মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইলিশ উন্নয়ন প্রকল্প

খরচ হবে ২৪৬ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

ইলিশ মাছ কে না পছন্দ করে! কিন্তু দেশে অন্য যে কোনো মাছের চেয়ে ইলিশের দাম বেশি। মৌসুমের বেশিরভাগ সময়ই ইলিশ মধ্যবৃত্তের নাগালের বাইরে থাকে। সব শ্রেণির মানুষ যাতে ইলিশ খেতে পারেন সে জন্য ইতোমধ্যেই একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রজননের সময় ইলিশ মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা। এতে সফলতা এসেছে।

এখন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণ এবং জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে এর প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) যেকোনো সময় এটি উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে দেশের ২৯টি জেলার ১৩৪টি উপজেলায় চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদফতর।

তবে এরই মধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ভ্রমণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে ১৭৪ কর্মকর্তার ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। যা প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সম্প্রতি বলেন, অহেতুক ভ্রমণের নামে অর্থ অপচয় কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আমার পক্ষে প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) প্রত্যেকটি পৃষ্ঠা উল্টে দেখা সম্ভব হয় না। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা (সচিব) অনেক অভিজ্ঞ। তারা প্রস্তাবের সবকিছু দেখে এবং মূল্যায়ন করেই একনেক উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করে থাকেন। তারপরও যদি অপচয়ের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়নের যেকোনো পর্যায়েই হস্তক্ষেপ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদফতরের উপপরিচালক (অর্থ ও পরিকল্পনা) হাসান আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, এসব ভ্রমণ বিদেশে নয়, দেশের ভেতরেই হবে। এজন্য যতটা সম্ভব ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রকল্পটি ২৯টি জেলার ১৩৪টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। মাঠ পর্যায়ে সার্ভিলেন্স টিম কাজ করবে। বিশেষ করে জাটকা মৌসুম ও মা ইলিশ মৌসুমে সার্ভিলেন্স টিমকে বেশি কাজ করতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় ও আমিষ সরবরাহে ইলিশের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ এবং জিডিপিতে অবদান এক শতাংশ। উপক‚লীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকার প্রধান উৎস হচ্ছে ইলিশ। প্রায় ৫ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। সারাবিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৬০ শতাংশ আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী থেকে। আশির দশকের আগে মোট মৎস্য উৎপাদনের ২০ শতাংশ ছিল ইলিশের অবদান।

প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ইলিশের উৎপাদন আশির দশকের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এর অন্যতম কারণ হলো অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে নদ-নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ ও কালভার্ট ব্রিজ নির্মাণের কারণে এবং উজান হতে পরিবাহিত পলি জমার জন্য পানি প্রবাহ ও নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জলজ পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। ফলে ইলিশ মাছের পরিভ্রমণ পথ, প্রজনন ক্ষেত্র, বিচরণ ও চারণক্ষেত্র দিন দিন পরিবর্তিত ও বিনষ্ট হচ্ছে।
এর বাইরেও নির্বিচারে অবৈধ কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জাল, বেড় জাল, চড় ঘড়া জাল, মশারি জাল, পাইজাল এবং সরঞ্জাম দিয়ে জাটকা ও মা ইলিশ আহরণও ইলিশের উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ।

ইলিশ সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্য অর্জনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নদী, মাছবাজার, মাছঘাট, হাট, আড়ৎ ইত্যাদি জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা অপরিহার্য। প্রস্তাবিত প্রকল্পে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সময়ে এবং জেলেদের অবৈধ মাছ ধরা বন্ধে বিভিন্ন ধরনের কম্বিং অপারেশন, ক্রাশ প্রোগ্রাম এবং অভিযান পরিচালনার সংস্থান রাখা হয়েছে। তাছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে ইলিশের অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং অভয়াশ্রম সংলগ্ন ১৫৪টি ইউনিয়নে মোট ১ হাজার ২৩২টি সচেতনতামূলক সভার আয়োজন রাখা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জাটকা ও মা ইলিশ আহরণকারী ৩০ হাজার জেলে পরিবারের দক্ষতা বাড়ালে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের অধিক ক্ষমতায়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন হবে। এসব বিবেচনা করে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন