বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

চরম ভোগান্তিতে আমদানি-রফতানিকারকরা

সোনাহাট স্থলবন্দর সড়ক সংস্কারে ধীরগতি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার বিপাকে বন্দর ব্যবসায়ীরা

রফিকুল হাসান রনজু, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৬ এএম

ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দরগামী সড়কের বেহাল দশা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ ও বাংলাদেশ-ভারতের পণ্য আমদানি রফতানিকারকরা। দেশের ১৮তম স্থলবন্দটির সড়ক সংস্কার কাজে ধীরগতি ও অনিয়মে টানাবৃষ্টিতে খানাখন্দে ভরে গেছে সোনাহাট ব্রিজ থেকে স্থলবন্দরগামী ৩.৪৩ কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক।
জানা যায়, এডিপির অর্থায়নে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৪৪ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার ৮২৪ টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৪৩ কি.মি. দীর্ঘ সোনাহাট ব্রিজ থেকে স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কের কাজ শুরু হয় গত বছর ৫ ডিসেম্বর। গত ১০ মাসে সমাপনী ঢালাই হয়েছে মাত্র ২০০ গজ। সড়কটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ কুড়িগ্রামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লি.।
সরেজমিনে গেলে বন্দর ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, সড়ক সংস্কারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ধীর গতি ও চরম গাফিলাতির কারণেই স্থলবন্দরগামী সড়কটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই পণ্যবাহী ট্রাক গর্তে ফেসে যাচ্ছে। এতে বিকল হয়ে যাচ্ছে ট্রাকের ইঞ্জিন। তারা আরো জানায়, স্থলবন্দরগামী এই সড়কে প্রতিদিন প্রায় ২০০ ভারতীয় গাড়ি প্রবেশ করতো, কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে বর্তমানে আসছে ২০ থেকে ৩০টি। ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, অপরদিকে বন্দর ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাল্লাও ভারী হচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করলেও ৪/৫জন শ্রমিক আর ১টি ছোট্ট ঢালাই মেশিন দিয়ে কাজ করে কাজ এগিয়েছে মাত্র ২শ’ গজের মত। বিজিবি চেক পোস্টের পাশের দোকানদার রজব আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তার বেহাল দশার কারণে দোকানগুলোতে লোকজন আসতে পারছে না, ফলে বিক্রি কমে যাওয়ায় তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন ৪/৫জন করে শ্রমিক আর ১টা মেশিন দিয়ে যে গতিতে কাজ চলছে, এভাবে চলতে থাকলে পুরো রাস্তার কাজ শেষ করতে বছর লেগে যাবে।
ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার আবুল হোসেন ও খলিল শেখ বলেন, পণ্য বোঝাই ট্রাক কাদা কিংবা খানাখন্দে ফেঁসে গেলে গাড়ির অনেক যন্ত্রপাতি বিকল ও ভেঙে যায়, এগুলো মেরামত করতে দুই চার দিন সময় লেগে যায়। ফলে আমরা বাংলাদেশে ট্রাক নিয়ে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।
আমদানি ও রফতানিকারক ব্যাবসায়ী এরশাদুল হক ক্ষোভের সাথে জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়মে সড়কের এই বেহাল দশা। সড়কের ডাইভারশনের কাজ শুরু করলেও খোয়ার পরিমান কম দিয়ে বেশির ভাগ রাবিশ দিয়ে কাজ করায় রাস্তার এই করুন অবস্থা। এতে আমরা ক্ষাতিগ্রস্ত হচ্ছি।
আমদানি ও রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে সড়কের এই অবস্থা, আমরা বারবার সংশ্লিষ্টদের অবগত করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। ব্যবসায়ীরা এলসি করলেও রাস্তার দুরাবস্থার কারণে আনতে পারছে না মালামাল। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বন্দর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কিবরিয়া জলিল তুহিন এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমানে আসামে সহিংস অবস্থা বিরাজ করার কারণে এ বন্দরটি বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। সড়কের করুণ দশায় প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ায় ভারত থেকে গাড়ি কম আসছে। এতে বন্দর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কুড়িগ্রামের মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রা. লিঃ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে শ্রমিক সংকট এবং দফায় দফায় বন্যায় কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকুলে এলেই কাজ পুরোদমে শুরু করে যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার ব্যাপারে আমরা আন্তরিক।
এ প্রসঙ্গে সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আলী নুরায়ইন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়ে ঠিকাদারের সাথে কথা বলেছি, তারা শীঘ্রই বন্দরগামী সড়কটির কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন