বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

এবার পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান হওয়ার ‘অপরাধে’ হোটেল থেকে বিতাড়িত হলেন ১০ শিক্ষক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:২২ পিএম

ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আনার পর থেকেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিম নির্যাতন ও পিটিয়ে হত্যা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেলেও ব্যতিক্রম ছিল সম্প্রীতির রাজ্য হিসাবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গ। তবে, এবার সেখানেও দেখা গেল মুসলিম-বিদ্বেষের চিত্র। মুসলমান হওয়ায় সেখানকার দুটি গেস্ট হাউস থেকে ১০ জন শিক্ষককে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অগ্রিম অর্থ দিয়ে ঘর বুকিং করার পরেও ‘পাড়ার লোকেরা মুসলমানদের থাকতে দিতে চায় না’, এই অজুহাতে গেস্ট হাউসের কর্মীরা তাদের চলে যেতে বলেন। এ ঘটনায় পুলিশ গেস্ট হাউস দু’টির তিনজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ১০জন মাদ্রাসা শিক্ষক মালদা থেকে সোমবার খুব ভোরে পৌঁছেছিলেন কলকাতা সংলগ্ন বিধাননগর বা সল্ট লেকে। তাদের কেউ প্রধান শিক্ষক, কেউ সহকারী শিক্ষক। রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরে সরকারি কাজেই এসেছিলেন তারা। ক্লান্ত শিক্ষকরা অগ্রিম টাকা দিয়ে বুক করে রাখা গেস্ট হাউসের ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে চাইছিলেন দ্রুত। তখনই যে পাড়ার লোক তাদের দাড়ি-টুপি-পাজামা-পাঞ্জাবী দেখে সন্দেহ করেছেন, সেটা অনেক পরে বুঝতে পারেন তারা।

ওই দলে থাকা একজন প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সবাই রাত জেগে এসেছি। তাই হোটেলে ফিলে বিশ্রাম নিতে চাইছিলাম। এমন সময়ে গেস্ট হাউসের এক বেয়ারা এসে বলে যে আপনাদের আরও ভাল ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে। আমার সঙ্গে চলুন। আমরা সেই কথা শুনে তার সঙ্গে যাই। দ্বিতীয় ওই গেস্ট হাউসে আমাদের বসিয়েই রাখে বেশ কয়েক ঘণ্টা। যখন তাদের বলি যে, কী ব্যাপার। এখানে নিয়ে এসে বসিয়ে রেখেছেন, ঘর দিচ্ছেন না? ম্যানেজার তখন ফিসফিস করে বলে, আপনাদের এখানে থাকতে দেয়া যাবে না মাস্টারমশাই। আপনারা চলে যান।’

ওই শিক্ষকরা সকলেই একটি অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্তি মঞ্চ নামের ওই সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলামের মাধ্যমেই ওই শিক্ষকরা ঘর বুকিং করেছিলেন। শিক্ষকদের হেনস্থার খবর পেয়ে যখন তিনি যোগাযোগ করেন গেস্ট হাউসে, তাকে জানানো হয় যে, এলাকার মানুষদের আপত্তিতেই থাকতে দেয়া হয়নি তাদেরকে।

কলকাতায় সাধারণভাবে হোটেল গেস্ট হাউসে ধর্মীয় পরিচিতির কারণে থাকতে দেয়া হচ্ছে না, এমন ঘটনা সচরাচর শোনা যায় না। যদিও বেশ কয়েকজন বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কলকাতার হোটেলে থাকতে গিয়ে তারা বাধা পেয়েছেন শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে। কিন্তু বিধাননগর বা সল্ট লেকে মূলত শিক্ষিত-সম্পন্ন মানুষ বসবাস করেন। সেরকম একটি এলাকার মানুষ দাড়ি টুপি পড়া মুসলমানরা এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে দেখে আপত্তি তুললেন? তাদের থাকতে না দিতে গেস্ট হাউসের মালিককে চাপ দিলেন।

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ও লেখিকা মীরাতুন নাহার অবশ্য মনে করেন, সম্পন্ন মানুষদের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব বেশি দেখা যায়।’ তিনি বলেন, ‘আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, সম্পন্ন, তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক মন বেশি দেখা যায়। সাধারণ মানুষকে কখনও-সখনও সাম্প্রদায়িকতার নামে উস্কানি দেয়া যায়, কিন্তু তাদের মনে সাম্প্রদায়িকতা থাকে না। একজন হিন্দু পটল-ওয়ালা কিন্তু মুসলমান কুমড়ো-ওয়ালার পাশে বসেই বাজারে সবজি বিক্রি করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশের ক্ষমতায় আছে যে দলটি, তারা তো একটা বিষয়ের ওপরেই খুব মনোযোগ দিয়েছে - হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে হবে। এদিকে রুজি নেই, চিকিৎসা নেই, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে - সেসব দিক থেকে মানুষের মন সরিয়ে একটা দিকেই মনোযোগ দেয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। তারই ফলশ্রুতি এই ঘটনা।’

এ ঘটনায় মইদুল ইসলাম একটি অভিযোগ-পত্র পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর দপ্তরে। ওই চিঠি পেয়েই দুটি গেস্ট হাউসের মোট পাঁচ জন কর্মীকে আটক করে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তার মধ্যে তিনজনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দুই দিনের পুলিশ হেফাজতের আদেশ দিয়েছে কোর্ট। পুলিশ সূত্রগুলি বলছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া, বিশ্বাসভঙ্গ এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির চারটি ধারায় মামলা করা হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে। সূত্র: বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Al Quran. ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৩২ পিএম says : 0
Our Al Quran said never make Muslim from other religions.
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:০১ পিএম says : 0
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ও লেখিকা মীরাতুন নাহার এখানে সঠিক চিত্রটা তুলে ধরেছেন। আমিও ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি, ভারতের মোদী সরকার হিন্দুদের রাজত্ব কায়েম করার জন্যে নানা রকম আইন প্রবর্তন করে চলছে তারই ধারাবাহিকতা হচ্ছে এধরনের ঘটনা। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে আরো মনে করি যে, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের জন্যে স্বর্গসমতুল্য রাস্ট্র। ইতিহাস বলে সেই বৃটিশ আমল থেকেই ভারতে এধরনের অবিচার হিন্দু সমাজ থেকে মুসলমানরা পেয় আসছে। সেসময়ে বৃটিশরা হিন্দুদেরকে প্রশাসনিক ভাবে সকল বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান করাতে দেখা গেছে সেইসময়ে এলাকা শাসন করার জন্যে রাজা মহারাজারা ৯০% ভাগই নিয়োগ পেতেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। ফলে তারা মুসলমান প্রজাদের উপর অত্যাচার অবিচার চালিয়ে যেতেন। এখনও সেই অত্যাচার অবিচারের প্রচলনটা রয়েগেছে।
Total Reply(0)
ash ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
BANGLADESHI RA ARO BESHI KORE VAROT JAO , ARO BESHI KORE SHOPPING KORO VAROTE, ARO BESHI KORE GURTE JAO VAROTE, ARO BESHI KORE VAROTIO PRODUCKT KENO, ARO BESHI KORE BANGLADESHER TOP LEVEL GULOTE VAROTIO DER BOSHAO , VAROTE KOYTA TOP LEVEL E MUSLIM DER BOSHANO HOYESE ????
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন