আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের রবের দরবারে ইস্তিগফার কর। (তাহলে) তিনি তোমাদের প্রতি পর্যাপ্ত বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদের মাল, সন্তান, বাগ-বাগিচায় বরকত দিবেন এবং তোমাদের জন্য নহর সৃষ্টি করে দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাওবায় অধিক খুশি হন।
রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিভিন্ন মসজিদে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম গতকাল খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, কারো নেয়ামত দেখে তা ধ্বংসের কামনা করাই হিংসা। যা সম্পূর্ণরূপে হারাম। স্মরণ রাখতে হবে হিংসা অন্তরাত্মার নিকৃষ্টতম একটি ব্যাধি। কারণ হিংসুক সব সময় হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। কোরআন ও হাদীসেও হিংসা এবং হিংসুককে কঠিণ ভাবে নিন্দা করা হয়েছে। হিংসুকের অনিষ্ঠ থেকে পানাহ চাইতে পবিত্র কোরআনে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থেকো। কারণ হিংসা নেক আমলসমূহকে গ্রাস করে নেয়, যেভাবে আগুন গ্রাস করে লাকড়ি (অথবা ঘাস)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০৫) অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে সন্দেহ নেই, হিংসা নেক আমলসমূহের নূর ও আলোকে নিভিয়ে দেয়। মনে রাখতে হবে হিংসুক হিংসার অন্তরালে বহু গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। সুতরাং আসুন আমরা হিংসা-বিদ্বেষ,গীবত,কুদৃষ্টিসহ সকল প্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন!
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতীব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম গতকাল খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পাপ করার পর নিরাশ হওয়া যাবে না আবার পাপের মধ্যে লিপ্তও থাকা যাবে না। বরং তাওবা করতে হবে। সকল ধরণের পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তাওবা করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন হে মুমিনগণ তোমরা সকলেই তাওবা কর, যাতে করে তোমরা সফলকাম হও। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন আল্লাহর কসম আমি প্রতিদিন সত্তর বারের বেশি তাওবা করি (বুখারী)।
অপর বর্ণনায় এসেছে হযরত আগার ইবনে ইয়াসার আলমাজানী (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, হে মানুষ তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো। কেননা আমি প্রতিদিন একশত বার তাওবা করি (মুসলিম)। মুসলিম শরীফের অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাওবায় অধিক খুশি হন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের রবের দরবারে ইস্তিগফার কর।
রাজধানীর চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার বয়ানে বলেছেন, মানুষের মধ্যে ফেরেশতাসুলভ স্বভাবও রয়েছে আবার পশুসুলভ স্বভাবও রয়েছে। মানুষ যদি তার মধ্যে থাকা পশুত্বের স্বভাবকে পরাজিত করে ফেরেশতাসুলভ স্বভাবকে বিজয়ী করতে পারে তাহলে মানুষ রূপে পৃথিবীতে আসা তার জন্য স্বার্থক হয়ে উঠে।
উপরোক্ত উভয় প্রকার স্বভাব মানুষের ভেতর প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে এবং এই যুদ্ধে একটিকে নিয়ন্ত্রণ করে অপরটিকে শক্তিশালী করার ক্ষমতাও আল্লাহ মানুষকে দিয়ে রেখেছেন। তাই পশুসুলভ চরিত্রকে মাথাচাড়া দেয়ার সুযোগ দেয়া হলে সেক্ষেত্রে মানবজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। হযরত আলী (রা.) এর ভাষ্যমতে, মানুষের মধ্যে ফেরেশতাজাতিয় স্বভাবের প্রভাব বেশি হলে মানুষ ফেরেশতার চেয়েও উত্তম হয়ে যায়।
বিপরীতে পশুচরিত্রের প্রভাব বেশি হলে মানুষ তখন পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়। মাওলানা আফেন্দী বলেন, প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তাক্বওয়াই একমাত্র কার্যকর পাথেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন