মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আমরা চাই বিশ্বে শান্তি থাকুক : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী আজ জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৬ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে বাংলাদেশ সব সময় প্রস্তুত। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় পুরো বিশ্বকে এক হয়ে কাজ করার তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত ভাষণ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেখানো হবে।
গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলায় দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণের ৪৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এই আহŸান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সব সময় চায় সারা বিশ্বে একটা শান্তি বজায় থাকুক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে নানা ধরনের কনফ্লিস্ট আছে, সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, প্রত্যেকে সেখানে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে জীবন দেয়া বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সব সময় প্রস্তুত। আমরা চাই সারা বিশ্বে শান্তি থাকুক। করোনাভাইরাস মহামারি থেকে বিশ্বের মানুষের মুক্তি কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবারও অর্থনীতির চাকা সচল হোক, সকল মানুষ সুন্দরভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারুক, সেটাই আমরা চাই। সে জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সারাবিশ্বকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও মানুষের সুন্দর জীবন নিশ্চিতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি আমাদের খাদ্যের ওপর। কারণ আমি জানি, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে হয়তো দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যেন কোনোমতে সেই দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া না লাগে। তাই আমরা যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন করা, খাদ্য বিতরণ করা, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দেয়া এবং খাদ্য নিশ্চয়তা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত আকারে অব্যাহত রাখার। তিনি বলেন, আমাদের জিডিপি যেটা টার্গেট ছিল যে ৮.২ শতাংশের উপরে যাব, সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমরা এবার ৫.২৪ শতাংশের মতো অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু আমরা আশা করি আগামীতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরো বেশি অর্জন করতে সক্ষম হব। আর সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মুজিববর্ষে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংকল্পের কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, প্রায় ৪০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল, এই দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে ২০.৫ শতাংশে এনেছি। আমরা আরো কমাতে চাই। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষকে একটা সুন্দর জীবন আমরা উপহার দিতে চাই। আর সে জন্য বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযেগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এই বিশ্বে কেউ একা চলতে পারে না। তাই সকলের সহযোগিতা আমাদের কাম্য। পাশাপাশি কাউকে কোনো ধরনের সহযোগিতা যদি করতে হয়, আমরা সেটা করতেও প্রস্তুত। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৪৬ বছর আগে তার সেই ভাষণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হয়। সেই ভাষণে জাতির পিতা বলেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। এখনও সেটাই যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল চালিকাশক্তি, সে কথা অনুষ্ঠানে বলেন তার মেয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহামারির কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন ভার্চুয়ালি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত ভাষণ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেখানো হবে আজ শনিবার।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার জাতিসংঘ অধিবেশনে সরাসরি যোগ দিতে না পারার ‘দুঃখের’ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ১৬ বার জাতিসংঘে গিয়ে ভাষণ দিয়েছি এবং আমার ১৭তম ভাষণ দিতে আমি যেতে পারছি না। এটা সত্যিই খুব দুঃখের। কারণ সেখানে বিশ্বের সব দেশের নেতাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটা সুন্দর সুযোগ হয়, মতবিনিময় করার সুযোগ হয়, একে অপরের অভিজ্ঞতা আমরা শেয়ার করতে পারি। সেই সুযোগটা করোনাভাইরাসের কারণে হলো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার তার ভাষণে এ দেশের দুঃখী মানুষের কথা বলেছিলেন, এ দেশের সার্বিক উন্নয়নের কথাই বলেছিলেন। সেই সাথে বিশ্বব্যাপী বঞ্চিত মানুষের কথা তিনি বলেছেন। আমরা সেটা বিশ্বাস করি। তাই আমাদের উন্নয়নের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে তৃণমূলের মানুষ।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বিশ্বে কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বও অনেক বদলে গেছে। এখন শুধু রাজনৈতিক কূটনীতি না, দরকার হয় অর্থনৈতিক কূটনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো, সকলের সঙ্গে মিশে কিভাবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করা যায়, উন্নয়ন করা যায়, একে অপরকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, একে অপরের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিশ্বে শান্তি কিভাবে নিয়ে আসা যায়- সেভাবেই আমাদের ডিপ্লোমেসি এখন চালাতে হবে। বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে ঘাতকেরা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, তার দোসর যারা, তারা এ দেশে কোনো স্থিতিশীল সরকার থাকুক তারা কখনোই চায়নি। সে জন্য মাঝে মাঝেই চেষ্টা করে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে। এই অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা যখন চালায়, তখন আমরা দেখি অগ্নিসংযোগ করে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করা অথবা মানুষকে খুন করা। নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর। আমাদের সব অবস্থারই মোকাবেলা করতে হয়। আর আওয়ামী লীগ তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে বলেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে। শেখ হাসিনা বলেন, তারা বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আমরা সরকার গঠন করে তাদের সেবা করতে পেরেছি। আর দীর্ঘ সময় একটু ক্ষমতায় থাকতে পেরেছি বলেই উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে এবং উন্নয়নগুলো করতে পারছি, যার সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমি প্রান্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় এবং স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (নিউইয়র্ক সময়) জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদে তার পূর্বনির্ধারিত রেকর্ডকৃত ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাংলায় এই ভাষণ দেবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Syed ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৫৯ এএম says : 0
একমাত্র নবী, রসুলগনের মারফতে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ছাড়া ! কিন্তু আমরা মানি কই ?
Total Reply(0)
Azad Shohel ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩০ এএম says : 0
১00% দূনীতি রোধ করতে পারলেই আমাদের দেশ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে তুলে ধরা যাবে। আমি গ্রামে থাকি। তাই সকল অনিয়ম বুঝতে পারা যায়। এসব রুখতে হবে দেশমাতা আমার শ্রদ্ধেয় মাতা।
Total Reply(0)
Sheikh Ripan ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩০ এএম says : 0
দুর্নীতি বন্ধ না করতে পারলে আমরা কখনো এই দারিদ্রতার অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসতে পারবনা ।
Total Reply(0)
Mohamed Saleh ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩১ এএম says : 0
জয়তু্ শেখ হাসিনার জয় বাংলার জয়
Total Reply(0)
MD Rafik Ahmed ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩১ এএম says : 0
শেখ হাসিনার হাতে থাকলে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
Total Reply(0)
Md. Alu ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩২ এএম says : 0
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয় দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জয়
Total Reply(0)
Md Riaz Uddin ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩২ এএম says : 0
দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতে থাকলে দেশ, ইনশাআল্লাহ অচিরেই দারিদ্র মুক্ত হবে বাংলাদেশ
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৪ এএম says : 0
আমরাও চাই বিশ্বে শান্তি থাকুক। হানাহানি বন্ধ হোক।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৪ এএম says : 0
আমরাও চাই বিশ্বে শান্তি থাকুক। হানাহানি বন্ধ হোক।
Total Reply(0)
Ahmed Fozol ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৪ এএম says : 0
ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী আপনি আপনার মতো চেষ্টা চালিয়ে যান।
Total Reply(0)
মোঃ নাজমুল ইসলাম ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৫ এএম says : 0
বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক সেই কামনা।
Total Reply(0)
Jack Ali ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৪৯ এএম says : 0
Without rule by the Qur'an and Sunnah there will be no peace in the World. We liberated our country -- we do not have peace in our country.. our government and their party people's are oppressing us in every aspect in our life
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন