দুই
কাদিয়ানীদের মাঝে দাওয়াত : একটি নিবেদন
ওপরে বর্ণিত অঞ্চলসমূহে কাদিয়ানীদের প্রভাব সবচে’ বেশি। অনেক জায়গায় তারা তাদের ইমাম নিযুক্ত করে রেখেছে। তাদের কেন্দ্র খুলে রেখেছে। তাই কাদিয়ানী মতবাদে আক্রান্ত এসব লোককেও অন্যদের মতো দাওয়াতের লক্ষ্যবস্তু বানানো উচিৎ। এদের প্রতিও স্ববিশেষ গুরুত্বের সাথে দৃষ্টি দেয়া উচিৎ। তবে কাদিয়ানীদের এই আন্দোলন খুবই স্পর্শকাতর। কারণ তাদের এই ভ্রান্ত মতবাদও যথারীতি একটি আন্দোলন ও মিশন। তাই সাদাসিধে মুসলমানদের এদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য জনসাধারণের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। তাদের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরতে হবে। আর এ কাজ গ্রামে গ্রামে গিয়ে উলামায়ে কেরামকেই করতে হবে। কারণ কাদিয়ানীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসলামের নামেই সাধারণ মুসলমানদের মাঝে তাদের মতবাদ প্রচার করছে। গরীব মূর্খ মুসলমানরা এই ভেবে তাদের অপপ্রচারের শিকার হচ্ছে যে, আমরা তো সহযেই ধর্মের ইমাম পেয়ে যাচ্ছি। অথচ এসব সাধারণ মুসলমান যদি জানত যে, কাদিয়ানীরা মুসলমানই নয় তাহলে তারা এই ফেরকা থেকে দূরে থাকত।
তাদের ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারকদের মাঝে কিছু ‘মুসলমান’ এমন আছে যারা অর্থের বিনিময়ে একাজ করছে। এদেরকে সঠিক রাস্তা বুঝালে তারা সহজেই বুঝে এবং সঠিক পথে ফিরে আসে। কিন্তু তাদের প্রশিক্ষিত ধর্ম প্রচারকদের সাথে কথা বলতে হলে প্রথমে তাদের ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সম্পর্কে বিস্তর ধারণা থাকতে হবে। এসব প্রশিক্ষিত প্রচারকরা হযরত ঈসা (আ.)-এর জীবন ও মৃত্যুর ব্যাপারে দার্শনিক ভঙ্গিতে বিভিন্ন ধরনের আজগুবি কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এদের সামনে যখন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কীর্তিকলাপ এবং ক্যারেক্টর তুলে ধরা হয় তখন তারা ময়দান ছেড়ে ভাগে। কারণ মির্জা কাদিয়ানীর মিথ্যাচার এবং কাজের অসঙ্গতি এতটাই প্রসিদ্ধ যে, সেগুলো তুলে ধরলে খুব দ্রæত সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এসব এলাকায় যদি প্রাথমিক দীনি শিক্ষা চালু করে দেয়া যায় তাহলে এ সমস্যা ভবিষ্যতের জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্যান্য মুশরিক দল কর্তৃক আক্রান্ত লোকদের দাওয়াত দেয়ার পদ্ধতি
হিন্দুস্তানের পরিবেশ সুফি-সাধক, সুন্নি এবং হিন্দু জোগীদের জন্য সবসময়ই উর্বর। তাই এখানে তাদের আধ্যাত্মিক আন্দোলনের প্রভাব খুব দ্রুত কাজ করে। বাহাঈ ফেরকা, রাধাস্বামী, স্বাতশিং, জি গুরুজি এবং নারাঙ্কারীসহ না জানি কত শিরকি আন্দোলন এখানে আছে, যাদের ভিত্তিই হলো আধ্যাত্মিকতা এবং জোগের ওপর (হিন্দুদের বিশেষ এক ধরনের আর্চনা যা শুয়ে করা হয়)। কিছু মুসলমান তাদের চমৎকার কিছু কারসাজি দেখে ঈমানহারা হয়ে যায়। এদের সঠিক পথে আনার জন্য সবচে’ কার্যকর উপায় হলো, তাদেরকে আল্লাহওয়ালা বুযুর্গদের সোহবতে নিয়ে আসতে হবে। তাঁদের সাহচর্যে থাকা এবং তাঁদের সাথে ধারাবাহিক সম্পর্ক রাখাই হলো ওইসব ঈমানহারা মুসলমানের সহজ চিকিৎসা। এর মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
বেদআতীদের মাঝে কাজ করার সহজ উপায়
কবর পূজারী এবং বিভিন্ন শিরকি কর্মকান্ডে লিপ্ত বেদআতীদের মাঝে কাজ করার হেকমতপূর্ণ উপায় হলো, তাদের সামনে বেদআতের অসারতা তুলে ধরে সেটাকে খন্ডন না করা এবং এর মাধ্যমে তাদের মনে জেদ তৈরি না করা, বরং তাদের সামনে সুন্নাতের বড়ত্ব এবং বিভিন্ন সুন্নাতের ফজিলত তুলে ধরে তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করা। তাদের সামনে দুরুদের ফযিলত বর্ণনা করে তাদেরকে দুরুদের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। যারা দৈনিক ১০০ বার দুরুদ পড়ে , হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. তাদেরকে অধিক দুরুদ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাই এসব বেদআতিদের দৈনিক কম করে হলেও ৩০০ বার দরুদ পড়ার ওপর অভ্যস্ত করে তোলার চেষ্টা করা। আশা করা যায়, দুরুদের আধিক্য এবং সুন্নাতের ওপর নিয়মতান্ত্রিক আমলের বরকতে তাদের হৃদয়ে বিদআতের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হবে।
যদিও দাওয়াত ও তাবলীগের নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হয়নি, তারপরও অন্যান্য বিষয়ের মতো এখানেও অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের আলোকে কিছু উপায় গ্রহণ করা সম্ভব। এখানেও কিছু পথ ও পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। এই প্রয়োজন পুরো করার জন্য দীনি মাদরাসার দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের উচিৎ মাদরাসায় দাওয়াতী কোর্স চালু করা। এর মাধ্যমে ছাত্রদের মাঝে দাওয়াতের প্রতি আগ্রহ ও স্পৃহা তৈরি করা সম্ভব। পাশাপাশি যেসব ছাত্র কর্মজীবনে পদার্পণ করেছে তাদেরকেও এই কোর্সের সাথে সম্পৃক্ত করা। প্রয়োজনে বিভিন্ন স্তরে বিশেষ কোর্সও চালু করা যেতে পারে। ফুলাতের ‘জমিয়তে শাহ ওয়ালিউল্লাহ’-ও এ ধরনের একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স শুরু করেছে। যার ইতিবাচক ফলাফলও সামনে আসছে। যদি জায়গায় জায়গায় বড় বড় দীনি মাদরাসাগুলো এ ধরনের কোর্স চালু করে, তাহলে দাওয়াতী কর্মীদের বিশাল একটি টিম তৈরি হয়ে যাবে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে খুবই ইতিবাচক ফলাফল অর্জিত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন