শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আদালতে বিভীষিকাময় সেই রাতের বিবরণ

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ দুই গণধর্ষণকারী আটক সীমান্তে কড়া নজরদারি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ সেই বিভীষিকাময় রাতের বর্ণনা দিয়েছেন। গতকাল বেলা দেড়টার দিকে সিলেট মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নিলার কাছে উপস্থিত হয়ে তিনি ২২ ধারায় ঘটনার জবানবন্দি দেন। এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযানে গতকাল পর্যন্ত অভিযুক্ত ২ আসামিকে আটক করা হয়েছে। কোন আসামি যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বিজিবি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সোয়া তিনটার দিকে গৃহবধূর জবানবন্দি দেওয়া শেষ হয়। জবানবন্দিতে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন নির্যাতিত গৃহবধূ। এ সময় ওই তরুণীর সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য ও তার স্বামী উপস্থিত ছিলেন। সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য নির্যাতিত গৃহবধূকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টার থেকে আদালতে নিয়ে যান। পরে ২২ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। বিষয়টি জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

গণধর্ষণকারী ২ হোতা আটক
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণকারী ২ হোতাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল পৃথকভাবে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে (২৮) ও অর্জুন লস্কর (২৫)। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ধর্ষণের ঘটনার পর এমসি কলেজ ছাত্রাবাস থেকে পালিয়ে জকিগঞ্জে নিজের বাড়িতে যান অর্জুন। পরের দিন বিকেলে জকিগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেখান থেকে তিনি জকিগঞ্জের বাড়িতে এক ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। ভাইয়ের সঙ্গে একাধিকার তার যোগাযোগ করার তথ্য পায় গোয়েন্দা পুলিশ। সকালে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মাধবপুরের মনতলা এলাকায় পৌঁছায়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অর্জুনের অবস্থান শনাক্ত করে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মনতলা গ্রামে অর্জুনের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।

মাধবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর বলেন, অর্জুনকে আটকের বিষয়টি মাধবপুর থানাকে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে শুধু অবহিত করা হয়েছে। পুরো অভিযানটি পরিচালনা করেছে গোয়েন্দারা। অর্জুনকে আটকের পর সেখান থেকে সরাসরি সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে সিলেট জেলা গোয়েন্দা শাখার কর্তব্যরত একজন কর্মকর্তা বলেন, অর্জুন লস্করকে সিলেট এনে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে (২৮) সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত হয়ে ভারতে পালানোর সময় ভোর ছয়টার দিকে আটক করা হয়। সুনামগঞ্জের ছাতক থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ভোর ছয়টার দিকে সাইফুরকে আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সাইফুরকে আটক দেখানো হয়। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ছাতক থানা থেকে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মবেশে সাইফুর
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমান গ্রেফতার এড়াতে দাড়ি কামিয়ে ছদ্মবেশ ধরেছিলেন। তার মুখভর্তি দেড় ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা দাড়ি ছিল। গতকাল পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর দেখা যায় সাইফুরের মুখে দাড়ি নেই। দুদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানোর পর রোববার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে সাইফুরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে নিজের চেহারায় পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি। ধরেন ছদ্মবেশ। তার মুখে দাড়ি না থাকায় অবাক হন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশ জানায়, সাইফুরের মুখে লম্বা দাড়ি থাকলেও গ্রেফতার এড়াতে দাড়ি কেটে ফেলেন। চুলও ছোট করে করেন তিনি। তবে ছদ্মবেশ ধরেও রক্ষা পাননি সাইফুর। গ্রেফতারের পর মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় সাইফুরকে হস্তান্তর করা হয়।

নজরদারিতে সীমান্ত
গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সীমান্ত এলাকায় সর্তকবার্তা পাঠানোর পাশাপাশি সিলেট রেঞ্জের পুলিশ ও মহানগর পুলিশের সব থানায় ধর্ষকদের ছবি পাঠিয়ে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রামের বাড়িতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের একাধিক দল। ধর্ষকদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে মহানগর পুলিশের সাতটি দল বিভিন্ন ধাপে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া সিলেট বিভাগের সবগুলো থানা পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে সোর্সের মাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়েছে।

তদন্ত কমিটিতে সেই ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই নিরাপত্তা কর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকেই তদন্ত কমিটির সদস্য করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় আলোচনা-সমলোচনা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের কয়েকটি ব্লক দখল করে রেখেছিল ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। ২০১২ সালেও তিনি ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালে অন্য ছাত্রদের কক্ষ থেকে তাড়াতে গিয়ে ছাত্রাবাসটি পুড়িয়ে দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তখনকার সময়েও ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিনের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। এরপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Jabbar Ahmed ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
প্রথমেই কারা সমঝোতার চেষ্টা করেছিল? যারা সমঝোতার চেষ্টা করেছিল তাদের কি কখনোই আইনের আওতায় আনা হবে না? তারা কি আইনের চাইতেও বেশী ক্ষমতাবান এবং তাদেরই পশ্রয়ে এই ধর্ষন কান্ড ঘটেছে? যেহেতু ঘটনা যদি ৮টার আগের হয়, তাহলে রাত ১২টা পর্যন্ত কী হচ্ছিল? কেন পুলিশ ৮টায় প্রবেশের অনুমতি নিয়ে পরে সবাইকে জানাচ্ছে যে, রাত ১০টায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিল? কেন ধর্ষণের শিকার তরুণীর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে কালক্ষেপণ করা হয়েছে? অধ্যক্ষ রাত ৮টায় ঘটনা জানার পরও রাত সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে গেলেন কেন?
Total Reply(0)
Parvin Akter ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
কেমন বিচার হবে ধর্ষকদের তা পাবলিক ভালো করেই জানে,,দুনিয়াতে ছাড় পেলেও আখিরাতে ছাড় পাবে না,,সাথে দায়িত্ববানদেরও আসামীর কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে, যদি তাদের শাস্তিদানে নরম হন.... আল্লাহ্ সুবহা'নাহু ওয়া তা'আলা উত্তম বিচারক,,তিঁনি আল-কহহার: সম্পূর্ণ প্রভাববিস্তারকারী,,শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর.... #অভিযোগ গুলো সব আসমানি আদালতে জমা থাকুক....
Total Reply(0)
Sumaiya Choity ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২৫ এএম says : 0
ধরা হবে কিছুদিন বিচার হবে তারপর বিচার শেষ!! প্রাপ্য শাস্তি পাবে না কেউই
Total Reply(0)
Mohin Uddin ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
পুলিশ ভাই আপনার মাধ্যমে এদের কঠিন বিচার চাই জেন পাবলিকের সামনে ফাঁসি দেওয়া হয়।
Total Reply(0)
Daud Ibrahim ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
আমি অনেক বছর ধরে দেশের ভাইরে থাকি কিন্তু কোনো দেশে এই রকম ধর্ষন হয় না নারী নির ভয়ে গুরতে পারে রাত দিনে আর ভাইরের দেশে সটিক আইন বিচার করা হয়
Total Reply(0)
বাস্তবতা বড়ই কঠিন ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
আমরা ইতিপূর্বে অনেক দুর্নীতিবাজ খুনি ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করা দেখেছি কিন্তু প্রকৃত বিচার আজ পর্যন্ত পাইনি। শুধু গ্রেফতার করা হয় এবং মিডিয়াতে প্রচার করা হয় এ পর্যন্তই শেষ
Total Reply(0)
Shimul Islam ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
কিছুদিন আগে টংগীতে এক ধষককে রেললাইনে গুলি করা হয়েছিল সেভাবে নরপশু গুলোকে মারা হোক
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
দেশের সব নদী, বিল ও খালগুলোর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং দূষণবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযানের পর আবারও যাতে দখলের প্রক্রিয়া শুরু না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
Total Reply(0)
Kamrul Hasan ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:১৬ এএম says : 0
শুধু দরলেই হবেনা বিচার করতে হবে ।এমন বিচার করতে হবে যা দেখে আরো দশজন ভালো হয়ে যায়।
Total Reply(0)
MD Biplob Hossain ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:১৬ এএম says : 0
আল্লাহর কাছে বিচার চাই আল্লাহ ছাড়া এই বিচার কেউ করতে পারবে না
Total Reply(0)
Ripon Mia ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:১৬ এএম says : 0
বিচার নাই বিচার থাকলে এরকম অপরাধ করার সাহস কেউ করত না
Total Reply(0)
parvez ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:৩৫ এএম says : 0
এদেশের আইনজীবীরা কি বলতে পারেন না, " ধর্ষকদের পক্ষে আমরা কেহ দাঁড়াব না। " ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন