গত এক মাস ধরে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। গত ২০ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী এবং ২১ আগস্ট কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম তোহার মেয়াদ শেষ হয়। ফলে গত ২২ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ দুটি শূন্য হয়ে আছে। অভিভাবকহীন ইবিতে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ সর্বস্তরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। আটকে আছে ইবি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের বেতনভাতা। এ মাসেই উপাচার্য নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারাও সামনের মাস থেকে বেতন পাবেন না। সব মিলিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে ইবি পরিবার।
জানা যায়, বর্তমান প্রশাসনের শেষ কার্যদিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়ার অনুমতি দিয়ে যান উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-উর রশিদ আসকারী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম তোহা। কিন্তু ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৯৪ জন আনসার সদস্য ও মাস্টাররোলে কর্মরত ৮০ জনের বেতন-ভাতার ব্যাপারে কোনো অনুমতি দিয়ে যাননি তারা। ফলে নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত তারা কোনো বেতনভাতা পাবেন না বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এসএম আব্দুল লতিফ।
তিনি বলেন, উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদ শূন্য থাকায় তাদের বেতন আটকে আছে। সরকার ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য পদে কাউকে এখনও নিয়োগ দেয়নি। এমনকি বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুর রহমানকেও অফিসিয়ালি কোনো দায়িত্ব দেয়নি। তাই তিনি আর্থিক ক্ষেত্রে কোনো অনুমোদন দিতে পারবেন না। এ মাসেই উপাচার্য বা কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা-কর্মচারীরাও সামনের মাস থেকে বেতন পাবেন না।
এদিকে বর্তমানে ক্যাম্পাসে নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। সরকারের দেয়া ৫৩৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কিছু কাজ শুরু হলেও ঠিকাদাররা নিয়মিত বিল পাচ্ছেন না। ফলে শ্রমিকরাও কাজ স্থগিত করে দিয়েছেন। অন্যদিকে নতুন কিছু ভবনের টেন্ডার সম্পন্ন হলেও উপাচার্যের সিদ্ধান্ত ও অনুমতি ছাড়া কার্যাদেশ প্রদান করা যাচ্ছে না বলে প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আলীমুজ্জামান টুটুল বলেন, সকল উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে গেছে। নতুন কাজে হাত দিতে পারছি না। বন্ধের মধ্যে কিছু আবাসিক হলের সংস্কার কাজের টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তের অভাবে সব বন্ধ হয়ে আছে।
করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনলাইন ক্লাসে পাঠদানের ফলে একাডেমিক কার্যক্রমে কিছুটা হলেও গতিশীলতা ফিরে এসেছিল। কিন্তু উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হতেই অধিকাংশ বিভাগের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি, অনলাইন ক্লাসসহ একাডেমিক কার্যক্রম এবং সর্বস্তরে গতিশীলতা আনতে অতিদ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হোক।
এদিকে উপাচার্য না থাকায় রেজিস্ট্রার অফিসে প্রায় সাড়ে চারশ ফাইল আটকা পড়েছে। আটকে আছে কয়েকটি বিভাগের নতুন সভাপতি নিয়োগ ও প্রমোশন প্রক্রিয়াও। এছাড়া ছুটি সংক্রান্ত ব্যাপারেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষকদের। ফলে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা জামাল বলেন, উপাচার্য হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। সেই প্রাণ না থাকায় কোনো গতিশীলতা পাচ্ছি না আমরা। সমস্ত নীতি-নির্ধারণী বিষয়গুলো তিনিই হাতে নেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই অতিদ্রুত যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মণ্ডল বলেন, উপাচার্য না থাকায় একাডেমিক-প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন কালচারাল অ্যাক্টিভিটিস ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাভাবিকভাবে গতিশীল রাখতে অবশ্যই পদ দুটিতে অতিদ্রুত নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন