শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতের ঢলে অকাল বন্যা

যমুনা-সুরমায় বিপদসীমা অতিক্রম নদ-নদীর ৬৬ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি : ফের ভয়াবহ নদীভাঙনের আশঙ্কা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভারতের উজানের ঢলে আশ্বিনে সৃষ্টি হয়েছে অকাল বন্যা পরিস্থিতি। কোথাও পঞ্চম কোথাও চতুর্থ বারে বন্যা কবলিত হয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক এলাকা। করোনা মহামারীর মধ্যেই দফায় দফায় বন্যায় দিশেহারা পানিবন্দী লাখো মানুষ। উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় সুরমা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে গতকাল শুক্রবার যমুনা ও সুরমা নদী আবারো বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়।
তাছাড়া ধরলা, গুড় ও যদুকাটাসহ ৫টি নদীর পানি বিপদসীমার উপরে বইছে। উত্তরে তিস্তা ও উত্তর-পূর্বে ভুগাই নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নামলেও উভয় নদীর দুই তীরে গ্রাম-জনপদ বন্যায় ভাসছে। সুরমা, কুশিয়ারাসহ সিলেট অঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলেও নদ-নদীর পানি নতুন করে বেড়ে যাচ্ছে। ভাসছে নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম-জনপদ, হাট-বাজার, সড়ক রাস্তাঘাট। ফের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে ফল-ফসল।
সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচল, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয় ৪২৪ মিলিমিটার। অন্যান্য অঞ্চলেও হচ্ছে অতিবৃষ্টি।
এরফলে প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানের অববাহিকায় বাড়ছে পানি। উজানের ঢল-বানের পানি গড়াচ্ছে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকেই। তাছাড়া ভারতে অনেক বাঁধ-ব্যারেজ খুলে পানি ছেড়ে দেয়ায় উজানের ঢল আসছে আরও প্রবল বেগে। গতকাল দেশের নদ-নদীসমূহের ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৬৬টি পয়েন্টেই পানি বৃদ্ধি পায়। পানি বৃদ্ধির সাথে সর্বত্র ভয়াবহ নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভ‚ঁইয়া জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদে পানির সমতল স্থিতিশীল বা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অন্যদিকে এ সময়ে যমুনা নদে পানির সমতল আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, দেশের নদ-নদীর ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৬৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩২টিতে হ্রাস পায়। ৩টি স্থানে পানির সমতল অপরিবর্তিত থাকে। পাঁচটি নদী ৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বৃহস্পতিবার নদ-নদীসমূহের ৫৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪৪টি পয়েন্টে হ্রাস পায়। বুধবার ৪৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫৩ পয়েন্টে হ্রাস পায়।
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও হিমালয় পাদদেশীয় এলাকাগুলোতে অধিকাংশ স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় চেরাপুঞ্জিতে ৪২৪ মি.মি., শিলংয়ে ২৪৫ মি.মি., পাসিঘাটে ৭২ মি.মি.।
অন্যদিকে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় লরেলগড়ে ২শ’ মি.মি., দুর্গাপুরে ১১৬, জাফলংয়ে ৯৪, ডালিয়ায় ৮৫, পঞ্চগড়ে ৭৭, পাঁচপুকুরিয়ায় ৬৯, মহেশখোলায় ৬৮, লালাখালে ৬৫, নারায়ণহাটে ৬২, চট্টগ্রামে ৫৯, রাঙ্গামাটিতে ৫৮, নাকুয়াগাঁওয়ে ৫১ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ভারতের উজানের ঢলের কারণে যমুনা, ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও বিপদসীমা অতিক্রমের ফলে বগুড়া, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, সুনামগঞ্জ, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা পঞ্চম ও চতুর্থ দফা বন্যা কবলিত হয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত যমুনা নদের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জে আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলায় ধরলা নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৪৬ সে.মি. ঊর্ধ্বে, সিংড়ায় গুড় নদীর পানি ৫৩ সে.মি উপরে, সুনামগঞ্জ জেলার লরেলগড়ে যদুকাটা নদীর পানি বেড়ে ৬৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ৭৭ ও ৩০ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদের পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বিপদসীমার মাত্র ৩ সে.মি. এবং সিরাজগঞ্জে ১৪ সে.মি. নিচে এসে গেছে। গাইবান্ধায় ঘাগট নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ১৬ সে.মি. নিচে এসেছে। মধ্যাঞ্চলে ধলেশ^রী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এলাসিন ঘাটে বিপদসীমার মাত্র ৭ সে.মি. নিচে এসেছে। গঙ্গা-পদ্মায় পানি কিছুটা বৃদ্ধির ফলে গোয়ালন্দে পদ্মা বিপদসীমার ২২ সে.মি. নিচে রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
পথিক ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:২৪ এএম says : 0
আল্লাহ তুমি আমাদের সবাইকে রক্ষা করো, আমিন
Total Reply(0)
Shahjahan Siddiqy ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:২৫ এএম says : 0
ইয়া আল্লাহ আপনি সহায় হউন।
Total Reply(0)
বীর বাহাদুর ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:২৬ এএম says : 0
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করুন সবাই। সরকারের একার পক্ষে সবাইকে ১০০ ভাগ সহায়তা করা সম্ভব না। মিথ্যাচার দোষারপের রাজনীতি বাদ দিয়ে তাদের পাশে দাড়ান।
Total Reply(0)
Motiur Rahman ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:২৮ এএম says : 0
এদের পাশে কেউ না থাকলেও আল্লাহর রহমত আছে, আর দেশে কোন মানুষ আছে বলে মনে হয় না। যারা আছে তারা নামে মাত্র!
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:২৮ এএম says : 0
বন্ধু রাষ্ট্রের দেয়া উপহার- পানি !
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন