভয়কে সজাগ থাকতে হবে। প্রতিকূল পরিবেশে শিশু যেন ঘাবড়ে না যায় এজন্য তাকে সহনশীলতার শিক্ষা দিতে হবে। ভয়ানক কোন গল্প শিশুর সামনে কখনো বলা উচিত নয়। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে শিশুকে কখনো কখনো একা ঘরে রাখা উচিত। এতে তার মনে ভয় দূর হয়ে সে সাহসের সঞ্চার করতে পারবে। টেলিভিশন, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনে শিশু যেন আসক্ত না হয় সেদিকে বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে। শিশুকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ছোট ছোট কাজ তাকে দিয়ে করাতে হবে। সেই সাথে প্রত্যেক ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন