বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলোর বর্তমান অবস্থা কি?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:০৫ পিএম

বিশ্বের নামকরা সব ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় রয়েছে। প্রতিটি দেশই যখন মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন ভ্যাকসিনের বিকল্প আর কিছুই নেই। ফলে কমবেশি সকলেরই প্রশ্ন, ‘এত যে গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়ে, কবে আসবে ভ্যাকসিন?’ বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, ‘এত দ্রুত গতিতে ইতিহাসে অন্য কোনও ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। তাই আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।’

ভারতে রাশিয়ার টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাশিয়া বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, করোনাভাইরাস রুখতে তাদের দ্বিতীয় টিকাটিও শীঘ্রই আসছে। নাম, ‘এপিভ্যাককরোনা’। রুশ উপ-প্রধানমন্ত্রী তাতিয়ানা গোলিকোভা জানান, নতুন টিকা তৈরি হচ্ছে সে দেশের ভেক্টর ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে হয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জার্মানির বায়োএনটেক ও ফাইজার, মার্কিন মডারনা ও জনসন এন্ড জনসন, চীনের সিনোভেক বায়োটেক, ক্যানসিনো বায়োলজিকস ও সিনোফার্ম এবং রাশিয়ার গামালিয়া রিসার্স ইনস্টিটিউট তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। এই নয়টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন বিক্রয় চুক্তিও সই করেছে। প্রায় ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হতে চলেছে। এই টিকার বিশেষত্ব হল, এর একটি ডোজই কার্যকরী হবে। আগামী বছরে টিকার ১০০ কোটি ডোজ় তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসনের।

চীনের তিনটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিনের ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করছে তাপ বা রাসায়নিক দিয়ে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা সার্স-কোভ-২ ভাইরাস। তাত্ত্বিকভাবে, এটি শরীরের কোনো প্রকার ক্ষতি না করেই কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন এন্ড জনসন, চীনের ক্যানসিনো এবং রাশিয়ার গামালিয়া ব্যবহার করছে অ্যাডিনোভাইরাস। এই ভাইরাসের কারণে কাশি এবং জ্বর হয়। এই ভাইরাসটি ঘোড়সওয়ারের মতো কাজ করে রোগ প্রতিরোধক প্রোটিনকে সংক্রামক ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করায়। মডারনা, ফাইজার ও বায়োএনটেক আরএনএ-ভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরি করছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের জিনগত কোডের নির্দিষ্ট অংশ।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকদের দুটি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। তাদের অর্ধেকের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে এবং বাকী অর্ধেককে ভ্যাকসিন বা ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। এই দুই ভাগের স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে কতজন করোনায় সংক্রমিত হয় সেটাই পরীক্ষায় বিবেচ্য বিষয়। ভ্যাকসিন নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকরা যদি ভ্যাকসিন না নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের চেয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ কম সংক্রমিত হয় তবেই তা অনুমোদন পেতে পারে। সকলেরই প্রত্যাশা, এই ভ্যাকসিন যারা নেবেন তারা করোনাভাইরাস এবং এ জাতীয় কোনো ভাইরাসেই আর আক্রান্ত হবেন না। তবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লক্ষ্য ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গ্রহীতার শরীরে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ যেন না দেখা দেয়।

এদিকে, করোনা ভ্যাকসিন পরীক্ষায় সফল হওয়ার আগেই তা পাওয়ার জন্য শুরু হয়ে গেছে তুমুল প্রতিযোগিতা। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর তা বিশ্বব্যাপী দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বণ্টনের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশসহ ১৫৬টি দেশ।

এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন কেনার জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ ঢেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা ভ্যাকসিন উৎপাদক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানসহ বেশ কিছু ধনী রাষ্ট্র এই দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পৃথিবীর ১৩ শতাংশ মানুষ বসবাস করলেও ইতোমধ্যে তারা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সম্ভাব্য উৎপাদনের অর্ধেক কিনে নিয়েছে।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীদের ধারণা এ বছরের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই আসতে পারে করোনার ভ্যাকসিন। প্রাথমিক পর্যায়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর, কার্যকর ভ্যাকসিনের অনুমোদন পেতে এক মাসের মতো সময় প্রয়োজন হবে। প্রথমে বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। সর্ব সাধারণের ভ্যাকসিন পেতে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর অন্তত ছয় মাস অপেক্ষ করতে হতে পারে। সূত্র: ফিনান্সিয়াল টাইমস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন