শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পঞ্চম দফা বন্যার কবলে ৫ জেলা

যমুনা-তিস্তায় ব্যাপক ভাঙন, বিলীন মসজিদ-মাদরাসাসহ শতাধিক ঘরবাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

তলিয়ে গেছে ৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি ফসলি জমি

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও ভারতের ঢলে যমুনা, তিস্তা ও ধরলাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে কুড়িগ্রাম, নিলফামারি, লালমনিরহাট, গাইবান্দা ও সিরাজগঞ্জ এই ৪ জেলার নি¤œাঞ্চল ৫ম দফা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে আমন ও সবজি ক্ষেত, ভেসে গেছে অনেক মৎস খামার। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যমুনার ভাঙনে গত দুদিনে শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, মাদরাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
কুড়িগ্রামের ধরলা ও তিস্তা সহ সবকটি নদ-নদীর পানি ফের বাড়ছে। গতকাল ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির কারনে এরই মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষের মাঝে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসত বাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এতে স্থানীয়রা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কয়েকদিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাত আর ভারতের ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা ও তিস্তা সহ সবকটি নদ-নদীর পানি ফের বাড়ছে। ফলে নিচু এলাকার বেশ কিছু আমন ও সবজি ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। পানি উঠছে বেশ কিছু ঘরবাড়িতেও। পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীর ভাঙন তীব্ররূপ নিয়েছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৫ম দফা বন্যায় রোপা আমন, চিনা বাদামসহ সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১৩৪ হেক্টর। এছাড়াও উলিপুরের চর বজরা, সদর উপজেলার সারডোব, মোগলবাসা, ফুলবাড়ীর চর মেকলি ও ভ‚রুঙ্গামারী ধাউরারকুঠিসহ ৬৭টি পয়েণ্টে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত দুদিনে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অর্ধশত ঘরবাড়ি নদী গর্ভ বিলীন হয়ে গেছে।

নীলফামারী থেকে মোঃ মোশফিকুর রহমান সৈকত জানান, ভারি বৃষ্টিপাত আর ভারতের ঢলে আকস্মিক বেড়েছে তিস্তার পানি। তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ডিমলা উপজেলার নদী বেষ্টিত পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী. ঝুনাগাছচাপনী, পশ্চিমছাতনাই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ইউনিয়নের আটটি চরগ্রাম বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। এসব গ্রামের পরিবারগুলো সতর্ক অবস্তায় রাখা হয়েছে। নদীর পানি রাতে আরও বৃদ্ধি পেলে তাদের নিরাপদস্থানে চলে যেতে বলা হয়েছে।

লালমনিরহাট থেকে মোঃ আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, তিস্তা, ধরলাসহ সব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, নতুন করে ফের প্লাবিত হয়েছে নি¤œাঞ্চল। আগের বন্যার ধাক্কা সইতে না সইতে ৫ম দফায় বন্যার মুখোমুখি এ জেলার তিস্তা ধরলা পারের মানুষ। এ যেন মরা উপর খারার ঘা। ভাঙ্গনে বিলিন গ্রামের পর গ্রাম বসতবাড়ি, আবাদি জমি । একের পর এক ভাঙ্গনের কবলে দিশেহারা তিস্তা ধরলা পাড়ের মানুষ।

কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ আর ভারতের ঢলে লালমনিরহাটের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। জেলায় পানিবন্দি পরিবারে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। পানিবন্দি এলাকায় আমন ধান ও সবজি ক্ষেত বন্যায় ডুবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। গবাদি পশু পাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকা কৃষকরা।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও ভারতের ঢলে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসত বাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুলসহ বহু স্থাপনা। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ ঘরগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য এনায়েতপুরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ছয়শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা।
চলতি বছরে চার দফা বন্যার পর যমুনা নদীতে পানি কমতে শুরু করে। হঠাৎ করে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে ৫ম দফায় যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এনায়েতপুরে শুরু হয় ব্যাপক নদী ভাঙন। গত দুদিনে শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, মাদরাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে এনায়েতপুরের পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে চৌহালী উপজেলাধীন দেশের সর্ববৃহৎ এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সি ইন্সটিটিউট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বহু তাঁত কারখানাসহ হাটবাজার যমুনার অদূরে রয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যমুনা পারের মানুষ। সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব এসব মানুষ এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে অনশন পালন করেন স্থানীয় দুই বৃদ্ধ। খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছে দ্রæত বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়ে দুই বৃদ্ধের অনশন ভাঙান।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, কাজীপুরের পাটাগ্রাম এবং এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে কৈজুরি পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত। এই দুটি স্থানে ভাঙন রয়েছে। ভাঙন রোধে সাড়ে ১১শ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি শুস্ক মৌসুমে স্থায়ী কাজ শুরু হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন