বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এ যেন স্বাস্থ্যে বাস্তবের আলাদিনের চেরাগ

বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পাহাড় গড়েছেন : অস্ত্র ও জাল নোটসহ র‌্যাবের কব্জায় গাড়ি চালক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

নাম মো. আবদুুল মালেক ওরফে বাদল। স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেননি। অষ্টম শ্রেণিতেই লেখাপড়ার পাঠ শেষ। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভার পদে। এই চাকরিতে যোগদানের পার তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবদুল মালেক আলাদিনের চেরাগ হিসেবে পরিচিত।

অধিদফতরের ড্রাইভারের চাকরির পাশাপাশি নানা অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। অবৈধ অস্ত্র ও জাল নোটের কারবারের পাশাপাশি চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বাদল ড্রাইভার।

অবৈধ সব কর্মকান্ডের মাধ্যমে উপার্জিত টাকায় রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকায় দক্ষিণ কামার পাড়ায় দুটি ৭ তলা বিলাসবহুল ভবন, ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কামার পাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে তার বিপুল টাকা রয়েছে।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া বামনেরটেক ৪২ নম্বর হাজী কমপ্লেক্স ভবন থেকে অস্ত্র-গুলি ও জাল নোটসহ আবদুল মালেক ওরফে বাদল ওরফে ড্রাইভার মালেককে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। এসময় তার হেফাজত থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের (বাংলাদেশি) জাল নোট, ১টি ল্যাপটপ ও ১টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গত এক যুগ ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ পদে যারা ছিলেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন ড্রাইভার মালেক। নিয়োগ, কেনাকাটা ও বদলি থেকে শুরু করে নানা অনৈতিক কাজে বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করেন তিনি। এ সময় জড়িয়ে পড়েন অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকার কারবারের সাথে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে মালেকের অনৈতিক কর্মকান্ড এবং অবৈধ উপায়ে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, আবদুল মালেক তুরাগ এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিল। অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের কারবার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের কারবারসহ চাঁদাবাজি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মালেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার অভিযানের আগে র‌্যাব তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। ওই অনুসন্ধানে মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের কারবার ও চাঁদাবজির অভিযাগ পাওয়া যায়। তুরাগ এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা আদায় করতেন। অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক পাওয়া যায়। একজন তৃতীয় শ্রেণির সাধারণ কর্মচারী হয়েও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, মালেক ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়ি চালক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুল ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, মালেক দু’টি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ দক্ষিণ কামারপাড়া রমজান মার্কেটের উত্তরপাশে ৬ কাটা জমির উপর ৭ তলা হাজী কমপ্লেক্স দু’টি আবাসিক ভবন রয়েছে। এতে ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বিল্ডিং সংলগ্ন আরো ১২ কাটার প্লট রয়েছে। মেয়ে বেবির নামে দক্ষিণ কামারপাড়া ৭০ রাজাবাড়ি হোল্ডিংয়ে ১৫ কাটার ওপর ইমন ডেইরি ফার্ম নামে একটি গরুর খামার রয়েছে। এতে ৫০টি গাভী রয়েছে। ২৩, ফ্রি স্কুল রোড, হাতিরপুলে সাড়ে ৪ কাটা জমির ওপর ১০ তলা নির্মানাধীন ভবন, নিজের সন্তানসহ প্রায় ১৫ জনকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরের বিভিন্ন পদে চাকরি প্রদান করেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন মালেক। ওই সিন্ডিকেটের অনেকের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার তথ্য রয়েছে। ড্রাইভার মালেক বিদেশে টাকা পাচার করেছেন কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
নুজহাত নিশি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৪ এএম says : 0
ঢাকায় যার এক্টা বাড়ি আছে, আমরা বাড়িওয়ালা নামেই চিনি, সম্মান দেখাইতে যেয়ে গদগদ হয়ে যাই, এর পেছনে কতশত অপকর্ম ঢাকা পরে যায়। শুক্রিয়া আল্লাহর কাছে, ছোট কিছু হোক, কিন্তু হারাম এক্টা পয়সাও যেনো পেটে না যায়। বলতে হবে গরীব, টাকা নাই, বাড়ি গাড়ি নাই, তাতে কি!!!! হালাল খেয়ে শান্তিতে থাকার শান্তি তো আছে আলহামদুলিল্লাহ ফর এভ্রিথিং।
Total Reply(0)
Badal Khan ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৪ এএম says : 0
সামান্য গাড়িচালক যদি এত সম্পদের মালিক হয়। তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকের কত সম্পদ আছে তার একমাত্র আল্লাই জানেন।
Total Reply(0)
Kousar Islam ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৪ এএম says : 0
এত টাকার মালিক উনি হয়ত নন, স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয়ের কোন রাঘববোয়াল হয়ত উনার নামে বিনিয়োগ করেছেন, যেমনটি প্রদীপ বাবু শশুরের নামে জমি ক্রয় করে ঐ জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করার পর বউয়ের নামে দান করে নিয়েছিল।
Total Reply(0)
Mamunur Rashid ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৫ এএম says : 0
একেকটা সরকারি চাকুরি মানে একেকটা আলাদিনের চেরাগ,এই যেনো রুপকথার গল্প।
Total Reply(0)
Mohammad Safiullah ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৫ এএম says : 0
এগুলো দেখলে নিজেকে মনে হয় অন্য গ্রহের বাসিন্দা। পৃথিবীটা একমাত্র ওনাদের বসবাসের জন্য তৈরি করা হয়েছে আমরা ভূলে ডুকে পড়েছি।
Total Reply(0)
Jibon Dev Nath ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৫ এএম says : 0
ড্রাইবারের শত কোটি হলে,,ডিজি সাহেবের কত কোটি হবে ভাই,,হিসাব টা মিলাতে পারছি না,
Total Reply(0)
খন্দকার মোহাম্মাদ জুয়েল ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
ড্রাইভারের এই অবস্থা ! যিনি তার গাড়িতে চড়ে উনার কী অবস্থা !! সৌরজগত এতো বড় না জানি গ্যালাক্সি কত্তো বড় !!
Total Reply(0)
আবু বকর বিন রফিক ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
একজন গাড়ি চালক জদি এমন দুর্নীতি করে তাকে এবার চিন্তা করেন উপরের লেভেলের মানুষ গোলো কি পরিমাণ দুর্নীতিতে জড়িত আছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন