এমসি কলেজ হোস্টেলে গণধর্ষণে জড়িত ও প্রধান আসামী সাইফুরের জন্য লজ্জায় পুড়ছেন বালাগঞ্জবাসী। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রধান আসামী সাইফুরের বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের দক্ষিণ চান্দাইরপাড়া গ্রামে। সবার মূখে একই কথা, ‘সাইফুর কলঙ্কিত করেছে বালাগঞ্জকে। তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।’ উপজেলার সচেতন মহলের দাবী, ঐতিহ্যবাহী চান্দাইরপাড়া গ্রামবাসী সাইফুরকে সামাজিকভাবে বয়কটের সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে জানিয়ে দেয়া।
জানা যায়, বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইর পাড়া (চকগাঁও) তাহিদ উল্লাহ’র ছেলে এম. সাইফুর রহমান সব সময়ই বেয়ারা টাইপের ছিল। পড়াশোনায় অমনযোগিতার জন্য একাধিকবার তার সেশন লস হয়। চান্দাইরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী থাকাকালেও সে উশৃংখল জীবন যাপন করতো। তা জন্য তার মা বাবাসহ এলাকার মুরব্বিরা বিব্রতবোধ করতেন। লম্পট টাইপের সাইফুর ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ডিগ্রি কলেজে একবার মারপিটের শিকার হয়। এরপর সে ছাত্রলীগের একটি বলয়ে সক্রিয় হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। সাইফুরের কারণে তার পরিবারকেও একাধিকবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সচেতন অভিভাবক জানান, তিনি একদিন স্কুলে গিয়ে দেখতে পান স্কুলের বাহিরে বসে তামাশা করছে। শিক্ষকদের বিষয়টি জানালে তারা বলেন কি আর করবো, এটা চরম বেয়াদব!
সাইফুরের বাড়িতে তার বৃদ্ধ পিতা রয়েছেন। কোন আয়ের পথ নেই। অন্যদের সহযোগিতায় চলে তার বাবার সংসার। তার গ্রামের মানুষেরা দু:খ নিয়ে বলেন এলাকায় তার মূখ দেখতে চাননা। তারা বলেন, দুইজন আওলিয়ার নামে এই গ্রামের নাম। এখানে রয়েছে পাশাপাশি স্কুল মাদরাসারসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চান্দাইরপাড়া শিক্ষাপল্লি হিসেবে পরিচিত। এ প্রতিষ্টানগুলো গ্রামের সুনাম ছড়িয়ে দেয়ারপাশাপাশি অনেক গুণিজন উপহার দিয়েছে। কিন্তু কুলাংকার সাইফুর আমাদের এলাকার ইতিহাস ঐতিহ্যে কলংক লাগিয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, ‘সাইফুর খুবই উগ্র স্বভাবের ছিল। তার বেপরোয়া চলাফেরায় আতংকে থাকতো শিক্ষার্থীরা। তার অত্যাচারে অতিষ্ট ছিল ছাত্রীরা। অনেকে তার নির্যাতনের শিকার হয়ে মান সম্মানের ভয়ে মূখ খুলেনি। বিষয়গুলো কলেজ ক্যাম্পাসে জানাজানি হলেও কোন বিচার হয়নি। তালামীযে ইসলামিয় ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরদের সাথে অনেকবার সমস্যা হলেও অধ্যক্ষ এর সুষ্ট বিচার করেননি বলেও জানা যায়।
সাইফুর সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নানা ভাবে অত্যাচার করা এবং মেয়েদের ইভটিজিং করা ছিল তার স্বভাব চরিত্র। জোর করে মেয়েদের নাম্বার নিয়ে রিলেশন তৈরি করতো। অনেক শিক্ষার্থী তার ইভটিজিং এর জন্য কলেজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। চুরি-ছিনতাই ছিল তার প্রতিদিনের রুটিন। এমসি কলেজে যত ছিনতাই হতো তার গডফাদার ছিলো এই সাইফুর।
সাংবাদিক আবুল কাশেম অফিক বলেন, এমসি কলেজ যিনি দিয়েছেন তার বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলায়। এতে আমরা গর্ববোধ করি। কিন্তু বালাগঞ্জের কুলাংগার সাইফুর উপজেলাবাসীর জন্য কলংক হয়ে দাড়িয়েছে। তার সুষ্ট বিচার করা হোক।
চয়ন পাল বলেন, শুধু দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নয় ধর্ষনকারীর পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট করা দরকার এবং অপরাধীদের ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড টানিয়ে ধর্ষনকারীর বাড়ির পরিচয় প্রদান করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালজুড় ইউনিয়ন পরিসদের চেয়ারম্যান আনহার মিয়া বলেন, আমাদের গৌরবদীপ্ত ইতিহাসে'র শতবর্ষের ঐতিহ্য এম সি কলেজ ছাত্রাবাসে গনধর্ষনকারী নরপশুদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে স্বামীসহ বেড়াতে যান। এসময় ছাত্রলীগকর্মী এম. সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে স্বামী ও স্ত্রীকে পার্শ্ববর্তী কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন