বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টির কার্যক্রম বন্ধ

মোদি সরকারের সমালোচনায় ‘শাস্তি’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

অধিকৃত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মুসলিম নির্যাতনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতে ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে আসছিল আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সেই ‘অপরাধে’ ভারতে তাদের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেয় মোদি সরকার। বাধ্য হয়ে দেশটিতে সব কাজকর্ম বন্ধ করে দিল আন্তর্জাতিক এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

গতকাল একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে সংস্থা জানিয়েছে, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে সরকার। সেটা আমরা জানতে পেরেছি গত ১০ সেপ্টেম্বর। বাধ্য হয়ে সংস্থার সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে।’ ভারতের সব কর্মীকেও বাদ দিয়ে সমস্ত প্রচার ও গবেষণার কাজ বন্ধ করে দিতে তারা বাধ্য হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এ জন্য মোদি সরকারকেই দায়ি করেছে তারা। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়া, মুসলিম-বিদ্বেষ, দিল্লিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের মতো ঘটনায় মোদি সরকারের সমালোচনা করার জন্যই তাদেরকে এই মাসুল দিতে হল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতে কোনও সংস্থা যদি বিদেশি অনুদান নিতে চায় তবে বিদেশি অনুদান (নিয়ন্ত্রণ)আইনে নথিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক। নয়াদিল্লির অভিযোগ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তা করেনি। আবার কোনও অলাভজনক সংস্থা ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের চ্যানেলে বিদেশি অর্থ নিতে পারে না। অ্যামনেস্টি সেটাই করেছে বলে অভিযোগ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের। তাদের বক্তব্য, সেই কারণেই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অ্যামনেস্টির বক্তব্য, ‘ভারত সরকারের ক্রমাগত মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে অপদস্থ করার অপচেষ্টার এটা শেষ নিদর্শন। প্রমাণ হয়নি এমন অভিযোগ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতেই সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।’ দেশের সমস্ত আইন কানুন মেনে তারা কাজকর্ম করেন বলেও দাবি করেছেন সংগঠনের কর্মকর্তারা।

গত বছরের আগস্টে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছিল উপত্যকায়। মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, ইন্টারেন্ট, কেবল টিভি-সহ যাবতীয় পরিষেবা বন্ধ করে রেখেছিল কেন্দ্র। তাতে জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আবার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সময়েও একই অবস্থান ছিল সংস্থার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, এই সব কারণেই অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ। সেই দিকে ইঙ্গিত করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অবিনাশ কুমার বলেন, ‘দু’বছর ধরে ভারতে অ্যামনেস্টির কাজকর্মে বাধাদানের চেষ্টা চলছে। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সরকারের নানা অনৈতিক ও অমানবিক কাজকর্মের সমালোচনা করার জন্যই ইডি-সহ সরকারের নানা সংস্থার মাধ্যমে হেনস্থা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে দিল্লি সংঘর্ষে তার আগে জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। অ্যামনেস্টি শুধু অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। তার জন্য অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ-এর মতো ব্যবস্থা নেয়া অনুচিত।’

জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশপাশি ভারত থেকে মুসলমানদেরকে তাড়াতে ‘সিএএ’, ‘এনসিসি’র মতো বিতর্কিত বিল এনেছে মোদি সরকার। দেশটিতে মুসলিম নির্যাতনের ঘটনাও সম্প্রতি অনেক বেড়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যামনেস্টির মতো বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য লড়াই করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভারতে কাজ বন্ধ করলে আন্তর্জাতিক মহলে তার খারাপ প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। সূত্র : টিওআই, টাইমস নাউ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Muhammad Sojan Ahamed ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
ভারত এমন একটা রাষ্ট্রের দীকে যাচ্ছে যাদের দেখলে মানুষের রাষ্ট্র মনে হবে না।
Total Reply(0)
Abdullah Al Mamun ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
Khomotar dapot.
Total Reply(0)
Olivia! ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৪৯ এএম says : 0
Great news for Bangladesh, now the time to taking death penalty from Bangladesh such as organizations, who work on human rights, women rights, children rights, NGOs and their speakers. Allahuagbar!!
Total Reply(0)
asif ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৩৯ এএম says : 0
জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশপাশি ভারত থেকে মুসলমানদেরকে তাড়াতে ‘সিএএ’, ‘এনসিসি’র মতো বিতর্কিত বিল এনেছে মোদি সরকার। ---- who told such kind or rubbish? This is baseless judgement.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন