বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অতিবৃষ্টি-বন্যার শঙ্কা

দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-মধ্য উপকূলে নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে , উত্তর-পূর্ব ভারতে উজানের অতিবর্ষণে ফের আসছে ঢল

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:৩০ এএম | আপডেট : ১:০৪ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সক্রিয় মৌসুমী বায়ু ও লঘুচাপের প্রভাবে আশ্বিনেই ঝরছে অতিবৃষ্টি। উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রধান নদ-নদীগুলোর উজানের অববাহিকায় হচ্ছে অতিবর্ষণ। নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে সেসব অঞ্চলে অনেকগুলো বাঁধ-ব্যারেজ খুলে দিয়েছে ভারত। ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে আবারও নামছে ঢল। এরফলে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোথাও পঞ্চম কোথাও চতুর্থ বারের মতো বন্যার মুখে বিভিন্ন এলাকা। তাছাড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উপকূলীয় এলাকায় লঘুচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক উঁচু সামুদ্র্রিক জোয়ারের আশঙ্কা রয়েছে।
উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গতকাল সোমবার পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে। বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে বৃষ্টিবাহী মৌসুমী বায়ু জোরালো অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলভাগ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রচুর জলীয়বাষ্প ও ঘনঘোর মেঘমালা রয়েছে।
মৌসুমী বায়ু ও লঘুচাপ এই দুইয়ের সক্রিয় প্রভাব পড়েছে আবহাওয়ায়। এরফলে ভারতের বিহার, আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, সিকিম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন হিমালয় পাদদেশ এবং বাংলাদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং মেঘনা এই তিন অববাহিকায় নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে করে ভারতের উজানের ঢলে ফের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ সপ্তাহের শেষের দিকে কিংবা আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানি বাড়তে পারে।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গতকাল জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-মধ্য উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে এ সময়ে উক্ত অঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
গতকাল বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বৃষ্টিবাহী মৌসুমী বায়ু আবারও সক্রিয় হয়েছে। উজানের অববাহিকায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরফলে চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহের ২২ থেকে ২৬ তারিখে বাংলাদেশে এবং ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশে উজানের অববাহিকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
এরফলে উত্তরাঞ্চলের ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং মধ্যাঞ্চলে পদ্মা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সময় ধরলা, তিস্তা ও আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীসমূহের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, এ মাসের চতুর্থ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ কারণে এসব অঞ্চলের নদ-নদীসমূহের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই সাথে উপকূলীয় অঞ্চলে অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ার সৃষ্টি হতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
এ মাসে গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদী বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। তাছাড়া ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা নেই।
অব্যাহতভাবে এলোমেলো ও অস্বাভাবিক আচরণ করছে আবহাওয়া। এ বছর বর্ষা ঋতু শুরুর আগে থেকেই বৃষ্টিপাতে অসঙ্গতি হচ্ছে। বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটে এবার বেশ আগেভাগেই। নাসা’র পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে জলীয়বাষ্প, মেঘমালা ও মৌসুমী বায়ু অস্বাভাবিক মাত্রায় অত্যন্ত শক্তিশালী এবং শক্তি বজায় রেখেছে। এরফলে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল ব্যাপক আকারে ঘন ঘন বন্যা কবলিত হচ্ছে।
আবহাওয়ার চরম ভাবাপন্নতা ও অস্বাভাবিক আচরণের ফলে এবার ভরা বর্ষায় জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে বৃষ্টিবাহী কোনো মৌসুমী লঘুচাপ-নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়নি। অথচ আগস্টে পাঁচটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারতের অন্ধ্র উপক‚ল হয়ে কেটে গেছে। গত রোববার বঙ্গোপসাগরে এ মাসের দ্বিতীয় লঘুচাপটি সৃষ্টি হলো।
জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ চুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. রিয়াজ আখতার মল্লিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতে তারতম্য বা অসঙ্গতি হচ্ছে। হঠাৎ করে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে। অথচ অন্যদিকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। তাপমাত্রা ও বাতাসের আর্দ্রতায় পরিবর্তন হচ্ছে। ভরা বর্ষা মৌসুমের তুলনায় বছরের অন্যান্য সময়েও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সামুদ্রিক জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লঘুচাপ-নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি ও মানুষের জীবনধারণের উপর।
আবহাওয়াবিদ মো. আরিফ হোসেন জানান, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে এবং গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সমুদ্রে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী তিন দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে এবং তা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বজায় থাকতে পারে।
পাউবোর নদ-নদীর পানির সমতল পর্যবেক্ষণের ১০১টি স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৩৭টিতে পানি বৃদ্ধি পায়, ৬০টি পয়েন্টে হ্রাস পায় এবং ৪টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। সিংড়ায় গুড় নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন