শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আছে ৮০ হাজার বই পাঠক নেই একজনও

বরিশাল বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৬ এএম

বিভিন্ন ধরনের ৮০ হাজার বই সমৃদ্ধ বরিশাল বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবনটিতে এখন শুনশান নিরবতা। এখানে নেই কোন পাঠক, নেই জ্ঞান পিপাসুদের আনাগোনা। এমনকি গণগ্রন্থাগারটিতে বেশ কিছু সংখ্যক সম্মান ও স্নাতকোত্তর বিষয়ের রেফারেন্স বই থাকলেও তারও কোন পাঠক নেই। করোনা সঙ্কটের আগে হাতে গোনা কিছু পাঠকের আনাগোনা থাকলেও এখন তাও শূন্যের কোঠায়। বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের সামনে এর অবস্থান।
‘চলো গ্রন্থাগারে চলো, দেখি সম্ভাবনার আলো’ সেøাগান নিয়ে বরিশালে প্রতিষ্ঠিত বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবনটিতে রয়েছে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। কিন্তু কোন পাঠক নেই। নামি-দামি লেখক ও নিত্য নতুন লেখকদের আলোকিত বই রয়েছে বুক সেলফে। পাঠকদের ব্যবহারের জন্য চেয়ারগুলো রয়েছে টেবিলের ওপর সাজানো। ব্যবহার না করার কারণে কম্পিউটারগুলো নষ্ট হচ্ছে। একজন কর্মকর্তা ও কয়েকজন কর্মচারী প্রতিদিন কর্মস্থলে হাজিরা দিয়ে চাকরির নিয়ম রক্ষা করছেন।
গণগ্রন্থগার ভবনের বাইরে জরাজীর্ণ অবস্থা থাকলেও ভেতরে সবকিছু রয়েছে ফিটফাট। চার তলা ভবনটির প্রতিটি কক্ষে বুক সেলফে সাজানো রয়েছে নামি-দামি লেখকের গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশ-বিদেশের বই। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় শিশুদের জন্য গল্প, কবিতা ও জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞানভিত্তিক মেধা বিকাশের কোডিং ট্রয় ব্রিজ খেলার সরঞ্জামও রয়েছে এখানে।
বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার ফাইলসহ মোবাইল ফোন অপারেটর রবির সহযোগিতায় ইন্টারনেট যুক্ত কম্পিউটার ক্লাস রুমও রয়েছে। এসব এখানে বসে সহজেই ব্যবহার করার পরিবেশও রয়েছে। গত ১৪ বছরে এই গণগ্রন্থগারটিতে বিভিন্ন ধরনের ৮০ হাজার ১৩টি বই স্থান পেয়েছে। অথচ এখানে যেসব পাঠক আসেন তারা সকলেই পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে চাকরির সন্ধান করেন মাত্র। আর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী পাঠক আসেন যারা আসেন জুটি বেঁধে। শুধুমাত্র ভবনটি আনন্দে-ফ‚র্তিতে খেলাধূলার মাধ্যমে মাতিয়ে রাখে শিশু পাঠকরা। এখানে জ্ঞান বিকাশের মত যথেষ্ট পরিমাণ বই রয়েছে, শুধু প্রচার-প্রচারণার অভাবে বই প্রেমিকের সংখ্যা তেমন বাড়েনি।
নগরীর বিএম কলেজের বিপরীতে সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে পাঠকদের জন্য বই আনা হলেও এখানে শুধু সামান্য কিছু সংখ্যক কলেজ ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া তেমন কোন পাঠকের পা পড়েনি। শুধু তৃতীয় তলায় শিশুদের জন্য বই পড়ার পাশাপাশি তাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনের জন্য রাখা আছে কোডিং ট্রয় ব্রিজ খেলার সরঞ্জাম।
প্রায় ৮০ হাজার বই সমৃদ্ধ ৪ তলা বিশিষ্ট এ বিশাল গণগ্রন্থাগারটিতে পাঠক-সদস্য সংখ্যাও দুশ’রও কম। এখানে শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ পাঠকদের জন্য নাম মাত্র ফেরতযোগ্য জামানতের মাধ্যমে সদস্যপদ গ্রহণ করে বই সংগ্রহ ও পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক সুবিধা সমৃদ্ধ এ ভবনটিতে দেড়শ’ আসনের একটি মিনি অডিটোরিয়ামও রয়েছে। কিন্তু তার খবর নগরবাসীসহ বেশিরভাগ শিক্ষানুরাগী, সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানও জানে না।
জনবল সঙ্কটেও সরকারি এ গ্রন্থাগারটির অনেকটা বেহাল দশা। এখানে প্রধান নির্বাহীর পদটিতে একজন উপ-পরিচালকের নিয়োগের কথা থাকলেও আছেন সহকারী পরিচালক। সব মিলিয়ে ২২ জনের জনবল মঞ্জুরি থাকলেও আছেন ১৭ জন। তবে তার মধ্যেও ৫ জনকে অন্যত্র পদায়ন করা হয়েছে। ফলে ২২ জনের স্থলে মাত্র ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে কর্মরত।
গণগ্রন্থাগারের রেজিস্ট্রার জানান, গড়ে প্রতি মাসে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার পাঠকের আসা-যাওয়া রয়েছে। এ ব্যাপারে গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক খালিদ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ভবনের বাহিরটা জরাজীর্ণ। কিন্তু ভেতরের সকল কিছুই ঠিক আছে। ভবনের বাহিরটা সংস্কারের জন্য তহবিলের সংস্থান হয়েছে। ইতোমধ্যে গণপূর্ত অধিদফতর প্রাক্কলন তৈরির কাজ শুরু করেছে। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে শিগগিরই তারা সংস্কার কাজ শুরু করবেন।
তিনি আরও বলেন, এখানে বই পড়ার জন্য অত্যন্ত নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ রয়েছে। প্রচার-প্রচারণা একটু কম থাকার কারণেই হয়ত পাঠকের সংখ্যা আশানুরূপ নয়। তবে সামনে যাতে পাঠক বৃদ্ধি পায় তার সব উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন