শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রতি ১০ মিনিটে বিশ্বে ১ জন আক্রান্ত হচ্ছে

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

জলাতঙ্ক একটি মরণব্যাধী। যা প্রাণি থেকে মানুষ ও প্রাণিতে সংক্রমিত হতে পারে। আমাদের দেশে মূলত কুকুর দ্বারা এ রোগটি সংক্রমিত হয়। এখনও বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে ১ জন এ রোগে আক্রান্ত হন। বছরের ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ। 

জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর, যার মাধ্যমে রোগটি শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যু দিবসকে স্বরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক নির্মূলে টিকাদান, পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ান’।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার টার্গেট ৩ দশমিক ৩ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এফএও এবং আইএলও প্রণীত গেøাবাল স্ট্রাটেজির লক্ষ্য হলো ‘০ বাই ৩০’ অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে কুকুর কামড়জনিত জলাতঙ্ক মুক্ত বিশ্ব। বৈশ্বিক কর্মকৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ‘জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মকৌশলের মাধ্যমে এই রোগটির বিরুদ্ধে জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর ফলে জলাতঙ্কজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২০০৯ সালে আনুমানিক দুই হাজার থেকে কমে ২০১৯ সালে সারাদেশে ২শ’তে নেমে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীর মহাখালীস্থ জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০৯ সালে ছিল ১৪৮ জন। ২০১৮ সালে ৬৮ ভাগ কমে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। জলাতঙ্ক প্রতিরোধে দেশে ৬৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকিসনের চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালে বিনামূল্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোগীরও বেশি টিকা পেয়েছে। যা ২০১৮ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৪০৯ এ উন্নীত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিডিসি সারাদেশে প্রায় তিন লাখ ভ্যাকসিন দেশের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতাল ও মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে প্রদান করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোন এলাকার শতকরা ৭০ ভাগ কুকুরকে ব্যাপক হারে টিকা দিলে ওই এলাকার কুকুরের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। ৩ বছরে পর পর তিন রাউন্ড টিকা দিলে কুকুর থেকে মানুষ বা কুকুর ও অন্যান্য প্রাণিতে সংক্রমণের হার শূন্যের কোটায় নেমে আসে-যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। সে হিসেবে এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক নির্মূলে টিকাদান, পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ান’ প্রতিপাদ্যটি বিজ্ঞান স্বীকৃত এবং খুবই বাস্তবসম্মত।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তারা জানান, করণীয় কর্মকৌশলের আলোকে ২০২২ সালের মধ্যে ন্যাশন এ্যাস এ পাবলিক হেলথ প্রোবলেম (প্রতি মিলিয়নে ১ জনের কম) জলাতঙ্ক নির্মূল এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সকল দেশিয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার সাথে কাজ করছে। এরই অংশ হিসাবে জলাতঙ্ক নির্মূলে ব্যাপক হারে কুকুর টিকাদান কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২০ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী ব্যাপকহারে কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলা সদর পৌরসভা ও ১০টি সিটি কর্পোরেশন এবং ৬০টি জেলার সকল উপজেলায় ১ম রাউন্ড, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, পাবনা, নীলফামারী জেলায় ২য় রাউন্ড এবং সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলায় ৩য় রাউন্ড টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩০টি কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪টি জেলায় প্রথম রাউন্ড ও ১৬টি জেলায় দ্বিতীয় রাউন্ড আরো আনুমানিক ৫ লাখ কুকুরকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে কুকুর কামড়জনিত জলাতঙ্ক মুক্ত বিশ্ব। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। যদিও কোভিড মহামারীর কারণে এ বছর দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। শিগগিরই আমরা কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। তবে আমরা নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবো এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন