শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

মানব জীবনে দেহ ও মনের সম্পর্ক

| প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১৮ এএম

দেহধারী মানুষ যাবতীয় যাতনা থেকে মুক্তি পেতে চায়। যেমন শারীরিক যাতনা, মানসিক যাতনা। উদ্বেগ ও আস্থার অভাব, ভয়, ক্রোধ, কু-অভ্যাস, ব্যর্থতার ভাবনা। এ ছাড়া, উদ্দেশ্যহীনতা, অমনোযোগ, বৌদ্ধিক অহমিকা, জীবনের বৈষয়িক দিক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা।

দৈহিক ও মানসিক যাতনা থেকে মুক্তিলাভের জন্য একান্ত প্রয়োজন আগ্রহ এবং এই সমস্ত ব্যাধির নিরাময়ের জন্য প্রত্যেকটির উপর সমান ও গুরুত্ব দান করা উচিত।

আমরা আমাদের চারপাশে দেখি মানুষ দৈহিক ব্যাধির উপর বেশি মনোযোগী হয়। কারণ, এগুলো অনুভব করা যায় বা কখন কখনও চোখে দেখা যায়, মানুষ বুঝতে চায় না যে, অহমিকা, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি মানসিক দুঃখ রোগের প্রকৃত কারণ।

তাই মানুষের চেষ্টা করতে হবে অসহিষ্ণুতা, ক্রোধ ও ভয় জাতীয় মানসিক রোগের ধ্বংস সাধনে। মনকে পবিত্র রাখতে হবে, তবে দেহকে অবজ্ঞা করে নয়, প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলতে হবে দেহকে ব্যাধিমুক্ত রাখার জন্য। আবার এমন নিয়মে নিজেকে আবদ্ধ না করা যার সামান্য ব্যাঘাতে নিজে বিপর্যস্ত হতে হয়। কারণ দেহের গুরুত্ব যথেষ্ট, মনের সঙ্গে সঙ্গে লোভের কারণে অতিরিক্ত ও অপাচ্য বস্তু ভোজন করা উচিত নয়। ব্যায়াম অনুশীলন বিদ্যা আয়ত্ত করে জৈব শক্তি সংরক্ষণ করতে হবে। মনকে শান্ত রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশ্রাম জরুরি, তার জন্য প্রয়োজন সচেতনভাবে নিদ্রার নিয়ন্ত্রণ। নিদ্রা থেকে মানুষ আশ্চর্য শান্তি ও শক্তি পায়।

মন থেকে যাবতীয় অশান্তিদায়ক চিন্তাকে দূর করে আনন্দে ভরিয়ে রাখতে হবে। মানসিক রোগমুক্তিকে উপলব্ধি করতে হবে। জীবনকে বিষাদময় করে তোলা বিভিন্ন কু-অভ্যাস ত্যাগ অবশ্য করণীয়। দৈনন্দিন জীবনে একাগ্রতা ও যোগসাধনা যে শান্তি ও সুস্থিরতা আনে তা অনুভব করতে হবে। নিজেকে তার জন্য কঠিন বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রবল আবেগের বশবর্তী না হয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। রোগ নিয়ে চিন্তা করার কু-অভ্যাস গড়ে উঠতে যেমন সময় লাগে, তেমনি স্বাস্থ্য চেতনার সু-অভ্যাস গড়ে তুলতেও যথেষ্ট সময় লাগে। সু-অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আগ্রহ ও ধৈর্য সহকারে নিজের দেহ ও মনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে হবে। একই সঙ্গে দুইটি বিপরীতধর্মী মনোভাবকে মনে স্থান দেয়া চলবে না। নিজ বুদ্ধি ও চিন্তার দ্বারা উপলব্ধি করে সু-কে দৃঢ়ভাবে স্থিত করা উচিত। গভীরভাবে বিচার-বিবেচনার পর তাদের আত্মস্থ করা উচিত।

আমরা যে আর্থ-সামাজিকপরিবেশ ও পরিবারে বাস করি তা যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব যে, কত রকমের প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করে আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। শারীরিক কোনো অসুবিধা হলে অবশ্য ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ও ঔষধ নিতে হবে। তবে উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কোনো মানুষ যদি নিজেকে অসুস্থ মনে করে যদিও তার কোনো নির্দিষ্ট শারীরিক অসুবিধা নেই, তাহলে ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তার আসল রোগের কারণ মানসিক। যে নিজেকে অসুস্থ বলে ভাবছে যে কোনো কারণেই হোক, ফলত তার প্রভাব শরীরের ওপর পড়ে, আর সে মনে করছে আমি শারীরিকভাবে দুর্বল, এর থেকে মুক্তি তাকে কোনো ঔষধ দিতে পারবে না। তার চাই মানসিক শক্তি যা তার মনে সুস্থ থাকার আগ্রহ ও ইচ্ছা জাগাবে। এই আগ্রহ ও ইচ্ছা আসবে ব্যক্তির ভেতর থেকে। কখনো তা আসতে পারে তার আশেপাশে বা চেনাজানা এমন কেউ যার সঙ্গে কথা বলেও তাকে লক্ষ্য করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা কোনো সফল মানুষের জীবনী পড়ি কেন? অবশ্যই তা থেকে আমরা কিছু জানতে পারি, সেই জানা বা অনুভব করে নিজের ওপর সেই অনুভবের প্রভাব আনতে পারি, তা ব্যক্তির জীবনীশক্তি জোগাবে। ব্যক্তির ইচ্ছা প্রবল হতে হবে। সুস্থ থাকার ইচ্ছা তাকে জীবনের নানা দিক সম্বন্ধে আগ্রহী করে তুলবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তি যদি মনে করে, আমি যা তাতেই আমি খুশি তাহলে সমস্যার সমাধান সে নিজে করে ফেলবে। তবে শুধু মুখে বললে হবে না, মন থেকে মেনে নিতে হবে। এই মন থেকে মেনে নেয়া অনেকের কাছে কঠিন কিন্তু অসাধ্য নয়। মানুষের শক্তি প্রবল, সেই শক্তিকে কাজে লাগালে এবং অন্যকেও সাহায্য করলে তবেই এই লেখা সার্থক তা না হলে এ লেখা অর্থহীন।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন