শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এমসি কলেজের আতঙ্ক ছাত্রলীগের ওরা ৩ জন

ধর্ষণ-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ছাত্রবাস ছিল টর্চারসেল

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

তালে ছাত্রলীগ। কিন্তু জাতে তারা পাক্কা অপরাধি। রাজনীতির পদ-পদবীর ভারে তারা বেপরোয়া। ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এছাড়া রয়েছে মাথার উপর রাজনীতিক বড় ভাই তথা গডফাদার। সেকারনে ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করেই অপরাধের চাষ দীর্ঘ করেছে তারা। অবশেষে দীর্ঘ কুকর্ম ফাঁস হলো এক বালিকা বধূকে গণধর্ষণের মধ্যে দিয়ে। বলছি এ ঘটনার অন্যতম হোতা ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান, শেখ মাহবুবুর রহমান রনি ও রবিউল হাসানে কথা।

ছাত্রলীগের এই সোনার ছেলেরা একদিনেই ধর্ষক হয়ে উঠেনি। ধর্ষণ ঘটনার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসছে তাদের বেপরোয়া কর্মকান্ডের কু-কীর্তি। সাইফুর, রনি ও রবিউল ক্যাম্পাসে ছিল ক্ষমতার তাপে বেপরোয়া। শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী, নিজ দলের কর্মী ও কলেজের পাশর্^বর্তী টিলাগড় এলাকার ব্যবসায়ীরাও তাদের অব্যাহত হয়রানিতে হয়েছেন নাজেহাল। চুপ থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই তাদের। কারণ তারা ছাত্রলীগের নেতা। কোন ছাত্রীর প্রতি তাদের বদ খেয়াল গেলেই শুরু হতো ইভটিজিং ও নির্যাতন। নীরব থাকায় ছিল তখন প্রতিবাদের ভাষা। কারণ ক্যাম্পাসে কেবল ছাত্রলীগ। একক প্রভাবে জবাবদিহিতার উর্ধ্বে তারা। তাই বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে অনেক মেধাবী ছাত্রীর। ক্যাম্পাসে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কলেজে বেড়াতে আসা তরুণীদের ধর্ষণ ছিল নৈমিত্তিক কাজ। ক্যাম্পাসে আধিপত্য থাকায় দলের ‘বড় ভাই’দের কাছেও ছিল তাদের বিশেষ কদর। বালিকা বধূর স্বামী মাইদুল ইসলাম শাহপরান থানায় দায়েরকৃত মামলা শাহ মাহবুবুর রহমান রনির বিরুদ্ধে ৪৪ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের দুল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার সভাপতি সুনামগঞ্জ দিরাইয়ের রবিউল। সে তার সহযোগীদের নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়াত। আদাব সালাম না দিলে শিক্ষার্থীদের মারধর করে আহত করতো সে। শুধু তাই নয়, মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকা পেলেই নারী শিক্ষার্থীদের ওড়না ধরে টান মারা, মদ-ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, বিনা কারণে শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা, হোস্টেলে জোরপূর্বক বসবাস, মিল না দিয়ে বন্ধুবান্ধবসহ খাওয়া, হোস্টেলের সিট বিক্রিসহ নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন এই ধর্ষক রবিউল। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই ধরে নিয়ে মারধর করা হতো এবং এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হতো।

একই সাথে এম সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে হাজারো অভিযোগ। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ২/৩ জন ছাত্র হোস্টেল ছেড়ে যেত বাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া সিনিয়র কিংবা জুনিয়র তাদের কথার বাইরে গেলেই মারধর করত তারা। তাদের নির্যাতনের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পেতেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে কারণে প্রতিদিন বিকেলে চিরায়িতভাবে শত শত দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে। কিন্তু ক্যাম্পাসে কথিত শিক্ষিত হায়েনাদের বিচরণ যে এতোই বেপরোয় যে কোন দম্পতি বা প্রেমিকজুটিকে পেলে সাইফুর ও রনি তাদের সহযোগীদের নিয়ে চড়াও হতো প্রায়ই। আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করতো তারা। ছিনতাই করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতেরও ঘটনা ঘটেছে বহুবার। সন্ধ্যার পর বা রাতে ক্যাম্পাসে প্রেমিকজুগল পেলে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাইফুর-রনি চক্র তাদের তুলে নিত পাশর্^বর্তী ছাত্রাবাসে। সেখানে নিয়ে ধর্ষণ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। আত্মসম্মানের ভয়ে কেউই মুখ খুলতো না। রাতে টিলাগড়-বালুচর সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী লোকজনকে ছাত্রাবাসে ধরে এনে নির্যাতন ও ছিনতাই করতো তারা। এসব অপকর্মে সাইফুর ও রনির সহযোগী ছিল গণধর্ষণ মামলার আসামী অপর চার ছাত্রলীগ ক্যাডার তারেক, রবিউল, মাহফুজ ও অর্জুনসহ আর কয়েকজন। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসকে কেন্দ্র করে সাইফুর ও রনি গড়ে তুলে টর্চার সেল। হোস্টেল সুপারের বাংলো দখল করে থাকতো সাইফুর। ভয়ে অন্যত্র থাকতেন হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। হোস্টেলের নতুন ভবনের ২০৫ নম্বর কক্ষ ও বাংলাতে সাইফুরের নেতৃত্বে বসানো হয় ‘শিলং তীর জুয়া’র আসর।

এছাড়া প্রতিদিন রাতে বসতো মাদকের আসর। করোনা পরিস্থিতির কারণে হোস্টেল বন্ধ থাকায় নিজের দখলে থাকা হোস্টেলের রুমকে মাদক সেবন ও ইয়াবা ব্যবসার আখড়ায় পরিণত করে সাইফুর। গণধর্ষণের ঘটনার পর শুক্রবার রাতে সাইফুরের দখলে থাকা হোস্টেলের ২০৫ নম্বর রুম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে হয়েছে মামলাও। ২০১৩ সালে কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় চাঁদাবাজি শুরু করে সাইফুর ও তার সহযোগীরা।

এতে বাধা দেওয়ায় নিজদলের কর্মী ছদরুল ইসলামের বুকে ছুরিকাঘাত করে সাইফুর। গুরুতর আহত ছদরুলকে সিলেট থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। পরে নেতাদের চাপে ছদরুল বাধ্য হয় আপোষ করতে হয় তার মামলা। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, কলেজে মেয়েদেরকে প্রেমের প্রস্তাব দিত শেখ মাহবুবুর রহমান রনি। ছাত্রীদের মোবাইল নম্বরও জোর করে আদায় করতো সে। প্রস্তাবে রাজি না হলে সে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করতো তাদের। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রায় আড়াই বছর আগে ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে রনি।

কিন্তু দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় সে। শাহ রনি ও তার সহযোগী ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি তারেক নিজেদেরকে র‌্যাব-পুলিশ পরিচয় দিত বলেও অভিযোগ রয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাস্তা থেকে লোকজন অপহরণ করে ছাত্রাবাসে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া সাইফুর ও রনি চক্রের হাতে ক্যাম্পাসে একাধিকবার সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। কখনো কখনো তারা হুংকার ছেড়ে বলতো, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ, টিলাগড়ে ছাত্রলীগ, থানায় ছাত্রলীগ, চুপ থাক শালারা। তাদের কথায় চুপ ছাড়া উপায় ছিল না ভূক্তভোগীদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Ekra Rexona ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৭ এএম says : 0
এমন ভাবে কিছু কিছু অপরাধ মিডিয়াতে, নেটে আসে তারপর পুলিশ ঠিক আসামি তারাতারি ধরে।। কিন্তু বিচার যদি দ্রুতোগতিতে হতো তাহলে অপরাধ কিছু কমতো মানুষের মনে শান্তি আসতো।।
Total Reply(0)
Kamal Hossen ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৭ এএম says : 0
গ্রেফতার করেই দ্রুততম সময়ে মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, তাহলে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করবে,খারাপ কাজ করার আগে ১০০বার চিন্তা করবে। নয়তো দিন দিন কারোও (মেয়ে,মা,বোন,বউ) নিরাপদ নয়
Total Reply(0)
Adhora Rahman ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৮ এএম says : 0
জানি অনেকের হয় তো চুলকানি হবে তবু বলছি ইসলামের কিছু শাস্তি এমন আছে যা মানুষের কাছে খুবই অমানবিক মনে হবে তবে পৃথিবীতে শৃঙ্খল রক্ষার জন্য আল্লাহর আইনের উপরে অন্য কোন আইন কখনোই দুনিয়ায় শান্তি আনতে পারে না... ধর্ষণের শাস্তি যদি শিরচ্ছেদ করা হত তাহলে এমন অপকর্ম করার আগে দশবার ভাব তো...!
Total Reply(0)
Rafiqul Islam ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৮ এএম says : 0
ধন্যবাদ জানাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, মানুষরূপী হিংস্র নরপশু প্রধান কে গ্রেপ্তার করবার জন্য। অন্যদেরকেও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হোক । ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে গণ ধর্ষণকারী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, অবৈধ অস্ত্র রাখা সহ টেন্ডারবাজিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি ।
Total Reply(0)
Gausul Ajom Ajom ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৯ এএম says : 0
এদের দৃষ্টান্ত মুলক সাস্তির ব্যবস্থা করা হক,এমন কিছু করা হক ,যাতে সবাই দেখে এমন করার সাহস না পায় কেও
Total Reply(0)
Môhâmmâd Âbû Sâêêd ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৯ এএম says : 0
গ্রেফতার করেছে শুনে খুশি হয়ে লাভ নেই! বিচার হবে না তা জানি। পারলে এদেরকেও বন্দুক যুদ্ধে হত্যা করেন । শুধু শুধু জেলে রেখে আটার রুটি খাওয়ানোর মানে হয়না!
Total Reply(0)
Mahfuz Ahmed ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৫০ এএম says : 0
ধর্ষকদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সময়ের দাবী!
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৪৯ এএম says : 0
এদের সঠিক বিচার হবে কিনা সেটা নিয়ে এখনও মানুষ সন্দিহান
Total Reply(0)
sk raza ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৫৩ পিএম says : 0
এই দেশ অনেকে ভাল
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন