শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঐক্যের বদলে বিভেদ বিএনপিতে

ঢাকার দুই আসনে উপ-নির্বাচন মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ ঢাকা-৫ আসনের নবীউল্লাহ নবী ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থীদের একে অপরের বিরুদ্ধে চিঠি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধ্বস পরাজয়ের পর বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে উপনির্বাচনগুলোতে প্রার্থী দেয়া শুরু করে। এসব নির্বাচনে অংশ নিয়ে বগুড়া-৬ আসন ছাড়া আর কোনটিতেই জয়লাভ করতে পারেনি রাজপথের এই বিরোধী দল। বরং অনেক উপনির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের চাইতেও ধরাশায়ী হয়েছে। তবে এতোকিছুর পরও দলকে শাক্তিশালী করতে এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই বিএনপি সব ধরণের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যে লক্ষ্য নিয়ে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা বলছে সাম্প্রতিক ঢাকার দুটি উপ-নির্বাচনে প্রার্থীতা নির্বাচন করতে গিয়ে ঘটে গেছে তার বিপরীত চিত্র।

ঢাকা-৫ আসনে বিগত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নবীউল্লাহ নবীর বদলে সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেয়া হয়েছে ধানের শীষের মনোনয়ন। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন নবীউল্লাহ নবী। তিনি পরোক্ষভাবে মনোনয়নের দায়িত্ব থাকা নেতৃবৃন্দকে সরকারের এজেন্ট বলেও উল্লেখ করেছেন। নবীর সমর্থনকারী নেতাকর্মীরা জানান, আরেক আসনের প্রার্থীকে তাদের আসনে মনোনয়ন দেয়ায় তারা প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবেন না।

আর সংঘর্ষের কারণে ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এই আসনের দুই প্রার্থী ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে চিঠিও দিয়েছেন। সাথে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের স্বাক্ষরসহ ভিডিও ও ছবি যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ফলে প্রার্থী ঘোষণার পর বিভক্ত হয়ে গেছে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপি নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে প্রার্থী ঘোষণার আগেই দুইভাগে বিভক্ত ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপি
গত শনিবার বিকালে ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৬ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার অনুষ্ঠিত হয় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। সাক্ষাতকার চলাকালীন সময়ে কার্যালয়ের বাইরে প্রথমে নবীউল্লাহ নবী ও সালাহউদ্দিন আহমেদের সমর্থকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এরপরে ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী কফিল উদ্দিন আহমেদ ও এসএম জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এতে বেশ কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হন। দুজনের মাথা ফেটে যায়। এর মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর এতে ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ডও। গুলশানের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির মুখোমুখীও করতে পারে বিএনপি। ইতোমধ্যে ওইদিনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান করে এবং স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গুলশানে সংঘর্ষের ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঢাকা-১৮ আসনের দুই প্রার্থী সংঘর্ষের ঘটনার পেছনে একে অপরকে দায়ী করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে চিঠি দিয়েছেন। কফিল উদ্দিন আহমেদসহ সাত মনোনয়ন প্রত্যাশীর হামলা ও আহত করার ঘটনায় এসএম জাহাঙ্গীরকে অভিযুক্ত করে সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। এ আসনে বিএনপির ৯ নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী। এর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, কফিলউদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল হোসেন, আক্তার হোসেন মোস্তফা কামাল, বাহাউদ্দিন সাদী ও আব্বাসউদ্দিন লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, এস এম জাহাঙ্গীরের বাহিনী লাঠি-সোঁটাসহ এম কফিল উদ্দিনের সমর্থকদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করে। এছাড়া বিগত সিটি নির্বাচনে এসএম জাহাঙ্গীরের নিষ্ক্রিয়তা, আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত, পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে সংঘ্যতাসহ নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই আসনে প্রার্থী ঘোষণা না করার অনুরোধ জানান তারা। অপর দিকে এসএম জাহাঙ্গীরও ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপি-অঙ্গ দলগুলোর সমর্থনে স্বাক্ষর সংবলিত চিঠি বিএনপি মহাসচিব বরাবর জমা দেন। চিঠিতে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান।

হামলার ঘটনার বিষয়ে ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এসএম জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা প্রার্থীরা কার্যালয়ের ভেতরে ছিলাম, বাইরে কিভাবে এই ঘটনা ঘটেছে তা জানা নেই। তবে এধরণের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। একই আসনের আরেক প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার জন্য এসএম জাহাঙ্গীরের সমর্থকরাই দায়ী। তাকেও গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশে জাহাঙ্গীরের নেতাকর্মীরা বাঁধা দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

দলের হাইকমান্ডের পাশাপাশি বিএনপির আন্দোলনমুখী নেতাকর্মীও নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে এই ধরণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ, দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ প্রায় ২৬ মাস কারাবন্দী থাকার সময় দলের নির্বাচনমুখী নেতাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এই ধারা নেতারা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের বিপরীতে নির্বাচন নিয়েই বেশি ব্যস্ত। এখনো করোনাভাইরাসের অজুহাতে ফেসবুক-জুমেই আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। রজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে অনাগ্রহী হলেও নির্বাচন এলেই সক্রিয় হয়ে উঠেন তারা। নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ৪টি আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আবেদন করেছিলেন ২৯জন প্রার্থী। আবার মননোয়ন উত্তোলন, জমা দেয়া থেকে শুরু করে সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানের দিন পর্যন্ত ব্যাপক শোডাউন করেছেন প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা। আন্দোলনের মাঠে শক্তি প্রদর্শন করতে না পারলেও নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। কিন্তু আন্দোলনের সময় হলে, কর্মসূচি ঘোষণা হলে এদের খুঁজে পাওয়া যায়। না।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দলের একটি অংশ নির্বাচন নিয়ে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা মনে করেন গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় একেকটি আসনে ৩ থেকে ১০জন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সে সময়ই দলের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতায় নেতায় দূরত্ব, বিভেদ কোন্দল ও কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এখন কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তা বিস্তৃত হয়েছে।

দলে এখন বিভেদ নয় ঐক্যের সময় জানিয়ে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, মনোনয়নের চলতি সিস্টেমে দলে যে বিভাজন তৈরি হয় এবং এটার সুদূর প্রসারি প্রতিক্রিয়া নেতৃবৃন্দের না বোঝার কোনো কারণ নেই। শুরুতেই এই দ্ব›দ্ব নির্বাচনে জেতার পথে কাঁটা বিছিয়ে দেয়! গত জাতীয় নির্বাচনে প্রতি আসনে তিনজন বা ততোধিক ব্যাক্তির প্রাথমিক মনোয়ন লাভে দলের মধ্যে তৃনমুল পর্যায়ে নেতায় নেতায় দুরত্ব, বিভেদ, কোন্দল ও কাঁদা ছোড়াছুড়ি এখন কর্মী - সমর্থকদের মধ্যেও তা বিস্তৃত হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। অথচ এখন আমাদের দরকার দলের সকল পর্যায়ে সর্বাত্মক ঐক্য। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে এই অসুস্থতার উপসম কিভাবে হবে- সেটার দাওয়াই - চিকিৎসাপত্র বোধহয় জরুরি হয়ে গেছে। অর্থাৎ মনোনয়ন সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
তোফাজ্জল হোসেন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
বিএনপির প্রতি মানুষ আর আশাবাদি নয়।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
ভোট ডাকাতির নির্বাচনেও যদি বিএনপি ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তাহলে কবে হবে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৩ এএম says : 0
এমনিতেই মরিমরি অবস্থা। তার ওপরে বিভেদ নিয়ে দলটি কতদূর এগাবে বুঝে আসে না।
Total Reply(0)
চাদের আলো ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৪ এএম says : 0
বিএনপি আর রাজনীতির মূল ট্রাকে ফিরতে পারবে বলে মনে হয় না। এজন্য দায়ী এইসব পদলোভি নেতারা।
Total Reply(0)
হিমেল ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৪ এএম says : 0
যে নির্বাচনে নিশ্চিত হার সেই ভোটেও এক হতে না পারলে কপালে খারাপ আছে।
Total Reply(0)
জন্মভুমি ছাতক ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৫ এএম says : 0
ক্ষমতালোভি নেতাদের জন্য আজ দলের এই অবস্থা।
Total Reply(0)
সজল মোল্লা ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৫ এএম says : 0
বাঁচতে হলে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
Total Reply(0)
শামছুল আলম ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:২৮ এএম says : 0
বিএনপির জনপ্রিয়তা এখনো আকাশচুম্বী। ভোট ডাকাতি আর জালিয়াতি বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে সরকার দলের জামানতও থাকবে না।
Total Reply(0)
কামাল ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:২৬ এএম says : 0
বিএনপি যে বেঁচে আছে এটা প্রমাণ পাওয়া যায় দলের কেউ যখন নমিনেশন পায় না তখন
Total Reply(0)
রবিউল ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:২৮ এএম says : 0
এই দলটিকে হেরিকেন জ্বালিয়েও রাস্তায় খুঁজে পাওয়া যায়না বলা হয় তাদের নাকি রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়া হয় না কিন্তু নমিনেশন না পেলে তখন ঠিকই রাস্তায় দাড়ায়।
Total Reply(0)
Md Rejaul Karim ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:২৪ এএম says : 0
চোর চুরি করতে গেলে ও আল্লাহকে স্মরণ করে যদিও বা কাজটি সঠিক নয়।।। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিএনপির জন্য বেশী ভয়ম্কর তার পরও তাদের মধ্যে ঐক্যমতের যথেষ্ট অভাব। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় দেশে যে ভাবে ক্লীনহার্ট অপারেশন করেছিল ঠিক সেই ভাবেই নিজের দলের মধ্যে ক্লীনহার্ট অপারেশন করা একেবারেই ফরজ।।।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন