রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মানবাধিকার ও ইসলাম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১৮ এএম

নয়
মহানবী সা. আলো বলেছেন- “কোন যিম্মীকে (মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিককে) হত্যাকারী জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না। যদিও জান্নাতের সুগন্ধ অনেক দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়। “বুখারী, ইমাম, আস-সহীহ, মো. আব্দুল করিম খান সংকলিত, ঢাকা : বাংলাদেশ লাইব্রেরী ১৯৯৬, পৃ. ৩৩০, হাদীস নং ১২৭৭”। বিদায় হজ্জ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে মহানবী সা. বলেছেন, “হে মানবজাতি! নিশ্চয় তোমাদের জীবন, সম্পদ এবং সম্ভ্রম তোমাদের প্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত পবিত্র”। “আহমদ, মুহাম্মদ শফিক ও মু.রুহুল আমীন, ইসলামে মানবাধিকার : নাগরিক ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা, যুক্তসংখ্যা ৪৭, ৪৮, ৪৯, অক্টোবর ৯৩- জুন, পৃ. ১৫৮”। মহানবী সা. আত্মহত্যাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং আত্মহত্যাকারী তার নিজের জীবন নিজেই শেষ করে দেয়ার শাস্তি হিসাবে আত্মহত্যার অনুরূপ পন্থায় দোযখে শাস্তি ভোগ করবে বলে হুঁশিয়ার বার্তা দিয়েছেন। “বুখারী, ইমাম, আস-সহীহ, মো. আব্দুল করিম খান সংকলিত, প্রাগুক্ত, হাদীস নং ১২৫১-১২৫৩”।
২। বিবাহ ও পারিবারিক জীবনযাপনের অধিকার : মুহাম্মদ সা. এর জীবন দর্শনে সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তিকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। ইসলামে বিবাহ সমভাবে একটি অধিকার ও ধর্মীয় দায়িত্ব। রাসূল সা. বলেছে- “বিবাহ আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নতের প্রতি অনাসক্ত সে আমার আদর্শভুক্ত নয়। “প্রাগুক্ত”। কৌমার্যব্রতকে প্রত্যাখান করে তিনি বলেছেন : “ইসলামে সন্নাসবাদ ও বৈরাগ্য প্রথার অনুমোদন নেই। “প্রাগুক্ত”। প্রকৃপক্ষে ইসলামে ‘বিবাহ’ কেবল জৈবিকা চাহিদা পূরণের পন্থাই নয় বরং পারস্পরিক ভালবাসা, সমঝোতা, সমবেদনা ও নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। রাসূল সা. প্রবর্তিত বিবাহব্যবস্থা এমন একটি সামাজিক চুক্তি যাতে নারী ও পুরুষ উভয়ের সম্মত বা অসম্মত হবার সমান অধিকার স্বীকৃত। তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যাপারেও ইসলামে নারী ও পুরুষকে সমান অধিকার প্রদান করা হয়েছে। “প্রাগুক্ত”।
বিবাহের পাশাপাশি পারিবারিক জীবনকে ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেহেতু স্বামী-স্ত্রীই হল পরিবারের মূল ভিত্তি এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের উপরই প্রাথমিকভাবে পারিবারিক জীবনের শান্তি ও সুখ নির্ভরশীল তাই পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক কেমন হবে এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- “তাঁরা (স্ত্রীগণ) তোমাদের (স্বামীদের) ভূষণ আর তোমরা তাদের ভূষণ। “আল-কুরআন, ২ : ১৮৭”।
৩। সম্পদের মালিকানা : রাসূল সা. প্রবর্তিত ইসলামী অর্থব্যবস্থা সমাজবাদ বা পুঁজিবাদ কোনটিকেই সমর্থন করে না এখানে সীমিত পরিসরে ব্যক্তির জন্য সম্পত্তির মালিকানা স্বীকৃত। তবে তা এতটাই নিয়ন্ত্রিত যে, ব্যক্তি এখানে সম্পদ উপার্জনের লাগামহীন স্বাধীনতা লাভ করে না। ইসলামী সমাজে সকল সম্পদের প্রকৃত মালিকানা আল্লাহর। মানুষ দায়িত্বপ্রাপ্ত (Trustee) হিসাবে এর অর্জন, ভোগ ও বণ্টনের অধিকার লাভ করে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “তাদের সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে”। “আল-কুরআন, ৭০ : ২৪, ২৫”। দান-খয়রাত, সদকা, যাকাত, ফিতরা প্রভৃতির মাধ্যমে বর্ধিত সম্পদের বিলি-বণ্টন করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক অবস্থার কথা কেবল বলাই যায়নি, রাসূল সা. তাঁর জীবনে কার্যকরভাবে তা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইসলামে সমাজে পুঁজিপতি ও শ্রমিকের সম্পর্ক শোষণ বা সংঘর্ষ নির্ভর নয় বরং পারস্পরিক কল্যাণমূলক ও ভ্রাতৃত্বসূলভ। রাসূল সা. বলেছেন, “যে সত্তার হাতে আমার জীবন তার শপথ করে বলছি, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারে না, যে পর্যন্ত না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা অন্য ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করে”। “আহমদ, মুহাম্মদ শফিক ও মুহাম্মদ রুহুল আমীন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৭৫”।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন