বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কৃষি বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভে অচল ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মোদি সরকারের নতুন কৃষি বিলের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে আন্দোলন শুরু করেছে কৃষক সংগঠনগুলো। গতকাল দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গসহ দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ। রাস্তায় নেমে এই বিলের প্রতিবাদ করছেন কৃষকরা। দেশের কৃষক সংগঠনগুলি মিলিত ভাবে এ দিন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। কংগ্রেস-সহ অধিকাংশ বিরোধী দল নীতিগত সমর্থন জানায় সেই ধর্মঘটে।

গত রোববার নতুন কৃষি বিল নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ভারতের রাজ্যসভার সাংসদদের একাংশ। গতকাল তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কোথাও রাস্তা আটকে, কোথাও ‘রেল রোকো’ অভিযানের মাধ্যমে এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কৃষকরা। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সে জন্য প্রচুর পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে এই ধর্মঘটের প্রভাব সবথেকে বেশি। জালন্ধরের কাছে সকাল থেকেই অমৃতসর-দিল্লি জাতীয় সডক অবরোধ করেছে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন ও রেভোলিউশনারি মার্ক্সিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া। অম্বালাতে বিক্ষোভের জেরে বন্ধ রয়েছে দিল্লি-চন্ডীগড় বাস পরিষেবা। লুধিয়ানার চিত্রটাও একই রকম। কিষান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি বৃহস্পতিবার থেকেই পাঞ্জাব জুড়েই চালাচ্ছে ‘রেল রোকো’ অভিযান। গতকালও তা অব্যাহত ছিল। ইতিমধ্যেই ফিরোজপুর ডিভিশনে ১৩টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ বিক্ষোভকারী কৃষকদের করোনাভাইরাস সুরক্ষা বিধি মেনে শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ করার আবেদন জানিয়েছেন। এনডিএ-র শরিক শিরোমণি আকালি দলও এই বিলের প্রতিবাদে সারা পাঞ্জাব জুড়ে তিন ঘণ্টার ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচি নিয়েছে।
কৃষি বিল ২০২০-র প্রতিবাদে নেমেছে কর্নাটকের রাজ্য কৃষক সংগঠনও। বোম্মানহালিতে কর্নাটক-তামিলনাড়ু জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান রাজ্যের কৃষকরা। মহারাষ্ট্রেও বিক্ষোভে নেমেছে বাম সমর্থিত অল ইন্ডিয়া কিষান সভা। সে রাজ্যের প্রায় ২১টি জেলাতে বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান কিষান সভার ৩০ হাজারেরও বেশি সদস্য। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গাতেও পথে নেমেছেন কৃষকরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় চিল্লাতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিল ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে বারাবাঁকিতে অযোধ্যা-লখনউ হাইওয়ে অবরোধ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডাতেও চলে কৃষকদের বিক্ষোভ। ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন রাস্তা অবরোধ করে এই বিলের প্রতিবাদ করে। যার জেরে যান চলাচলকে দিক পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসিপি নয়ডা।
কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিহারের রাস্তায় নেমেছেন লালুর দুই ছেলে। কৃষকদের নিয়ে পটনার রাস্তায় র‌্যালিও করেছেন তারা। সেই র‌্যালিতে রাষ্ট্রীয় জনতা দলে (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদবকে দেখা গিয়েছে ট্রাক্টর চালাতে। তখন তার দাদা তেজপ্রতাপ যাদব চড়েছিলেন ট্রাক্টরের মাথায়। এই বিলকে কৃষক বিরোধী অ্যাখ্যা দিয়ে তেজস্বী বলেছেন, ‘সরকার আমাদের ‘অন্নদাতাদের’ পুতুল বানানোর চেষ্টা করছে। ২০২২-র মধ্যে কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু এই বিল তাদের আরও গরিব করবে।’
বৃহস্পতিবারই এই ধর্মঘটের সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। গতকাল সকালেই কৃষি বিলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মোদি সরকারকে আক্রমন করেছেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীা। ধর্মঘটের সমর্থন করে রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘ত্রæটিপূর্ণ জিএসটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ধ্বংস করেছে। নতুন কৃষি আইন আমাদের কৃষকদের ক্রীতদাস বানাবে।’ এই সুর ধরা পড়েছে প্রিয়ঙ্কার টুইটেও। তিনি লিখেছেন, ‘কৃষকদের থেকে ন্য‚নতম সহায়ক মূল্য কেড়ে নেয়া হবে। কোটি কোটি কৃষকদের ক্রীতদাসে পরিণত হতে বাধ্য করা হবে। না পাবে দাম, না পাবে সম্মান। নিজের জমিতেই শ্রমিকে পরিণত হবে কৃষকরা।’ বিজেপির আনা কৃষি বিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের কথাও মনে করিয়ে দেয় বলেও এ দিন তোপ দেগেছেন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল বলেছেন, ‘মিথ্যা বলে এত দিন কৃষকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিলেন যারা, তারাই এখন কৃষকদের কাঁধে বন্দুক রেখে চালাচ্ছেন। সরকারি নীতি নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।’
এই বিল দেশের কৃষকদের আর্থিক উন্নতি জন্য আনা হয়েছে বলে শুরু থেকে দাবি করে আসছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধী আপত্তি উড়িয়ে ‘গায়ের জোরেই’ সংসদে বিল পাশ করেছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার। তার পর থেকেই দেশের অধিকাংশ বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বিলে সই না করার জন্য প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছেন তারা। পাশাপাশি কৃষকরাও নেমেছেন রাস্তায়। গতকালের ধর্মঘটে অংশ না নিলেও এই কৃষি বিলে পরিবর্তনের জন্য দাবি করেছে ভারতীয় কিষান সংঘ ও স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের মতো আরএসএস ঘনিষ্ট কৃষক সংগঠনও।
পরিস্থিতি অনুক‚লে নয় দেখে বৃহস্পতিবার বিতর্কিত বিল নিয়ে কৃষকদের ‘বোঝাতে’ আসরে নামেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। তিনি বলেছেন, ‘এই বিলে কৃষকদের ক্ষতি হবে, এমন কোনও বিষয় নেই। ছোট কৃষকদের লাভের কথা ভেবেই বিল আনা হয়েছে।’ কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, এই আইনের ফলে কৃষকদের চেয়ে বেশি লাভ হবে বড় ব্যবসায়ী সংস্থাগুলির। পথে বসবেন ছোট কৃষকেরা। উঠে যাবে ন্য‚নতম সহায়ক মূল্যও। সূত্র : রয়টার্স, টিওআই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন