চলতি সপ্তাহে পাকিস্তানের রাজনৈতিক আবহে নওয়াজ শরীফের আক্রমণাত্মক বক্তব্য, দেশটির অন্যান্য বিরোধী নেতৃবৃন্দের সাথে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সাথে ফলপ্রসূ বৈঠকের খবরের পর এবার চমক হিসবে যোগ হয়েছে আরো একটি ব্রেকিং নিউজ। গেল বুধবার সন্ধ্যার খবর আসে যে, পিএমএল-এন নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের জনাব বাজওয়ার সাথে দু’বার বৈঠক করেছেন যাতে তিনি নওয়াজ শরীফ ও মরিয়ম নওয়াজ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
জেনারেল বাজওয়া এবং আইএসআই ডিজি লে. জেনারেল ফয়েজ হামেদের সাথে পিএমএল-এনসহ বিরোধী নেতাদের বৈঠক এক সপ্তাহেরও বেশি আগে ঘটে। তবে তা এতদিন অপ্রকাশিত ছিল। বুধবার ডিজি আইএসপিআর মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার এ সভার সংবাদ টিভিতে ঘোষণা করেন।
নওয়াজ যেসময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইমরান খানের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তখনও তার দলের সদস্যদের সেনাপ্রধানের সাথে বৈঠকের খবরটি প্রকাশ্য হয়নি। এরপর গণমাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে অবধারিতভাবেই পিএমএল-এন এর অবস্থান কিছুটা ধাক্কা খায়। কীভাবে দলের শীর্ষ নেতারা স্বেচ্ছায় চিফ অফ আর্মি স্টাফ-সিওএসের সাথে বৈঠক করলেন এবং গিলগিট-বালতিস্তানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয়ে একমত হতে পারলেন, যেখানে মাত্র কয়েকদিন পরেই পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরীফ সরকার ও সেনাবাহিনীর বিষয়ে সমালোচনা মুখর হলেন!
অথচ, বুধবার সকালে মরিয়ম নওয়াজ সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, এ জাতীয় সভা জেনারেলের দপ্তরে নয়, সংসদে হওয়া উচিত এবং নওয়াজ শরীফের কোনও প্রতিনিধি সিওএসের সাথে সাক্ষাৎ করেননি। সেদিনই সন্ধ্যায় বিশ্বকে বলা হয় যে, মোহাম্মদ জুবায়ের সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ডিজি আইএসপিআরের বক্তব্য অনুসারে, সেনাপ্রধান জুবায়েরকে বলেছিলেন যে, নওয়াজ শরীফের আইনি বিষয়গুলো আদালত এবং রাজনৈতিক বিষয়গুলো সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।
সিওএএস এবং ডিজি আইএসআইয়ের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ছাড়াই এটি ঘটেছে। তবে কেউ যা অস্বীকার করতে পারে না তা হ’ল, পিএমএল-এনের পক্ষে সমগ্র পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সর্বশেষতম জটিলতাটি থেকে এ সত্য উদ্ভ‚ত হয়েছে যে, বর্তমান পেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পিএমএল নেতার আক্রমণাত্মক অবস্থানটি সরাসরি এবং অন্যথায় সামরিক নেতৃত্বের সাথে মিশ খায় না।
এ পরিস্থিতিতে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রথমত, নওয়াজ শরীফ শিগগিরই যে কোনও সময় পাকিস্তানে ফিরে আসবেন বলে আর আশা করা যাচ্ছে না। তার দলীয় সহকর্মীরা তাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, তিনি বিদেশে অবস্থান করে জনগণকে বার্তা দিয়ে এবং দলের নিজস্ব নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে দলের নেতৃত্ব প্রদান করে আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারেন। এ কারণে তার নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্টও তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দলটির নেতারা বলেছেন যে, নওয়াজের আক্রমণাত্মক ভাষণের অনেকগুলো কারণ রয়েছে, এর মধ্যে একটি হ’ল, তার ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্তে¡ও তার দল কোনও রাজনৈতিক বা নিজস্ব সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।
যাহোক, মোহাম্মদ জুবায়েরের খবর প্রকাশের ভাষা থেকে এটি অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, তার সংস্থা নওয়াজের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চুপ করে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাহলে, এটি কি পিএমএল-এন’র সম্ভাবনার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে? যথাসম্ভব। এটি কি পিএমএল-এন’র নতুন এবং আক্রমণাত্মক অবস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে? নিঃসন্দেহে। বিষয়টি কি রাজনীতির মাঠে ইমরান খান সরকারের অবস্থান পোক্ত করেছে? খুব সম্ভবত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন