বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রক্তের ঋণশোধে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করুন

প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫০ পিএম, ১০ আগস্ট, ২০১৬

সরকারী কর্মচারীদের প্রতি-প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ও ত্রিশ লাখ শহীদের ঋণশোধে সরকারী কর্মচারীদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের রক্তঋণে আবদ্ধ করে গেছেন, ত্রিশ লাখ শহীদ আমাদের রক্তঋণে আবদ্ধ করেছেন। তাদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা জনগণের সেবক, জনগণের সেবা করব। জনগণের রক্ত-ঘামঝরা অর্থ দিয়েই তো আমাদের বেতন-ভাতা, আমাদের সবকিছু। এ কথাটা এক মুহূর্তের জন্যও যেন আমরা ভুলে না যাই।
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়েই জাতির পিতা জীবন দিয়ে গেছেন। এই ওয়াদা তিনি ৭ মার্চের ভাষণের বহু জায়গায় করেছেন এবং জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে সেই ওয়াদাই তিনি পালন করে গেছেন। তিনি সচিবালয়ের কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আজ আপনারা একটি মহৎ কাজ করতে যাচ্ছেন। একজন রক্ত দেবেন, আর একটি মানুষের জীবন বাঁচাবেন। রক্ত দিলে কোনো ক্ষতি না হয়ে শরীরের জন্য উপকার হয়। নিয়মিত রক্ত দিলে শরীরে নতুন রক্তকণিকা জন্মে এবং শরীর ভালো থাকে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেও ৫৬-৫৭ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত রক্ত দিতেন উল্লেখ করে বলেন, তিনি দেশে ফেরার পর থেকে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে প্রতিবছর আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচিতে নিজেও রক্ত দিয়েছেন। এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও আর দিতে পারেন না বলেও উল্লেখ করে বলেন, রক্ত দেয়ার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আমি এখনও রক্ত দিতে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার একটি ভাষণের উদ্ধৃতি দেন ‘সরকারের সমস্ত সরকারী কর্মচারিকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন। যাদের জন্য, যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি তাদের যেন কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। যারা অন্যায় করবে আপনারা তাদের অবশ্যই কাঠোর হস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান, একটি নিরাপরাধ লোকের ওপরও যেন অত্যাচার না হয়, তাতে আল্লাহ’র আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে। আপনারা সেইদিকে খেয়াল রাখবেন। আপনারা যদি অত্যাচার করেন তাহলে আমাকেও সেজন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কারণ আমি আপনাদের জাতির পিতা, প্রধানমন্ত্রী, আমি আপনাদের নেতা। আমারও সেখানে দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটি কাজের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত আমার ঘাড়ে চাপে, আমার সহকর্মীদের ঘাড়ে চাপে। এজন্য আপনাদের কাছে আমার আবেদন রইল, আমার অনুরোধ রইল, আমার আদেশ রইলÑ আপনারা মানুষের সেবা করুন। একটা গরীব যদি হাত তুলে দোয়া করে আল্লাহ সেটা কবুল করে নেন। এজন্য কোনদিন কোন গরীব-দুখীর ওপর অত্যাচার যেন হয়, যদি হয় তাহলে আমাদের স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার এই মহামূল্যবান কথাগুলো আমি মনে করি আমরা যারা দায়িত্বে আছি সকলেরই এই কথাগুলো মনে রাখা উচিত। সরকার গঠনের সময় বলেছি, আমরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করব। আমাদের চেষ্টা মানুষের কল্যাণে কাজ করা, দেশের উন্নয়নে কাজ করবো। তিনি বলেন, আমরা জনগণের সেবক, জনগণের সেবা করবো।
তিনি বলেন, একাত্তরের আগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে বাঙালির কোনো অধিকার ছিলো না। বঙ্গবন্ধু সব সময় বাঙালির অধিকার আদায়ের কথা বলেছেন। সে কারণে তাকে নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে, তাকে ফাঁসি পর্যন্ত দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়ার পরও তিনি সব সময় ন্যায্য অধিকারের কথা বলেছেন।
১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় কর্মক্ষেত্রে পূর্ববাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জাতিগত বৈষম্যের যে চিত্র উপস্থাপিত হয় তা প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তুলে ধরে বলেনÑ সে সময় পাকিস্তান সরকারে সচিবদের পদ ছিল ২২টি। যার সবকটির পদাধিকারি ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানীরা। যুগ্ম সচিব পদে পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ৪২ জন এবং বাঙালিদের ৮ জন। উপসচিব ৬৯টি পদে আসীন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীরা, অন্যদিকে ২৩ জন ছিলেন বাঙালি। সেকশন অফিসার- পশ্চিম পাকিস্তানীরা ছিল ৩২৫ জন আর বাঙালিরা ৫০ জন। প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার-পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ৩৭৬৯ জন এবং বাঙালি ৮১১ জন। সিনিয়র গেজেটেড অফিসার-পশ্চিম পাকিস্তানী ৬৯২ জন আর বাঙালি ৪২ জন।
সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল আরও ভয়াবহ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩টি জেনারেল পদ, ২০টি মেজর জেনারেলের পদ এবং ৩৪টি ব্রিগেডিয়ারের পদের সবকটিতেই পশ্চিম পাকিস্তানীরা আসীন ছিলেন। কর্নেল পদে- পশ্চিম পাকিস্তানী ছিল ৪৯ জন এবং বাঙালি মাত্র একজন। লে. কর্নেল পদে- পশ্চিম পাকিস্তানী ১৯৮ জন আর বাঙালি ২ জন। মেজর পদে- পশ্চিম পাকিস্তানী ৫৯০ জন আর বাঙালি ছিলেন ১০ জন। নৌবাহিনীর ৬শ’ পদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানী ৫৯৩ জন এবং বাঙালি ছিলেন ৭ জন। অন্যদিকে বিমানবাহিনীর ৬৪০টি পদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানীরা ৬শ’ পদে আর বাঙালিরা ৪০টি পদে আসীন ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতা এনেই দেননি। মানুষের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছেন। যুদ্ধের পর এ দেশে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট ছিলো না। ছিল না অবকাঠামোগত কিছুই। জাতির পিতা সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছেন। আমাদেরকে একটি সংবিধান দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য করে গেছেন বাংলাদেশকে।
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, যেসব আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো, পরে তাদের ষড়যন্ত্রেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মা ফজিলাতুন্নেছা, আমার ভাই শেখ কামাল, জামাল, ছোট্ট রাসেলকেও তারা হত্যা করেছিলো।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জিয়াউর রহমানের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথরুদ্ধ করে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা এবং দেশের কারাগারে আটক বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের তীব্র সমালোচনা করেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক অধ্যায়ের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী সরকারী কর্মচারিদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের এই কষ্ট, দুঃখ, ব্যথা-বেদনা ভুলেও দেশের জন্য, মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করার যে চেষ্টা করে যাচ্ছি- এখানে আপনাদের সহযোগিতা সবসময় কামনা করি। দেশের সেবা করা যেকোন সরকারী কর্মচারিদের একান্তভাবে দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খ- চিত্র তুল ধরে বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি, বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
সাব্বির ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৩৭ পিএম says : 0
দেশের সেবা করা যেকোন সরকারী কর্মচারিদের একান্তভাবে দায়িত্ব।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন