শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

গরু ও অস্ত্র পাচারে জড়িত বিএসএফ!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:১৬ পিএম

ভূত রয়েছে সর্ষেতেই। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু পাচারের অভিযোগে শত শত বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ। এবার বেরিয়ে এল চাঞ্জল্যকর তথ্য। মূলত গরু ও অস্ত্র পাচারের সঙ্গে জড়িত বিএসএফের অনেক সদস্য। আর সে দেশের শুল্ক বা কাস্টমস বিভাগের বহু অফিসার। সম্প্রতি এমনই তথ্য মিলেছে সিবিআইয়ের তদন্তে।

গরু পাচার নিয়ে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাচারকারী, এই অভিযোগে বহু বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে মেরেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফ। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেল ভূত রয়েছে সর্ষেতেই। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগ গরু পাচারে সাহায্য করে।

কিছুদিন আগেই বিএসএফ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। বাংলাদেশ অবশ্য সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের উপর দোষ চাপিয়েছিল। সম্প্রতি সিবিআইয়ের এক তদন্তে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এলো। বলা হচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ এবং শুল্ক বা কাস্টমস বিভাগের বহু অফিসার সরাসরি গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত। বুধবার বিএসএফের এক অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। বস্তুত, এর আগেও বিএসএফের অফিসারদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে এবং তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিবিআই জানিয়েছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতায় কলমে দেখাতে হয়, মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে এবং কত সংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করেও। খেলা শুরু হয় তার পরে। মালদা, মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতায় কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়। খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরুকে নিয়ে এরপর বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে সেই গরুর বাছুর হিসেবে নিলাম হয়। অর্থাৎ, খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়। যারা সেই গরু কিনছে, তারা পাচারকারী। নিলাম এমন ভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীর হাতেই পৌঁছায়। প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত অফিসারদের দেওয়া হয় গরু পিছু দুই হাজার টাকা। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পারে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।

দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়ায় মালদা-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তে পাচার চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই সূত্র। বস্তুত দিনকয়েক আগে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সিবিআই অফিসাররা রেড চালিয়েছে। ভিন্ন রাজ্যেও কয়েকটি জায়গায় রেড করা হয়েছে। এফাইআর করা হয়েছে বিএসএফ এর এক অফিসার এবং বেশ কিছু গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএসএফ অফিসারের নাম সতীশ কুমার। তিনি বিএসএফ এর ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন। তার সল্টেলেকের বাড়ি সিল করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ভিন্ন রাজ্যে তার আরও বাড়ি আছে।

সূত্র জানাচ্ছে, মালদায় পোস্টেড হলেও মালদা মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের দীর্ঘ সীমান্তে কাজ করেছেন সতীশ। এবং সেই সময়েই গরু পাচারের ঘটনার সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। তার ছেলেও একই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সতীশের সঙ্গে বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ মাস সীমান্তে কাজ করেছিলেন সতীশ। সে সময় প্রায় ২০ হাজার গরু পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।

এর আগেও বিএসএফ এর এক অফিসারকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন তিনি জামিনে মুক্ত। তার কাছ থেকেই সতীশের নাম পাওয়া যায় বলে জানা গিয়েছে। বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগের এমন আরও অফিসার সিবিআইয়ের নজরে আছে বলে শোনা যাচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি এনআইএ এবং সিবিআইয়ের সূত্রের থেকে জানা গিয়েছে, গরু পাচারের সঙ্গে আরও ভয়াবহ লেনদেনের ঘটনাও ঘটে। অভিযোগ, গরুপাচারকারীরা অস্ত্রের পাচারের সঙ্গেও যুক্ত। পাচারের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে পেরেছে এনআইএ। পাচারকারীরা জেএমবি এর সঙ্গে জড়িত বলেও কোনও কোনও মহলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে এখনও কিছু জানাতে রাজি হননি অফিসাররা।

দীর্ঘ দিন ধরেই গরু পাচার নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিতর্ক হয়। কিছু দিন আগেও গরু পাচারকারী, এই অভিযোগে আসামে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে পিটিয়ে মারা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে বিএসএফ যে যুক্ত এতদিন তা ওপেন সিক্রেট সিবিআই সেই সত্যেই শিলমোহর দিয়েছে। ডয়চে ভেলে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
a aman ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:০৫ পিএম says : 0
Indias new name is COW KINGDOM, !!! This country is busy with cow at this time. Cow can solve all the illiterate Jogi or amit shaws problem . Some even drining cow water like coconut water ! what a shame
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন