এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫৯ উপজেলায় ভিক্ষুকমুক্ত, তাদের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন করা হবে। ইতিমধ্যে বিভাগীয় প্রশাসন জেলা প্রশাসকদের ভিক্ষুক জরিপ করার নির্দেশ দিয়েছে। কর্মসূচির আওতায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিসেম্বরের আগেই ভিক্ষুক মুক্ত করা হবে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো এক নির্দেশনায় উল্লেখ করেন, ভিক্ষাবৃত্তি অসম্মানজনক পেশা। ভিক্ষুকরা পরিবার-সমাজ ও দেশের সম্মান নষ্ট করছে। এ অবস্থার অবসানের লক্ষ্যে বিভাগকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে ৩১ আগস্টের মধ্যে ভিক্ষুকের সংখ্যা জানাতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেসিসি ও এ অঞ্চলের পৌরসভাগুলোকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দিতে বলা হয়েছে।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. ফারুক হোসেন জানান, এ কর্মসূচি সফল করতে আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় বিভাগীয় কমিশনার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন, সমবায়, সমাজসেবা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করবেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন। তারপরও ভিক্ষুকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। ডিসেম্বরের আগেই এ অঞ্চলের ১০ জেলা ভিক্ষুকমুক্ত হবে বলে তিনি আশাবাদী।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব কুমার রায় জানান, ভিক্ষুক জরিপ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে গৌরম্ভা ও উজলকুড় ইউনিয়নে হতদরিদ্রের সংখ্যা বেশি। আনুমানিক সাড়ে তিনশ’ জন ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত বলে তিনি উল্লেখ করেন। জরিপ শেষে উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের পরামর্শে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের কাজে হাত দেয়া হবে। তাদেরকে মাছ, মুরগী, হাঁস ও ছাগল পালনে প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে পুনর্বাসন করা হবে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ২৪ আগস্টের মধ্যে ভিক্ষুক জরিপ প্রক্রিয়া শেষ হবে। এখানে আনুমানিক ২৫০জন ভিক্ষুকের বসবাস বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভিক্ষাবৃত্তি পেশা ছেড়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করার পর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কর্মক্ষমদের প্রশিক্ষণ এবং বয়স্ক ও বিধবাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
মাগুরার শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোমিন উদ্দিন জানান, গ্রাম পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান ও একটি বাড়ি একটি খামারের আওতাধীন সমিতির সদস্যদের ভিক্ষুক জরিপ কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। ১৯ আগস্ট নাগাদ জরিপ শেষ হবে। অন্তত ৫০০ ভিক্ষুকের বসবাস বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
খুলনার দাকোপ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ রায় জানান, ইউপি নির্বাচনের পর পরই এখানকার ১২টি গ্রামকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে তারা ওই গ্রামের ৩০ জন ভিক্ষুক কৃষি কাজ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ মেরামত ও নদীতে মাছের পোনা ধরে জীবিকা নির্বাহী করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন