শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কানাডার পাত্রী সেজে ৩০ কোটি টাকা হজম

অবশেষে পুলিশের কব্জায় দু’দিনের রিমান্ডে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

কানাডার সিটিজেন, ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই সংবাদপত্রে এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস হলেও তার কথাবার্তা ও চলনে কানাডা প্রবাসী ভেবে ভুল করেছেন অনেকে। তার ফাঁদে পড়ে খুইয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গত ১১ বছর ধরে এমন প্রতারণা করে আসার অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের অনেক পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ৩টি মেমোরি কার্ড, ৭টি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত সাদিয়ার দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সিআইডি। তার বিরুদ্ধে গুলশান থানার করা প্রতারণার মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর শরীফুল ইসলাম শরীফ। অপরদিকে সাদিয়ার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদ-উর-রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার আরো বলেন, গত ৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞান দেয়া হয়, ‘প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, কানাডার সিটিজেন, ডিভোর্সি সন্তানহীন বয়স ৩৭, ৫.৩ ফুট লম্বা নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই। যোগাযোগের জন্য ঠিকানা-বারিধারা। সঙ্গে একটি মোবাইল নম্বর দেয়া। জান্নাতুল তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এই প্রতারণা শুরু করেন। ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে সিআইডি।
তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞাপন দেখে জনৈক নাজির হোসেন প্রতারক জান্নাতুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে গত ১২ জুলাই গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবে এবং সেখানে তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করবেন, জান্নাতুলের এসব কথায় বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরে প্রতারক জান্নাতুল জানান, কানাডায় প্রচন্ড শীত তাই সেখান থেকে তার দুইশ’ কোটি টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসবেন। পরে দেশেই ব্যবসা করবেন।
তিনি বলেন, ডিএইচএলের মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখে ট্যাক্স/ভ্যাট/ডিএইচএল বিল বাবদ মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখেন জান্নাতুল ফেরদৌস।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এভাবে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন জান্নাতুল। তার একটি হিসাবের খাতা জব্দ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকার হিসাব পেয়েছি। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। সেগুলোতে ১ কোটি টাকা পেয়েছি। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হলে পরে সে মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দিতো। এই চক্রের অপর সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Chowdhoury Jewel ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
শুধুমাত্র এই প্রতারক মেয়েকে শাস্তি দেয়া ঠিক হবে না। যারা লোভে পরে টাকা দিয়েছে এদেরকেও শাস্তি দিন। করন এদের লোভ খুব বেশি রাতারাতি বড়লোক হতে চায়। কোন খোঁজ খবর নেই একজন বললো আর দশ/বিশ লাখ টাকা দিয়ে দিলো। খোজ নিয়ে দেখুন এদের টাকা হারাম পথে রোজগার এবং এরা চুড়ান্ত লোভী। সৎ পথে পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করলে কখনো এভাবে টাকা দিতো না।
Total Reply(0)
Mohammed Shahadat Hossain ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
জাতীয় পত্রিকার বড় বড় সাংবাদিক সাহেবরা এই সব নিউজ ওনাদের নামি দামি পত্রিকায় ছাপানোর আগে এই সব নিউজ যাচাই বাছাই করার দরকার কি একবার ও মনে করেন না??
Total Reply(1)
Mohammed Shah Alam Khan ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৩৫ পিএম says : 0
@ Mohammed Shahadat Hossain সাহেব, আপনার অভিযোগ সঠিক নয়। সমাজকে সচেতন করাই হচ্ছে সাংবাদিকদের কাজ কাজেই সেই কাজের তাগিদেই সাংবাদিক সাহেব এই প্রতারনার উপর সংবাদ করেছেন। এটাই সঠিক সংবাদ এতে করে সামনের দিকে এধরনের প্রতারনার শিকার হবে না। তবে প্রতারকেরা এই সংবাদে খুবই মর্মাহত হয়েছে কারণ তাদের কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়েগেছে।
Md Didar Alam ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
যারা পরের সম্পদের উপর লোভ করবে তাদের অবস্থা এমনই হবে,, তবে প্রতারনা চক্রের সব সদস্য গুলোকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।
Total Reply(0)
Ayesha Rahman ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
৬০ বছরের পাত্র শেষ বয়সে কানাডায় স্থায়ী হতে চায়!! পাত্রীর পিছনে খরচ করেছে পৌনে ২ কোটি টাকা!!! এতো টাকা আছে যার, তার কানাডা যাইতে বাধা কোথায়?
Total Reply(0)
Rahman Hridoy ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৪ এএম says : 0
এমন বিজ্ঞাপন নতুন নয়, প্রায় পত্রিকায় তা দেখা যায়। মানুষ প্রতারিত হয়ে বেকুব হয়ে থাকে! এদের থাকে মাস্তান বাহিনী, মানুষকে করে হেনস্তা, বিয়ে তো দূরের কথা জীবন নিয়ে ফিরে আসা-ই যেখানে দায়!!
Total Reply(0)
Abul Mohsin Neeroo ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৫ এএম says : 0
যে সমস্ত পত্রিকাওয়ালারা এ সব প্রকাশ করে প্রতারণায় সহায়তা করেছে তাদের বিচার চাই।
Total Reply(0)
Masum Ahmed ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৫ এএম says : 0
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু কথাটির প্রমান ১০০% পেলাম।ঘরে বউ সন্তান রেখে যাহারা সুন্দরী মেয়ে দেখে লোভ সামলাতে পারে না? তাহাদের উচিত শিক্ষা হয়েছে।
Total Reply(0)
কামাল ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:২৯ এএম says : 0
অতি লোভে তাঁতি নষ্ট সস্তায় বড়লোক হতে চাইলে প্রতারণার শিকার তো হতে পারেনি
Total Reply(0)
দিদারুল ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:৩০ এএম says : 0
মহিলাটি কে দেখে মাসি মনে হয় খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার কোন কোন মন্ত্রীর সাথে তার ছবি রয়েছে
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:৫৫ এএম says : 0
যে যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হইয়াছে ওই পত্রিকাদেরকে ও বিচারের আওতায় এনে বড় স্বাস্থী দেওয়া হোক। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৫১ পিএম says : 0
কা...না...ডা তিন অক্ষরের একটা নাম কানাডা। এই দেশ আসোলেই শান্তির একটা দেশ এদেশে মানুষের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে। চাকুরি করুক বা না করুক তারপরও এখানে মানুষ না খেয়ে থাকেনা কারণ সেসময়ে সরকার তাঁর ভরন পোষনের দায় দায়িত্ব নিয়ে নেয়। কাজেই একজন বাংলাদেশির জন্যে এই দেশ সোনার হরিন পাবার মতই বলা যায়। সেদিক থেকে চিন্তা করলে বৃদ্ধের শেষ বয়সে শান্তির জন্যে বিয়ে করতে চাওয়াটার মধ্যে কোন দোষ নেই। তবে ওনার যেটা করা দরকার ছিল সেটা হচ্ছে এই মহিলার কানাডার বিস্তারিত খবরা খবর নেয়া মানে তাঁর কি কাজ, তাঁর ঠিকানা পরিচিতদের ঠিকানা ইত্যাদি। তারপর যখন দেখতে পেল মহিলা এক এক কাজের বাহানায় প্রচুর টাকা দাবী করছে তখনই বুঝা দরকার ছিল এই মহিলা প্রতারনা করছে। কাজেই এখানে যারা টাকা দিচ্ছেন তারা যদি তাদের টাকার মূল্য না বুঝেন তাহলে অবশ্যই কেহ না কেহ তাদের টাকা ছল চাতুরতা করে মেরে দিবে এটাই স্বাভাবিক। আমি একজন কানাডিয়ান নাগরিক হিসাবে বলতে চাই কেহ যদি কানাডার কথা বলে টাকা চায় তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে সেখানে গোলমাল আছে। ইমীগ্রেশনের নামে মানুষ প্রচুর ধোকা দিচ্ছে তবে তারা ২/১ লক্ষ টাকা নিয়ে চালবাজি করে। এখানে বলাযায় ইমীগ্রেশনের বিষয়ে ধোকা খাওয়াটা মেনে নেয়া যায় কারণ ইমীগ্রেশন ব্যাবসায়ে সঠিক ব্যাবসায়ীও আছেন। কিন্তু এই বিয়ে করা বা স্পন্সার করে ভিসা দেয়া এভাবে যারা ঠকেন আমি প্রকাশে বলতে চাই তারা বোকার রাজ্যে বাস করেন। কারণ স্পন্সার করতে হলে একমাত্র পিতা মাতা সাথে ভাই বোনদেরকে কানাডিয়ান আইনে স্পন্সার করা যায়। এমনকি নিজের ভাই বোনকেও বাবা মা ছাড়া স্পন্সার করা যায়না। মানে একজন কানাডিয়ান নাগরিক তার নিজের এক স্ত্রীকে, নিজের জন্মদেয়া সন্তানদেরকে (সন্তানদেরকে আলাদা ভাবেও স্পন্সর করতে পারে) এবং বাবা মাকে (বাবা মার সাথে ভাই বোনদের আলাদা ভাবে নয়) স্পন্সর করতে পার। এটা যেকোন সাধারন মানুষ কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে জেনে নিতে পারে। তারপরও যদি কেহ বড় বড় কথা বলে তাহলে সেটাও ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশনে গিয়ে জাচাই করে নিতে পারে। কাজেই যারা বোকার রাজ্যে বাসকরে তারই অতিসহজে চাকচক্য দেখে ধরা খায়। সেজন্যে গুনি জনেরা বলেছেন যা চকচক করে তাহাই সোনা নয়। এসব দেখে এবং শুনে মনে হয় বলি জাতীর জনকের বলা বাঙালীরা মানুষ হয়েছে সেই কথাটা সত্য নয়। মনে পরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কথা ‘রেখছ বাঙালী করে মানুষ করনি’ কবিগুরুর বলা সেই কথাটাই বার বার প্রমাণিত হচ্ছে বাঙালী মানুষ হয়নি বাঙালি রয়েগেছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন