শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে জাতিসংঘের ভ‚মিকা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সাধারণ পরিষদের চলমান বার্ষিক অধিবেষণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভার্চুয়াল ফর্মেটে। নিউইয়র্কের জাতিসংঘ কার্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত না হয়ে রেকর্ডকৃত বক্তব্য নিয়ে অনলাইনে জাতিসংঘ অধিবেশনে হাজির হয়েছেন বিশ্বনেতারা। মধ্যপ্রাচ্য, ভারত-পাকিস্তান চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক বিরোধ ও হানাহানির কারণে একদিকে বিশ্ব এখন সংঘাতময় হয়ে উঠার আশঙ্কায় পতিত হয়েছে অন্যদিকে করোনাভাইরাস এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শান্তি ও সমঝোতার লক্ষ্যে বিশ্বনেতাদের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা ও প্রত্যাশা আরো বেড়ে গেছে। অথচ বিশ্বের এই দুর্যোগ মুহূর্তেও বিশ্বনেতাদের কণ্ঠে বৈরিতা ও অনাস্থার সুর শোনা যাচ্ছে। বিশেষত ইউনিপোলার বিশ্বের এক নম্বর সামরিক-অর্থনৈতিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড আভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিরোধ-বৈরীতার ক্ষেত্রগুলোতে সংঘাত ও বিরোধ-উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে তুলছে। জাতিসংঘ অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর জন্য শুরু থেকেই ট্রাম্প চীনকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তার এসব বক্তব্যের বাস্তবসম্মত বা বিজ্ঞানসিদ্ধ কোনো ভিত্তি না থাকায় আর কোনো দেশ বা সংস্থা এ বিষয়টিকে তেমন পাত্তা না দিলেও বৈশ্বিক করোনা মহামারী শুরুর ১০ মাসের মাথায় এসে জাতিসংঘের মত প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে করোনা ভ্যাকসিন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদের উপর জোর না দিয়ে আবারো চীনের উপর দোষ চাপিয়ে একটি নতুন উত্তেজনা ছড়ানোর প্রয়াস চালিয়েছেন।

জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ভার্চুয়াল অধিবেশনে এই বিশ্ব সংস্থাটির ভবিষ্যত নিয়ে এক প্রকার সংশয় ও প্রত্যাশার কথা প্রকাশিত হয়েছে। এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য থেকেই এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ‘আমরা ভবিষ্যত চাই, আমাদের জাতিসংঘের প্রয়োজন: বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রæতি পুনর্নিশ্চিত করতে হবে; এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত অধিবেশনে হোস্ট কান্ট্রি তথা বিশ্বের এক নম্বর সামরিক-অর্থনৈতিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তিকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। এটা অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত। বিশ্বের মানুষ পরাশক্তিসমুহের মধ্যে দ্ব›দ্ব-সংঘাত ও বৈরীতার বদলে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মিলিত ও সহযোগিতামূলক অবস্থান দেখতে চায়। চীনের প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আক্রমনাত্মক বক্তব্যের পাল্টা জবাব না দিয়ে নতুন কোনো শীতল যুদ্ধে না জড়ানোর কথা বলেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। তিনি সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধ কমিয়ে আনার বিষয়ৈ নিজের প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট করোনা ভ্যাকসিন তৈরী, প্রাপ্যতা ও সরবরাহ নিশ্চিত করার কার্যকর উপায় নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব করেছেন। বিশ্বনেতাদের বক্তব্যের সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য ও অবস্থানের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার রাজনৈতিক লক্ষ্য সামনে রেখে তিনি চীন, ইরান, মধ্যপ্রাচ্যসহ সর্বত্র উত্তেজনা ও বিরোধ উস্কে দেয়ার পন্থা গ্রহণ করেছেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম বার্ষিক অধিবেশনের ভার্চুয়াল বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সামনে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘকে শতবর্ষ পেরিয়ে আগামীর লক্ষ্য অর্জনে ‘বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবসম্মত’ রোডম্যাপ তৈরীর আহŸান জানিয়েছেন। জাতিসংঘকে দুর্বল করে এমন যে কোনো ভ‚-রাজনৈতিক উদ্যোগের অনুমোদন থেকে বিরত থাকার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একটি বৈশ্বিক দুর্যোগকালীন সময়ে শান্তি ও সহাবস্থানের ক্ষেত্রে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতিশ্রæতি যেন কোনো নেতার ব্যক্তিগত বা দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে যায়, সেদিকে সকলের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সাম্প্রতিক বিশ্বপরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, আরব-ইসরাইল ও মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রয়াসকে পাশ কাটিয়ে ইসরাইলের সাথে কয়েকটি আরব দেশের সমঝোতাচুক্তি অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টায়। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন এবং ইসরাইলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জনসমর্থন রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। যে সময়ে সময়ে সংঘাত এড়িয়ে শান্তি ও সমঝোতার বাতাবরণ তৈরী করা প্রয়োজন সে সময়ে ট্রাম্প নতুন করে চীনের সাথে, ইরানের সাথে এবং ভারত-পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিভেদ-বৈরীতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন। পক্ষগুলোর মধ্যে স্থায়ী সমঝোতা ও শান্তির গাইডলাইন বাস্তবায়নের বদলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলোতে পক্ষপাতদুষ্ট দূরভিসন্ধিমূলক ভ‚মিকা পালনের মধ্য দিয়ে বিশ্বে একটি নতুন সংঘাত ও ঠান্ডা লড়াইয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি কারো জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। জাতিসংঘকে সম্মিলিত শক্তি দিয়ে যে কোনো পরাশক্তির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দূরভিসন্ধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন