শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ ও চীনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারকে উস্কানি দিচ্ছে কারা?

সৈয়দ ইবনে রহমত | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

গত ৭ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকা থেকে একজন বাংলাদেশি রাখালকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের আনসার(নাঠালা) বাহিনী। মো. ইউছুফ নামের ওই বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয় তারা। ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমানার কাছে কয়েকটি স্থানে প্রায় এক হাজার সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার। তার আগের দিন ১০ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার নেভির একটি জাহাজ ইনদিন গ্রামের উপক‚লে যায় এবং সৈন্যরা সেখানে নামে। পরে তাদেরকে বেসামরিক নাগরিকদের মাছ ধরার ২০টি নৌকায় করে নাফ নদী বরাবর নিগার খুইয়া গ্রামে নেওয়া হয়। যেটি মংডু শহরের ২০ কিলোমিটার উত্তরে ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত। মিয়ানমারের সৈন্যরা পরে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডুর একটি গ্রামে অভিযান চালায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এ অভিযানে পাঁচ জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও তিন জন রোহিঙ্গা নারীকে আটক করা হয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার লোকজন জানান, অভিযানের সময় ওপার থেকে গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন তারা। গত জুন থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী কয়েকটি স্থানে প্রায় ৩৫টির মতো গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

গত ৪ জুন দুপুর ৩টা থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটার মধ্যবর্তী সময়ে বিপি-৩৫ নম্বর পিলারের কাছে আন্তর্জাতিক সীমানার মিয়ানমারের দিক থেকে ৫০০ গজ ভেতরে সামরিক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে যৌথ অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমার মিলিটারি ও বর্ডার গার্ড পুলিশ। বাংলাদেশ সীমান্তের মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যে মিয়ানমার মাইন পুঁতে রাখার কাজ করছে বহু দিন ধরেই। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি দেশটি বাংলাদেশ সীমান্তের মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে বুচিডংয়ে ৩৪টি অত্যাধুনিক ট্যাংক মোতায়েন করেছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় তাদের এসব সামরিক তৎপরতার কোনোটার কথাই আগে থেকে বাংলাদেশকে অবগত করেনি। প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে না জানিয়ে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ, মাইন পুঁতে রাখা, সশস্ত্র অভিযান, গোলাগুলি, বেসামরিক বাহনে সামরিক ব্যক্তিদের চলাফেরা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কেননা, এতে যে কোনো সময় ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা যেমন থাকে, তেমনি সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনসাধরণের মনেও ভীতির সঞ্চার হয়। হচ্ছেও তাই, সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অযাচিত উপস্থিতির কারণে স্থানীয় বাংলাদেশিরা যেমন আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি জিরো পয়েন্টে এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থাকা রোহিঙ্গারাও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জীবনযাপন করছে।

অনেকেই বলছেন, রাখাইনের বৌদ্ধ অধিবাসীদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। এতে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সৈন্য হতাহতের শিকার হচ্ছে। তাই, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি হিসেবেই সেখানে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে মিয়ানমার। কেউ কেউ বলছেন, সামনেই মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে আরাকান আর্মি যেন ভয়ানক কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে না পারে সে জন্যই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ রণ প্রস্তুতি। অন্যদিকে নির্বাচন এবং দেশ শাসনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একটি বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু অং সান সুকির সাথে সেনাবাহিনীর সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির গণতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করছে, যা সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ধরে রাখার পথে অন্তরায়। সে আশংকা থেকে রাখাইনে যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরি করে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নির্বাচনী মাঠে ফায়দা হাসিল করতে চাইছে সেনাবাহিনী। নানা কারণেই এটা হতে পারে। কিন্তু প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশকে ন্যূনতম শিষ্টাচার তাদের দেখাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতিও তাদের মানতে হবে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় সামরিক তৎপরতা চালানোর আগে প্রতিবেশী দেশকে তা যথাযথভাবে অবহিত করতে হবে। এমনকি তারা চাইলে যথাযথ পন্থায় সীমান্ত এলাকায় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের দিয়ে যৌথটহলের মাধ্যমেও সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারীদের দমনে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। কিন্তু মিয়ানমার সে পথে হাঁটছে না, আর সেটাই সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের জন্য সেটাই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ও নানামাত্রিক সামরিক কর্মকান্ডের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানিয়ে এর ব্যাখ্যা চাওয়ার জন্য ঢাকাস্থ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্বেগ জানিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে একটি চিঠিও প্রদান করা হয়। কিন্তু চিঠির যথাযথ উত্তর দিয়ে প্রতিবেশীর উদ্বেগ নিরসনে মিয়ানমার ন্যূনতম সৌজন্য দেখানোর ব্যাপারেও আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হিসেবে থাকা ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও সে একই আচরণ করছে। ২০১৭ সালের পর থেকে তিনটি সমঝোতা চুক্তি করেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কোনো কার্যকর উদ্যোগই নিচ্ছে না। উপরন্তু রাখাইনে ব্যাপক সামরিক সমাবেশ করে পরিস্থিতি অন্যদিকে ঘুরাতে চাইছে বলেই প্রতিয়মান। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করেই এ ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। চিঠিতে সীমান্তে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক করা থেকে মিয়ানমারকে বিরত রাখতে এবং অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি করেছে ভারত’। তার এ বক্তব্যকে আরো অনেক ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞও সঠিক বলে মনে করেন। তাদের মতে, চীনা অর্থায়নে বঙ্গোপসাগরে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েও ভারত নাখোশ হওয়ায় শেষ মুর্হূতে সে প্রকল্প থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ। অথচ, বিশাল আয়তনের দেশ চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পণ্য সরবরাহ এবং বহির্বিশে^র সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য একটি খুবই প্রয়োজন ছিল। সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হওয়ার পরও চীনের এই প্রয়োজনটির ব্যাপারে বাংলাদেশ তাকে হতাশ করেছে। আর মিয়ানমার দীর্ঘদিন থেকেই চাচ্ছিল, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে। গত শতকের আশির দশক থেকেই সে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করতে শুরু করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ, অর্থনৈতিক মন্দা-সহ নানা কারণেই তারা সেটা ব্যাপকভাবে করতে পারছিল না। যে মুহূর্তে বাংলাদেশ সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাতিল করেছে, সেই মুহূর্তে মিয়ানমার চীনকে তার উপকূলে টেনে নেওয়ার সুযোগটুকু কাজে লাগিয়েছে। অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের ‘আরসা’ নামের একটি রহস্যজনক সংগঠনকে দিয়ে ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ তথা ‘সন্ত্রাসী হামলার’ নাটক সাজিয়ে রোহিঙ্গাদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর একটি অজুহাত সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘আরসা’র সাজানো হামলার পরবর্তীতে চালানো গণহত্যা থেকে জীবন বাঁচাতে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। আগে থেকে বাংলাদেশে থাকা পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সাথে যুক্ত হয়ে এখন তারা কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কারণেই চীন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। যদিও সে এখন আগের অবস্থান থেকে সরে এসে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু যে ভারতের আপত্তির কারণে বাংলাদেশ সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেছে সেই ভারতও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নির্মূল অভিযানের বিরোধিতা করে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং, রাখাইনে তার কালাদান প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখতে সেদিকেই ঝুঁকে ছিল। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা গণহত্যার জন্য সারাবিশ^ যখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফর করে অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে তার পাশে থাকার বার্তা দেন।

সম্প্রতি লাদাখ সীমান্তে চীনের সাথে সৃষ্ট বিরোধের পর উপমহাদেশে ভারতের বন্ধুহীন হয়ে পড়াটা অত্যন্ত রূঢ়ভাবেই স্পষ্ট হয়েছে। নিজেদের একাকিত্ব স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেই সম্ভবত ‘রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবসনের মধ্যেই সংকটের সমাধান নিহিত আছে’ বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশের পাশে থাকার ব্যাপারে আশ্বস্থ করেছে ভারত। কিন্তু এটা তাদের ‘বিশ্বাস’ নাকি ‘লিপ সার্ভিস’ সে ব্যাপারে দ্বিধা তৈরি হওয়ার যথেষ্ট অবকাশ আছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বিশ্ববাসীর দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য মিয়ানমার নানা চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ সীমান্তে অনেকবার সৈন্য সমাবেশ করেছে, কখনো গুলি করেছে, কখনো বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে, কখনো তাদের হেলিকপ্টার আন্তর্জাতিক আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এসব করেছে তারা বাংলাদেশকে উসকানি দিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিকে সেদিকে নিবদ্ধ করতে। কিন্তু বাংলাদেশের নেতৃত্ব তার সে ফাঁদে পা দেয়নি। এমন কি তারা সেন্টমার্টিনকে তাদের মানচিত্রে যুক্ত করেও আলোচনায় নতুন মাত্রা তৈরির চেষ্টা করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার যে ব্যাপকভাবে সামরিক তৎপরতা চালাচ্ছে এটাও কি সেই একই ধারাবাহিকতার অংশ নাকি এর পেছনে আরো কোনো গভীর তাৎপর্য আছে সেটা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। কেননা, মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ কিছু কারণের পাশাপাশি উপমহাদেশের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রভাব এখানে থাকতে পারেই বলেই সচেতন মহলের অভিমত।

মিয়ানমার এখন চীন, ভারত, জাপান, রাশিয়া এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেরও লক্ষ্য। বিশেষ করে দেশটির সমুদ্রতীরবর্তী রাখাইনের মাটির নিচে গ্যাস ছাড়াও বিপুল পরিমাণ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার সম্ভাবনা পরাশক্তিগুলোকে এখানে টেনে আনছে। তাছাড়া এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও অপরিসীম। সেটা মিয়ানমার ভালোভাবেই বুঝতে পেরে নিজেদের মতো ব্যাটিং করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভারত সফরের সময় যে শীতল আচরণ দেখানো হয়েছে এবং তার পর থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন মন্ত্রীর ভারত সফর নানা কারণেই স্থগিত হয়ে যাওয়াকে অনেকে একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন। শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দেখানো উপেক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খুব বেশি আলোচনা না হলেও কলকাতার আনন্দবাজার কোনো রাখঢাক না করেই শিরোনাম করে ‘মিত্র হাসিনার শীতল অভ্যর্থনা, কাঠগড়ায় দিল্লি’। জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে-সহ অন্যান্য অন্তার্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়টা গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। সর্বশেষ লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং তিস্তা প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের প্রস্তাব ভারতীয়দের গায়ে জ্বালা ধরিয়েছে। সেটা তাদের গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদ এবং সংবাদ বিশ্লেষণ দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়।

একদিকে যখন এসব ঘটনা ঘটে চলেছে, তখন অন্যদিকে একই সময়ে নীরবে নিভৃতে ঘটছে আরো একটি ঘটনা। ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকসহ কয়েকজন অখ্যাত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লিখে জানালেন যে, বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে চীন মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মিকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করেছে। একই গোষ্ঠি এটাও প্রচার করছে যে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা এবং চীন সম্মিলিতভাবে থাইল্যান্ড দিয়ে আরাকান আর্মিকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। কোনো প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই তারা এসব কাল্পনিক গল্প প্রচার করছেন একের পর এক। যেসব ওয়েবসাইটে এসব খবর প্রচারিত হয়েছে সেগুলোর তথ্য উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে যে, এর কয়েকটি ওয়েবসাইট পরিচালনার সাথে সুবীর ভৌমিক সরাসরি জড়িত। বাকীগুলোর সাথে স্বনামে না থাকলেও ভিন্ন নামে বা একই গোষ্ঠির অন্য সদস্যদের জড়িত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এই গোষ্ঠিটির পেছনে কারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন তা একটু ভাবলেই অনুধাবন করা সম্ভব। সুবীর ভৌমিকদের এই তৎপরতার মধ্যেই রাশিয়া সফরের সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র আরাকান আর্মি প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে আকস্মিকভাবেই চীনকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করে বসেন, ‘তারা বন্ধুবেশে আমাদের পিঠে ছুড়ি মেরেছে।’

স্বৈরশাসনের অভিযোগে সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মিয়ানমার যখন একঘরে হয়ে পড়েছিল, তখন একমাত্র চীনই তাদের পাশে থেকে টিকে থাকতে সহযোগিতা করেছে। সর্বশেষ রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঢাল হয়ে তাদের রক্ষা করেছে চীন। সেই চীনের বিরুদ্ধে হঠাৎ করেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের এমন রূঢ় মন্তব্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। পাশাপাশি বাংলাদেশ চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে কিনা এই প্রশ্নে যখন ভারতীয় কূটনৈতিক অঙ্গন সরগরম, তখন ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকদের তৎপরতা এবং মিয়ানমারের পক্ষ থেকে চীনের বিরুদ্ধে রূঢ় মন্তব্য, একই সময়ে বাংলাদেশ সীমান্তে তাদের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি অভিন্ন সূত্রে গাঁথা কিনা সেটাও ভাবার বিষয়। আর এসব যদি একই সূত্রে গাঁথা হয়ে থাকে তাহলে এর পেছনে কার ইন্ধন থাকতে পারে সেটাও স্পষ্ট। বাংলাদেশকে এসব কিছুই বিবেচনায় রেখে মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। পাশাপাশি নজর দিতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকেও। কারণ, উপর্যুক্ত সমীকরণগুলো যদি যথার্থ হয়ে থাকে তাহলে এটাও সত্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরও এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
মাহফুজ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
এই রিপোর্টির সাথে সহমত পোষণ করছি।
Total Reply(0)
ash ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:১৩ এএম says : 0
ARE TATE KI ??? VAROT TO BANGLADESHER KUDUM RASHTRO !! VAROTIO BLOOD BANGLADESHI DER BLOOD SAME !! VAROTIO BON RA BANGLADESHI DER HATE RAKHI BADHE !! ETA KI BANGLADESH BHULTE PARE ???
Total Reply(0)
Kamal Bhuiyan ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৫ এএম says : 0
যেহেতু ভারতের সম্যসা এখন একটু স্থিথিমীত, বাংলাদেশের উচিত মিলিটারি এ্যকশানে যাওয়া। মিলিটারি এ্যাকশন ছাড়া মিয়ানমারের সম্যসা সমাধানের নয়।
Total Reply(0)
Anm Mahfuz ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৬ এএম says : 0
যে ভারতের আপত্তির কারণে বাংলাদেশ সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেছে সেই ভারতও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নির্মূল অভিযানের বিরোধিতা করে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং, রাখাইনে তার কালাদান প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখতে সেদিকেই ঝুঁকে ছিল। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা গণহত্যার জন্য সারাবিশ^ যখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফর করে অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে তার পাশে থাকার বার্তা দেন।
Total Reply(0)
Nusrat Farhana ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৭ এএম says : 0
দক্ষিণ এশিয়ার বিষফোঁড়া গরুস্থান ছাড়া আর কে
Total Reply(0)
Tanweir Elahee ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৭ এএম says : 0
Of course India because this is their nature India is a cancer for south Asia
Total Reply(0)
রেজাউল করিম ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৭ এএম says : 0
দাদারা ছাড়া আর কারা হতে পারে
Total Reply(0)
Kamal Pasha Jafree ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৮ এএম says : 0
নিঃসন্দেহে ভারত।
Total Reply(0)
Jack Ali ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:২৫ এএম says : 0
If our beloved country ruled the by Law of Allah then no kafir country dare to point a finger towards us. O Allah rescue us from this ........ and Install a muslim leader who will rule our country by the Law of Allah.
Total Reply(0)
রোদেলা ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:৪৮ পিএম says : 0
লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং তিস্তা প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের প্রস্তাব ভারতীয়দের গায়ে জ্বালা ধরিয়েছে।
Total Reply(0)
মাহমুদ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:৫০ পিএম says : 0
তথ্যবহুল এই লেখাটির জন্য দৈনিক ইনকিলাব ও সৈয়দ ইবনে রহমত সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
ikram al husain ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:০৫ পিএম says : 0
ভারতের সাথে সম্পর্ক বয়কট করা হবে বাংলাদেশের জন্য বিরত্ব।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন