শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যার নানা দিক-২

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

আত্মহত্যা করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মহাপাপ, মৃত্যুর পর যার পরিণাম হয় জাহান্নাম। এ আত্মহত্যা কত রকমের ও কি কি তা অনির্ধারিত। বিভিন্ন হাদীস হতে যা জানা যায় তা নিম্নরূপ:

১। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যে এক ব্যক্তি আহত হয়েছিল, তীব্র ব্যথায় বিচলিত হয়ে সে ছুরি দ্বারা নিজের হাত কর্তণ করে ফেলে, ফলে এত রক্ত বেয়ে পড়ে যে সে মারা যায়। আল্লাহতাআলা বলেন যে, আমার বান্দা নিজেকে ধ্বংস করতে জলদি করেছে, তাই তার প্রতি আমি জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।’ (বোখারী ও মুসলিম) এ হাদীস হতে জানা যায়, প্রাচীনকালে আত্মহত্যার যে সব পদ্ধতি চালু ছিল তার মধ্যে এটি একটি। লোকটির শরীরের একটিমাত্র অংশ হাত জখম হয়ে যায়, তার যন্ত্রণা তার সহ্য শক্তির বাইরে চলে যায় বলে সে তার হাতটি কেটে ফেলে এবং তাতে তার মৃত্যু হয়। আল্লাহতাআলা লোকটির এ কর্মকে আত্মহত্যা বলেছেন এবং তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম। পূর্ণ দেহ নয়, দেহের অংশ বিশেষ কেটে ফেলে আল্লাহর কুদরতের ওপর হস্তক্ষেপ করে লোক পাপ করে যা আল্লাহর নিকট কঠিন শাস্তিযোগ্য, আর তা হচ্ছে জাহান্নাম।

২। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পর্বত হতে লাফ দিয়ে হত্যা করেছে, তাকে জাহান্নামে পতিত করা হবে এবং সে সর্বদা তাতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে, জাহান্নামে তার হাতে সে বিষ থাকবে এবং তা তার পেটে বিষক্রিয়া ছড়াতে থাকবে এবং সর্বদা সে জাহান্নামে থাকবে।’ (মুসলিম)
হাদীসটি হজরত আবু হোরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। এর ব্যাখ্যা এই যে, মানুষ নিজের প্রাণেরও মালিক নয়, বরং সে অপরের ন্যায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্ট ও অধীনস্ত। তাই যেমনিভাবে সে অপরের প্রাণ ধ্বংস করতে পারে না এবং তার হেফাজত করা জরুরি, তেমনি সে নিজের প্রাণও ধ্বংস করতে পারে না এবং তার হেফাজত করাও জরুরি।

মানুষ যে সব মাধ্যম বা উপকরণ দ্বারা আত্মহত্যা করে, সেগুলো অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর হয়ে থাকে, তথাপি আত্মহত্যার পদক্ষেপ এই ধারণার বশবর্তী হয়ে গ্রহণ করে যে, সাময়িক কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ করার পর মুক্তি পেয়ে যাবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে সাময়িক কষ্ট নয়, বরং তা অত্যন্ত দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর। সেটা আজাব বা শাস্তির অব্যাহত ধারা, যা সারাক্ষণ প্রাণের ওপর সোওয়ার থাকে এবং তা থেকে কখনো রেহাই পাওয়া যায় না। আত্মহত্যাকারী যে উপায়েই আত্মহত্যা করুক না কেন, প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার পর সে উপায় বা মাধ্যমটাই জাহান্নামে তার ওপর অধিষ্ঠিত হয়ে থাকবে এবং যত সময় পর্যন্তই সে জাহান্নামে থাকবে, আজাব হতে নিস্তার নেই।

৩। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের গলা নিজে চিপে প্রাণ হরণ করে, সে জাহান্নামেও নিজের গলা নিজে চিপে ধরবে। আর যে বর্ম দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামেও নিজেকে বর্ম দ্বারা আঘাত করতে থাকবে।’ (বোখারী)

আত্মহত্যাকারীর জাহান্নামী হওয়া নিশ্চিত। সে যে বস্তু বা অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে, তাই হবে তার শাস্তি, সেই বস্তু বা অস্ত্র দ্বারা নিজেই নিজেকে আঘাত করতে থাকবে।
৪। আত্মহত্যার একটি শিক্ষণীয় ঘটনা: হজরত জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) যখন হিজরত করে মদীনায় গমন করেন, তখন তোফাইল ইবনে আমর এবং তাঁর সম্প্রদায়ের অপর এক ব্যক্তি হিজরত করেন। তোফাইলের সঙ্গী মদীনায় অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং যন্ত্রণা-কষ্টে সে অস্থির হয়ে যায়। সে তীরের একটি ফলা দিয়ে নিজের আঙ্গুলগুলোর জোর কেটে ফেলে। এতে তার হস্তদ্বয়ের রক্ত বন্ধ না হওয়ায় সে মারা যায়। (তার কাফন দাফন হয়ে যায়) অতঃপর তোফাইল ইবনে আমর তাকে স্বপ্নে দেখেন যে, লোকটির অবয়ব চেহারা ঠিক আছে, তবে সে নিজের হস্তদ্বয় ঢেকে রেখেছে।

তোফাইল ইবনে আমর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সাথে রাব্বুল আলামীন কেমন আচরণ করেছেন?’ লোকটি বলল, ‘খোদা আমাকে এই জন্য ক্ষমা করে দিয়েছেন যে, আমি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে হিজরত করেছিলাম। ফের তোফাইল জিজ্ঞেস করলেন, তুমি হস্তদ্বয় কেন ঢেকে রেখেছ? সে বলল, খোদাতাআলা বলেছেন, তুমি যে বস্তুকে নিজেই খারাপ করেছো তা আমি ভালো করব না। তোফাইল স্বপ্নের এ ঘটনা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বর্ণনা করেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করেন- হে আল্লাহ তার হস্তদ্বয়কেও ক্ষমা করুন।’ (মুসলিম)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
তাসফিয়া আসিফা ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৮ এএম says : 0
ইসলামের ওপর বিশ্বাসী সব আত্মহত্যাকারীকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করুন। মুসলিম উম্মাহকে আত্মহত্যার মতো বড় অপরাধ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
Total Reply(0)
বিবেক ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৯ এএম says : 0
আত্মহত্যা একটি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি। মাঝেমধ্যেই পত্রিকার পাতায় আত্মহত্যার সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যায়। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হতাশ নারী-পুরুষ বেছে নেয় আত্মহননের দুর্ভাগ্যজনক পথ।
Total Reply(0)
বাতি ঘর ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৯ এএম says : 0
আজকাল আত্মহত্যার ঘটনা প্রায়ই সংঘটিত হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এমন প্রবণতা বেশি। বখাটেদের উৎপাতের কারণে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে, আবার মা-বাবার সামান্য বকুনির কারণেও আত্মহননের মতো ঘটনা ঘটছে। পারিবারিক বিপর্যয়, মানসিক অশান্তি, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গেও জড়িত আছে আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক ঘটনা। এসব আত্মহত্যার পেছনে কাজ করে প্রচণ্ড মনস্তাত্ত্বিক চাপ। ফলে ভারসাম্য হারিয়ে তা সহ্য করতে না পেরেই আত্মহননের মধ্য দিয়ে দুর্বল চিত্তের ব্যক্তিরা মুক্তি খোঁজে।
Total Reply(0)
জাবের পিনটু ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৯ এএম says : 0
ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর ওপর ভরসা ও দৃঢ় আস্থা থাকলে কারও আত্মহত্যার মতো ক্লেশকর পথে পা বাড়াতে হয় না।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৯ এএম says : 0
আত্মহত্যা করা কবিরা গোনাহ। আর কবিরা গোনাহ তাওবার দ্বারা মাফ হয়। কিন্তু আত্মহত্যাকারীর জন্য যদিও তাওবার সুযোগ নেই। তাওবা করতে না পারলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে ঈমানদার হওয়ার কারণে দীর্ঘ শাস্তি ভোগের পর নিজ রহমতে আত্মহত্যাকারীকেও মাফ করে দিতে পারেন।
Total Reply(0)
হৃদয়ের ভালোবাসা ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:৩০ এএম says : 0
আত্মহত্যা করা কবিরা গোনাহ। আর কবিরা গোনাহ তাওবার দ্বারা মাফ হয়। কিন্তু আত্মহত্যাকারীর জন্য যদিও তাওবার সুযোগ নেই। তাওবা করতে না পারলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে ঈমানদার হওয়ার কারণে দীর্ঘ শাস্তি ভোগের পর নিজ রহমতে আত্মহত্যাকারীকেও মাফ করে দিতে পারেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন