বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সীমান্তে জীবনের ঝুঁকি

গরু পাচারে জড়িত বিএসএফ : সিবিআই

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিশ্বের প্রাণঘাতী সীমান্ত হিসেবে আগে পরিচিত ছিল ফিলিস্তিন-ইসরাইল সীমান্ত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত। এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে গেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। ৬টি দেশ চীন, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভুটান সীমান্তে বিএসএফ গুলি ছোড়ার সাহস না পেলেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে বিপজ্জনক করে তুলছে।

স্টালিন সরকার
সীমান্তে ‘জিরো টলারেন্স’ শব্দটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত। পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব। প্রতি বছর দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের ‘সীমান্ত সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৫০তম সীমান্ত সম্মেলনে ‘সীমান্ত হত্যা’ ঠেকাতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করা হয়। বলা হয়েছে ‘আর সীমান্তে হত্যাকান্ড’ নয়। স্বাধীনতার পর প্রায় ৫০টি সীমান্ত সম্মেলনে এমন অঙ্গীকার করা হলেও সীমান্ত হত্যাকান্ড চলছেই।

আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) হিসাব মতে, ২০২০ সালের সাড়ে ৮ মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ বাংলাদেশির। প্রতিটি হত্যাকাÐের পর বিএসএফ থেকে দাবি করা হয় গরু চোরাচালান ঠেকাতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। অথচ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘ডয়সে ভেলের’ খবরে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (সিবিআই) এক রিপোর্টে জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু পাচারে সরাসরি জড়িত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী (বিএসএফ)। যখন বিএসএফ গরু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তখন সীমান্তে গরু চোরাচালান ঠেকানোর অজুহাতে সীমান্তের গ্রামগুলোতে বাংলাদেশের মানুষের জীবন মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত মৃত্যু আতঙ্কের মধ্যে সীমান্তের লাখ লাখ মানুষ জীবনযাপন করছে। ১০ থেকে ১২টি সীমান্ত গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, প্রতিটি সীমান্ত গ্রামের মানুষ আতঙ্কে থাকেন। বিএসএফ তাদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক।

নওগাঁর দুখিনী রাফিয়া : মোছা. রাফিয়া বেগম। বাড়ি নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার দুয়ারপাল সীমান্তের কাঁটাপুকুর গ্রামে। পিতাকে দেখেনি। জন্মের ৬ দিন আগে পিতা কামাল আহমেদকে হত্যা করে ভারতের হরিপুর থানার আড়াইগজি ক্যাম্পে নিয়ে যায় ভারতীয় সীমন্ত রক্ষী (বিএসএফ)। তিন দিন পর লাশ ফেরত দেয়। পিতার গলিত লাশ দাফনের তিন দিন পর পৃথিবীতে আসে রাফিয়া। জিল্লুর রহমানের ছেলে কামাল ছাড়াও সেদিন দুয়ারপাল সীমান্তে বিষ্ণুপুরের রণজিত কুমার, মফিজ উদ্দিনকেও হত্যা করে বিএসএফ। রাফিয়ারা তিন বোন। বড় দু’টি সুমাইয়া ও জাকিয়া।

তাদের মা মোছা. কমেলা খাতুন স্বামীকে হারিয়ে নিজেই ক্ষেতে কাজ করলেও বাচ্চাদের খাবার জোগাড় করতে পারেন না। কামালের ছোট ভাই প্রতিবন্ধী হজরত আলী সংসারের বাড়তি বোঝা। গত ৩০ মার্চ নওগাঁ জেলার কাঁটাপুকুর গ্রামে পৌঁছতেই ঘিরে ধরে একপাল বুভূক্ষু মানুষ। অধিকাংশের গায়ে কাপড় নেই; পরনেও ছেঁড়া ত্যানা। তারা রাফিয়াকে দেখিয়ে জানালো, দুধ দূরের কথা ভাতের মাড় দিয়ে সহায়তা করারও কেউ নেই। বিষ্ণুপুরের রণজিত কুমার ও মফিজ উদ্দিনের পরিবারেও একই অবস্থা। সীমান্ত গ্রামের শুধু রাফিয়া নয়, বিএসএফের গুলিতে কত রাফিয়া যে পিতাকে হারিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। বিএসএফ সীমান্তে পাহারা দেয়ার নামে যেন বাংলাদেশিদের হত্যার জন্য মুখিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের সীমান্তের গরিব মানুষের নামে গরু চুরির অভিযোগ তোলা হয়, অথচ সিবিআইয়ের তদন্তে দেখা গেল ‘বিএসএফই গরু চুরির হোতা’।

সর্বত্রই আতঙ্ক : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪০৯৬ কিলোমিটার (২৫৪৬ মাইল) দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানা। এই সীমান্তে বিএসএফ যেন ওঁৎ পেতে থাকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্যাতন ও হত্যা করতে। ভারতের সঙ্গে মোট ৬টি দেশের সীমান্ত রয়েছে। ৫টি দেশের সীমান্তে শান্তিপূর্ণ, সহমর্মিতা ও সহযোগিতাপূর্ণ থাকলেও বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, বিগত ১০ বছরে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছে। কারো কারো হিসাবে এ সংখ্যা আরো বেশি। ভারত যেন সীমান্ত এলাকাকে একটি দক্ষিণ এশিয়ার হত্যার ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। নানা অজুহাতে বাংলাদেশের সীমান্ত গ্রামগুলোর নিরস্ত্র এবং অসহায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ঠাÐা মাথায় হত্যা করছে। অতঃপর ক্ষেতমজুর, মুটে-কুলি ও নি¤œআয়ের মানুষকে ‘গুরু চোর’ তকমা দিচ্ছে। আর প্রতি বছর দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রধানদের বৈঠকে ‘সীমান্ত হত্যা জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা দিচ্ছে।
এক সময় বিশ্বের প্রাণঘাতী সীমান্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল ফিলিস্তিনিদের গাজা ভ‚খÐের সঙ্গে ইসরাইলের সীমান্ত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর সীমান্ত। বছরের পর বছর ইসরাইলি বাহিনীর হাতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি হত্যার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হতো। আমেরিকা মেক্সিকো সীমান্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় সেখানে প্রাণহানি হতো। এখন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত বলা হচ্ছে।
পেশাগত কারণেই কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ-ভারত সীমারেখা তথা ফেনীর চম্পকনগর সীমান্ত, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, অনন্তপুর, বড়ইবাড়ি, দিনাজপুরের হিলি, লালমনিরহাটের বুড়িমারি, বাংলাবান্ধা, রাজশাহীর চরমামার দিয়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি সীমান্ত গ্রাম ঘুরেছি। সরেজমিন ঘুরে সীমান্ত গ্রামগুলোর মানুষের যাপিত জীবন, কর্মকাÐ, সমাজজীবন, নিরাপত্তা, জীবিকা নির্বাহ জানার চেষ্টা করেছি। অনেকগুলো সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের মানুষ বন্ধুত্বের মতো বসবাস করেন। পাশাপাশি জমিতে চাষাবাদ করেন। এমনকি কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারীর সীমান্ত গ্রাম মায়ারডাঙ্গিতে বাংলাদেশের একটি মসজিদে দুই দেশের মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। দুই দেশের মানুষে মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ভরপুর। কিন্তু প্রতিটি সীমান্তে বিএসএফ হত্যাকাÐ চালাচ্ছে। বিএসএফ মানেই তাদের কাছে মৃত্যুদূত। যখন তখন ছেলে-বুড়ো, ক্ষেতমজুর, শ্রমিক যাকে পান তাকেই ধরে নিয়ে হত্যা করে। বাংলাদেশিদের যেভাবে বিএসএফ হত্যাযজ্ঞ চালায় তা ভারতের চিরশত্রæ পাকিস্তান সীমান্তেও দেখা যায় না। এছাড়া ভারতের সঙ্গে চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার সীমান্তেও এমন হত্যার ঘটনা প্রায় শূন্য।

স¤প্রতি সীমান্তে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না ভারতের। দিন দিন যুদ্ধের দিকেই এগোচ্ছে সীমান্ত সমস্যাগুলো। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেও বিবাদ দীর্ঘদিনের। আর নেপাল তো ভারতের ভ‚খÐ নিয়ে নতুন মানচিত্রই প্রকাশ করেছে। লাদাখে চীনের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা বিদ্যমান। তবে এত সমস্যার ভিড়েও ভারতের হত্যাযজ্ঞ কেবল বাংলাদেশ সীমান্তেই বিদ্যমান।

দুই দেশের মধ্যে বারবার আলোচনা, আশ্বাস এবং জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরও বাংলাদেশ সীমান্তে থামছে না বিএসএফের হত্যাকাÐ। প্রতিবেশী এই দেশটির সীমান্তরক্ষীর হাতে ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ হত্যাকাÐ ঘটে। আর চলতি বছরের শুরুতেই এই হত্যাযজ্ঞ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।

আসকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বিএসএফের হাতে ৪৩ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩৭ জনই গুলিতে প্রাণ হারান। বাকি ৬ জন নির্যাতনে মারা যান। অথচ আগের বছর (২০১৮) এ সংখ্যা ছিল ১৪ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সালে সীমান্তে নিহত হন ৬৬ জন। ২০১০ সালে ৫৫, ২০১১ সালে ২৪, ২০১২ সালে ২৪, ২০১৩ সালে ১৮, ২০১৪ সালে ২৪, ২০১৫ সালে ৩৮, ২০১৬ সালে ২৫, ২০১৭ সালে ১৭ ও ২০১৮ সালে তিনজন। যদিও সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৯ সালের সীমান্ত হত্যার পরিসংখ্যান উল্লেখ করেননি।

হাটে হাঁড়ি ভাঙল সিবিআই : এদিকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত বিএসএফ। স¤প্রতি এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে সিবিআইয়ের তদন্তে। গরু পাচার নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ‘পাচারকারী’, এই অভিযোগে বহু বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে মেরেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সা¤প্রতিক তদন্তে দেখা গেল ‘ভ‚ত রয়েছে সর্ষেতেই’। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগ গরু পাচারে সাহায্য করে।

কিছুদিন আগেই বিএসএফ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। বাংলাদেশ অবশ্য সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের ওপর দোষ চাপিয়েছিল। এর মধ্যেই সিবিআইয়ের এক তদন্তে চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসে। বলা হচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ এবং ভারতের শুল্ক বা কাস্টমস বিভাগের বহু অফিসার সরাসরি গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত। গত বুধবার বিএসএফের এক অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

সিবিআই জানিয়েছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতায় কলমে দেখাতে হয়, মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে এবং কত সংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করে। খেলা শুরু হয় তার পরে। মালদা, মুর্শিদাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতায় কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়। খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরু নিয়ে বাজারে যাওয়া হয়। সেই গরুর বাছুর হিসেবে নিলাম হয়। খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়। যারা সেই গরু কিনছে, তারা পাচারকারী। নিলাম এমনভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীর হাতেই যায়। প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত অফিসারদের দেয়া হয় গরুপ্রতি দুই হাজার টাকা। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেয়া হয় ৫শ’ টাকা। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পারে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২২১৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয়ায় নিয়োজিত প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সৈন্যকে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেটা হলো ভারতীয় গরু যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশে পৌঁছতে না পারে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন ‘বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়’।

দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়ায় মালদা-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তে পাচার চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই সূত্র। বস্তুত দিনকয়েক আগে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সিবিআই অফিসাররা রেড চালিয়েছে। ভিন রাজ্যেও কয়েকটি জায়গায় রেড করা হয়েছে। এফআইআর করা হয়েছে বিএসএফ-এর এক অফিসার এবং বেশ কিছু গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএসএফ অফিসারের নাম সতীশ কুমার। তিনি বিএসএফ-এর ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ড্যান্ট ছিলেন। তার সল্টলেকের বাড়ি সিল করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ভিন রাজ্যে তার আরো বাড়ি আছে।

স‚ত্র জানাচ্ছে, মালদায় পোস্টেড হলেও মালদা মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের দীর্ঘ সীমান্তে কাজ করেছেন সতীশ। এবং সেই সময়েই গরু পাচারের ঘটনার সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। তার ছেলেও একই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সতীশের সঙ্গে বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ মাস সীমান্তে কাজ করেছিলেন সতীশ। সে সময় প্রায় ২০ হাজার গরু পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেছেন।

এর আগেও বিএসএফ-এর এক অফিসারকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তিনি জামিনে মুক্ত। তার কাছ থেকেই সতীশের নাম পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগের এমন আরো অফিসার সিবিআইয়ের নজরে আছে বলে শোনা যাচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। স¤প্রতি এনআইএ এবং সিবিআইয়ের সূত্র থেকে জানা গেছে, গরু পাচারের সঙ্গে আরো ভয়াবহ লেনদেনের ঘটনাও ঘটে। গরু পাচারকারীরা অস্ত্র পাচারের সঙ্গেও যুক্ত। পাচারের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে পেরেছে এনআইএ। পাচারকারীরা জেএমবি’র সঙ্গে জড়িত বলেও কোনো কোনো মহলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে বিশদ এখনও কিছু জানাতে রাজি হননি অফিসাররা।

দীর্ঘ দিন ধরেই গরু পাচার নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিতর্ক হয়। কিছু দিন আগেও গরু পাচারকারী, এই অভিযোগে আসামে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে পিটিয়ে মারা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে বিএসএফ যে যুক্ত এত দিন তা ওপেন সিক্রেট সিবিআই সেই সত্যেই সিলমোহর দিয়েছে।

১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনের ৫০তম আসরে যৌথ দলিল সই হয়। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফের মহাপরিচালক আগের মতোই আশ্বাস দেন সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে। কিন্তু সিবিআইয়ের মতে, গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত ‘বিএসএফ’ বাংলাদেশিদের ‘গরু চোর’ তকমা দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সীমান্তের গ্রামগুলোর মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (16)
Md Jalil Chy ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
কিছুদিন আগে এইকথাটা আমি কমেন্ট করেছিলাম। প্রবাদ আছে কাঙালের কথা বাসি হলেও ফলে।
Total Reply(0)
Shahed Anwar ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
সবাই জানে বাংলাদেশ ছাড়া
Total Reply(0)
A. Kalam ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
আসল গরু চোর, এবং গরু পাচারকারী বি এস এফ
Total Reply(0)
মোঃ জিসান আরজু ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
ঠিক মাদক ব্যাবসা এমন ভাবেই চলে। শুধু নিলামের ব্যাপারটা গোপনে থাকে।
Total Reply(0)
Hasan Mahmud ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫০ এএম says : 0
যে সাদা রংয়ের গরু গুলো এই দেশে পাচার করা হয়, সে গুলো জন্মে ভারতের রাজস্থান,মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশে, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ইত্যাদি রাজ্যে। যা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে কয়েক শত মাইল দূরে। সেখানকার কৃষকদের কাছ থেকে কিনে কারা গরু গুলোকে সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে আসে??? এক কথায় বি,এস,এফ আর তাদের নিয়োগকৃত ভারতীয় চোরাকারবারিরা। আর প্রান হারায় গরু কিনতে সীমান্তে যাওয়া বাংলাদেশীরা, টাকা নিয়ে গরু বুঝিয়ে দিয়ে, যে মাত্র ভারতীয় চোরাকারবারিরা সটকে পড়ে, সাথে সাথে বি,এস,এফ দেখে দেখে বাংলাদেশীদের কে গুলি করে হত্যা করে। এই পর্যন্ত শুনেছেন বি,এস,এফের গুলিতে কোন ভারতীয় চোরাকারবারি নিহত হয়েছে???
Total Reply(0)
Faisal Anam Mugdho ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫০ এএম says : 0
এটা পাগলও বুঝবে যে সেদেশের BSF & সেদেশের জনগণ গরু পাচারের সাথে জড়িত না থাকলে কখনো বাংলাদেশের সীমান্তের ভারতীয় অংশ পর্যন্ত গরু আসত না।
Total Reply(0)
Jakir Al Faruki ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫০ এএম says : 0
প্রতিটি গরু থেকেই বিএসএফ ঘুস খায়। শুদু বিএসএফ নয় ভারতে সিভিল প্রশাসন, পুলিস সবাই ঘুসের ভাগ পায়,আর গুলি করে মারে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো কে
Total Reply(0)
Main Uddin ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা যেই সমস্ত ভারতীয় দালালেরা বলে আমাদের দেশের নাগরিকেরা গরু চুরি করতে গিয়ে সীমান্তে বিএসএফ এর হাতে নিহত হয় সেই সমস্ত ভারতীয় দালালদের কে যেখানে পাবেন সেখানেই ধরে কন্ঠনালী ছিড়ে ফেলুন আমাদের দেশের নাগরিকেরা চুরি করতে যায়না ওইপার থেকে ভারতীয়রা গরু বিক্রি করে বলেই আমাদের দেশের নাগরিকেরা কিনতে যায়
Total Reply(0)
শামিম রেজা ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
১০০০০০% সত্য। কারন আমার বাড়ি বর্ডার থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। এখানে অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা বিএসএফ দের সাথে যোগাযোগ করে গরু ফেনসিডিল সহ অনেক জিনিস বাংলাদেশ নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে শুধু বিএসএফ নয় কিছু বিজিবিও জরিত।
Total Reply(0)
Bablu Bhuiyan ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
এটা 100% সত্যি ওদের সহযোগিতা ছাড়া সীমান্তে গরু পাচার করা অসম্ভব!!
Total Reply(0)
Mahbubur Rahman Rumaat ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
এই সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য ভারতীয় কেন্দ্রীয় তদন্ত কারী সংস্থা কে ধন্যবাদ। আমরা সবাই জানি তালি এক হাতে বাজে না।
Total Reply(0)
B.M. Ruhul Amin ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
বিএসএফ সীমান্তে শুধু গরু পাচারেই জড়িত নয়,বাংলাদেশে ফেনসিডিল সহ মাদক দ্রব্য পাচারেও জড়িত।তাছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সাথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গরুর চামড়া পাচারের সঙ্গেও জড়িত।
Total Reply(0)
Mohammad Sazid ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
গরুসহ ভারতের সব পণ্য বর্জন করার সময় হয়েছে।ভারতের কোনো দরকার নেই আমাদের।বাংলাদেশের চীন আর মুসলিম বিশ্বের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক করা উচিৎ।সামান্য পেয়াজ নিয়েই যে কাহিনী করলো!!!!টাকা থাকলে পেয়াজ দেওয়ার জন্য দেশের অভাব হবে না।
Total Reply(0)
habib ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:১৯ এএম says : 0
India holo Awamleguer rokter bondu...tai eder kono matha beta nai.....
Total Reply(0)
Jack Ali ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৫২ পিএম says : 0
If our country ruled by the Law of Allah not any kafir country dare to point a finger towards us.
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:৫৭ পিএম says : 0
ইনকিলাব পত্রিকার সাংবাদিক স্টালিন সরকারকে তার তথ্যবহুল প্রতিবেদনের জন্যে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। তিনি এখানে পরিষ্কার ভাবে বলেছেন ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতা সম্পন্ন ও বিশ্বাস যোগ্য সংস্থা সিবিআই বাংলাদেশে গরু পাচারের উপর তাদের তদন্তের প্রতিবেদনে স্পষ্ট ভাবে বলেছেন ভারতের বিএসএফ এই পাচারের সাথে জড়িত। এটা প্রচারিত ছিল তবে সেটা প্রকাশ্যে বলা যেত না কিন্তু সিবিআই সেই সত্যকে সিলমোহর দিয়েছে। তারপরও বিএসএফ তাদের এই পাচারকে সত্য হিসাবে মানতে নারাজ তাই তারা গরু পাচারের নামে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলের নিরীহ বাংলাদেশীদেরকে হত্যা করে গুরু চোর বলে চালিয়ে দিচ্ছে। ভারতের মুসলিম বিরোধী সরকার বিএসএফ দ্বারা অন্যায় ও অমানবিক ভাবে মুসলমান নিধন হচ্ছে দেখেও না দেখার ভান করছে যদিও তাদের শক্তিশালী পুলিশের একটি বিশেষ দল সিবিআই তদন্তে বলেছে বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সাথে জড়িত তারপরও সেই প্রতিবেদনকে অবগ্যা করে মোদী সরকার চুপচাপ বসে আছে কোন প্রতিকার নিচ্ছে না ফলে সীমান্তে গুলী করে হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। এই বিষয়ে এখন বাংলাদেশ সরকারকে নতজানু হয়ে বসে থাকলে চলবে না তাদেরকে এগিয়ে এসে এই গরু পাচারের নামে নিরীহ জনগণকে বিএসএফ কর্তৃক গুলী করে হত্যা করা যেভাবেই হউক বন্ধ করাতে হবে। আল্লাহ্‌ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিরীহ জনগণকে বিএসএফদের হাতে হত্যা হওয়া থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা প্রদান করুন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন