মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আলমে বারযাখ বা কবরের জগত

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আরবী বারযাখ শব্দের অর্থ হলো পর্দা, বেড়া, ঢাকনা, আবরণ। আর বারযাখের জগত বলতে ঐ জগতকে বোঝায়, সেখানে মানুষ মৃত্যুর পর হতে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করবে। যেহেতু সে জগতটি চলমান পৃথিবীর জগত হতে অন্তরালে রয়েছে বা আড়ালে আছে, সেহেতু তাকে বারযাখের জগত বা কবরের জগত বলা হয়।

আরবী অভিধান অনুসারে দু’টি বস্তুর মাঝের বস্তুকে বারযাখ বলে। অথবা দু’টি বস্তুর মাঝে ব্যবধানকারী পর্দা বা আড়াল। সুতরাং দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝের জগত অর্থাৎ মৃত্যু হতে নিয়ে হাশরের ময়দানে ওঠার পূর্ব পর্যন্ত জগতটিই হলো বারযাখ। সুতরাং যে মৃত্যুবরণ করল সে বারযাখের জগতে প্রবেশ করল। ব্যাকরণবিদ ইমাম ফাররা বলেছেন : মরণের দিন হতে পুনরুত্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত হলো বারযাখ। (লিসানুল আরব : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৯০৮)। আল কুরআনে বারযাখ শব্দটি সর্বমোট তিনবার এসেছে।

যথা- (ক) সূরা আল মুমিনুনের ১০০ নং আয়াতে। (খ) সূরা আর রাহমানের ২০ নং আয়াতে। এবং (গ) সূরা আল ফুরকানের ৫২ নং আয়াতে। সর্বত্রই উল্লিখিত অর্থ ও মর্মকে তুলে ধরা হয়েছে। কেননা, বারযাখ কোনো বিশেষ স্থানের নাম নয়। বরং মৃত্যুর পর মানবদেহ বা দেহের অংশসমূহ একত্রিতভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে সেখানে থাকবে কিংবা অবস্থান করবে, সেই স্থানই তার জন্য বারযাখ বা কবর।

মোট কথা, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মধ্যবর্তী সময়টি হলো বারযাখ। একবার ইমাম শাবীকে বলা হলো, অমুকে মারা গেছে। তিনি বললেন, সে এখন দুনিয়াতেও নেই, আখিরাতেও নেই। সে এখন বারযাখের জগতে আছে। (তাসকিরাহ : পৃষ্ঠা ১৫৮)। বিজ্ঞ উলামাগণ বলেন, সকল মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়া হোক বা না হোক, কিংবা শূলিতে চড়ানো হোক, অথবা সমুদ্রে ডুবে যাক কিংবা ছিন্নভিন্ন বা ভস্ম হয়ে উড়ে যাক, সকলের স্থানই বারযাখে। (শারহুস সূদুর : পৃষ্ঠা ১৬৪)।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সদস্যগণ বলেন, মৃত্যুর সময় দেহ হতে রূহ বের করা হয়। রূহ ধ্বংস হয় না। এর উপযুক্ত ঠিকানা ও স্থিতিস্থানের প্রয়োজন হয়। সব দেহকে কবরস্থ করার পর সাওয়াল-জওয়ারের জন্য উক্ত দেহে রূহ ফিরিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর দেহের সাথে রূহের এতটুকু সম্পর্ক অবশ্যই স্থায়ী হয়, যার দ্বারা শান্তি ও শাস্তি অনুভব করতে পারে। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ১০১)।

হযরত বারা বিন আযিব (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : মুমিন বান্দার যখন মরণক্ষণ ঘনীভূত হয়ে যায়, ফিরিশতা তার নিকট উত্তম আকৃতিতে সুগন্ধিতে সুরভিত হয়ে আগমন করে। মুমিনের রূহ কবজের জন্য তার পাশে বসে। আর দু’জন ফিরিশতা বেহেশ্ত হতে সুগন্ধিপাত্র নিয়ে তার কাছে উপস্থিত হয়। তারপর উক্ত ফিরিশতাদ্বয় রূহ সমভিব্যহারে জান্নাত পানে গমন করে। তাদের জন্য আরশের দরজা খুলে দেয়া হয়। তাদের জন্য আকাশের দরজাও খুলে দেয়া হয়।

ফিরিশতামন্ডলী তার আগমনে আনন্দিত হয় আর বলে এ পবিত্র রূহটি কার, যার আগমনে আকাশের প্রবেশদ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়েছে তখন তার সুন্দরতম নাম উল্লেখ করা হবে, যে নামে তাকে পৃথিবীতে নামকরণ করা হতো। অনন্তর বলা হবে, এটা অমুক ব্যক্তির রূহ। তারপর ঐ রূহকে নিয়ে যখন ঊর্ধ্বে আরোহণ করতে থাকে, তখন আল্লাহপাক বলেন, আমার বান্দার আত্মাকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নাও। কেননা, আমি তাদের মর্তে ফিরিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেছি। যখন মুমিনকে পুনরায় কবরে ফেরত দেয়া হয়, তখন কবরের মাটি তাকে বলে তুমি আমার পৃষ্ঠে থাকতে আমার নিকট প্রিয় ছিলে।

সুতরাং কেমন হবে যখন তুমি আমার অভ্যন্তরে এসেছ। তুমি দেখতে পাবে আমি তোমার সাথে কেমন আচরণ করি। তারপর তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত কবর প্রশস্ত হয়ে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খোলা হবে। তাকে বলা হবে তুমি লক্ষ করো, আল্লাহতায়ালা তোমার জন্য কী পারিতোষিক তৈরি করে রেখেছেন। আর মাথার দিক থেকে দোযখের দিকে একটি দরজা খোলা হবে, আর বলা হবে তুমি দেখ, আল্লাহতায়ালা তোমার থেকে কেমন শাস্তি ও আযাব দূর করে দিয়েছেন। অতঃপর তাকে বলা হবে, পরিতৃপ্তি ও শান্তির সাথে অবস্থান করো। তখন তার নিকট কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়াই সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হবে। (মিশকাতুল মাসাবিহ : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Khan Sharif ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৭ এএম says : 0
মানব জীবনে চারটি স্তর বা ধারনা পাওয়া যায়। প্রথম স্তর ঃ আলমে আরওয়াহ্ বা আত্মার জগৎ। দ্বিতীয় ঃ আলমে আজসাম বা বস্তুজগৎ। তৃতীয় ঃ আলমে বারযাখ বা মৃত্যুর পরবর্তী অদৃশ্য জগৎ। চতুর্থ স্তরঃ আলমে আখিরাত বা পরকাল তথা পুনরুত্থান ও তার পরের অনন্ত জগৎ।
Total Reply(0)
Nazmul Huda ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৮ এএম says : 0
মানবজাতি পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে আল্লাহ তায়ালা তাদের রূহ্ বা আত্মা সৃষ্টি করেছেন। এ সবের সাময়িক অবস্থানের জায়গা আলমে আরওয়াহ্ বা আত্মার জগৎ।
Total Reply(0)
Badarul Islam Dm ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৮ এএম says : 0
মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় রূহ্ যে স্থানে অবস্থান করে তাকে আলমে বারযাখ বলা হয়।
Total Reply(0)
Mir Irfan Hossain ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৯ এএম says : 0
মৃত্যুর পর থেকেই মানুষের বারযাখী জীবন শুরু হয়।
Total Reply(0)
Belal Khan ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৯ এএম says : 0
হযরত ইসরাফিল (আঃ) - এর তৃতীয়বার শিঙ্গায় ফুতকারের মাধ্যমে আলমে বারযাখ বা বারযাখী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে।এরপরই শুরু হবে আলমে আখিরাত বা পরকালীন জীবন
Total Reply(0)
Nazrul Islam ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৫০ এএম says : 0
বারযাখ শব্দের অর্থ যবনিকা বা পর্দা। আলমে বারযাখ পর্দাস্বরূপ এক অদৃশ্য জগৎ। এ জগৎ বস্তুজগৎ ও পরকালের মধ্যে বিরাট পর্দা হয়ে রয়েছে।
Total Reply(0)
salman ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৫৫ এএম says : 0
Jai ZALIM, NASTIK, ............. Thumb Down deyese, Allah ta k HEDAYAT dan korun, R Or Nosib a Hedayat na thaklay or DHONGSHO hok...ameen
Total Reply(0)
সাইফা ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৪০ পিএম says : 0
খুব খারাপ। আমার চাই আলমের বারযাখ বলতে কী কী বুঝায়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন