শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শীতলক্ষ্যা-বালু যেনো অপরাধের আখড়া

নৌভ্রমণের নামে অসামাজিক কার্যকলাপ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা আর বালু নদ এখন অপরাধীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে লাল-নীল সোডিয়ামের ঝলমলে আলোতে চলে ভ্রমণের নামে অসামাজিক কার্যকলাপ। ভেতরেই চলে উত্থাল নৃত্য। চলে মাদক সেবন ও রমরমা জুয়ার আসর। 

অসামাজিক কার্যকলাপ আর নেশার কারণে ট্রলারের ভেতরেই নানা অঘটন ঘটে থাকে। প্রায়শ শীতলক্ষ্যা আর বালু নদে পাওয়া যায় অজ্ঞাত লাশ। ভ্রমণকে ঘিরে নৌ-পথে গড়ে উঠেছে মাদক কারবার। বর্ষায় নৌপুলিশের তদারকি না থাকায় এসব অপকর্ম দেদার চলছে বলে নদের আশপাশের লোকজনের অভিযোগ। তবে থানা পুলিশ বলছে, পুলিশের একটি দল নৌটহল দেয় নিয়মিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্ষাকাল ঘনিয়ে আসলেই রাজধানী ঢাকার অতি নিকটের বালু ও শীতলক্ষ্যা নদ ভ্রমণকারীদের জন্য পছন্দের হয়ে ওঠে। আর একে ঘিরেই ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের বাণিজ্য বেড়ে যায়। বালু নদের ডেমরা, ধীৎপুর, বেরাইদ, ভোলানাথপুর ও ইছাপুরা ঘাটে দেয়া হয় ট্রলার ভাড়া। প্রতিটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ৫-৭ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়। সাধারণত দুপুরের পর কিংবা বিকালে এসব ট্রলার ভাড়া নেন ভ্রমণকারীরা। একেকটা ট্রলার লাল-নীল সোডিয়ামের বাতি দিয়ে আলোকসজ্জা করা হয়। যখন সন্ধ্যা নামে, তখন ঝলমলে আলো ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। চলে উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্স। আর এসবের মধ্যেই ট্রলারের ভেতরে চলে উত্থাল নৃত্য। চলে মাদকসেবন ও জুয়া খেলা। থেমে থাকে না অসামাজিক কার্যকলাপ। আর এসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় ঘটে নানা অঘটন। খুনের ঘটনাও ঘটছে বলে অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়।
জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট রূপগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির কয়েকজন কিশোরীকে পিকনিকের নাচের জন্য ১১ হাজার টাকায় ভাড়া নেন সেলিম মিয়া নামে এক যুবক। রাত হয়ে গেলেও তরুণীদের পৌঁছে না দিয়ে রাত ১১টার দিকে তাদের ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। পরে তরুণীরা ৯৯৯ এ কল দিলে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ও নৌ পুলিশ ইছাপুরা ব্রিজের কাছ থেকে ওই ৬ তরুণীকে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এসব ট্রলারে ভ্রমণ করতে আসাদের অনেকে কিশোর ও বখাটে। প্রতিটি ট্রলারেই সুন্দরী নারী নিয়ে আসা হয় ফ‚র্তি করার জন্য। নিয়ে আসা হয় বিদেশি মদ, বিয়ার, গাঁজা ও ইয়াবা। ভ্রমণকারীদের কাছে চড়া দামে মাদক বিক্রি করতে নদী পথে মাদক কারবারিরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানায় সূত্রটি।
প্রত্যক্ষদর্শী এমন কয়েকজন বলেন, দিনের বেলায় চলে এদের খাওয়া-দাওয়া পর্ব। যখন পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যায়, তখন তাদের রঙিন জগত শুরু হয়। ট্রলারের চারপাশে লাল-নীল সোডিয়ামের আলোকসজ্জা যে কারো চোখ ঝাপসা হয়ে যাবে। সাউন্ডবক্সের উচ্চ শব্দে নদী পাড়ের মানুষের কান ঝালাপালা হয়ে যায়। আর এর ভেতরেই চলে যতো অসামাজিক কার্যকলাপ।
ভ্রমণে গিয়েছেন এমন কয়েকজন কিশোর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সন্ধ্যার পর প্রথম পর্ব চলে মদ কিংবা ইয়াবা সেবন। এসময় পালাক্রমে চলে সুন্দরী নারীদের অর্ধনগ্ন নৃত্য। এদের ভাড়া আনা হয়। এর ফাঁকেই চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। তারা বলেন, অসামাজিক কাজকর্ম করা নিয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ট্রলার চালক বলেন, ‘ভাই দুনিয়াটা কোথায় ঠেকছে না দেখলে বিশ্বাসই অইবোনা। কচি-কচি পোলাপান মাইয়া নিয়া কিযে করে টাস্কি খাওয়ন লাগে। মদ খায়, জুয়া খেলে’। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা ভাড়া পাই তাই আহি’।
কথা হয় নয়ামাটি এলাকার আবুল মিয়া সঙ্গে। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, দুনিয়াটা আজব হয়ে গেছে। সন্ধ্যা নামলে নদীতে সাজানো-গোছানো ট্রলারের ভেতর কতো অপকর্ম যে হয়। পুলিশের কোন খবরও দেহি না। কেওঢালা এলাকার সুজন মিয়া বলেন, বালু নদী এখন কিশোরদের দখলে। ওদের সাউন্ডবক্সের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। মন চায় বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাই। পাড়াগাঁও এলাকার আলী আনসার বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীতে সন্ধ্যা হলেই দেখা যায় বাতি দিয়ে সাজানো ঝলমলে ট্রলার। আলোর কারণে ভেতরে কি হচ্ছে কিছু বোঝার উপায় নেই।
এ ব্যাপারে ইছাপুরা নৌ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মো চাঁন মিয়া বলেন, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারগুলোতে ডিজে পার্টি ও আসামাজিক কার্যকলাপ চলে বলে শুনেছি। গত কয়েকদিন আগে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার থেকে ৬ তরুণীকে বখাটেদের হাত থেকে উদ্ধার করেছি। ইছাপুরা নৌপুলিশ ফাড়িতে নিজস্ব নৌপরিবহন না থাকায় নদীতে টহল দিতে পারছি না। এ বিষয়টি নৌ পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন