ইইউ’র দেশগুলোতে প্রবেশের লক্ষ্যে বসনিয়ার জঙ্গলে অবস্থান নিয়েছেন শতশত অভিবাসন প্রত্যাশী। ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী বসনিয়ান জঙ্গলে সন্ধান মিলেছে এই দলটির। বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অভিবাসন প্রত্যাসীরা এই দলে রয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিবাসন আইন কঠোর করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি বাস্তবায়নের আগেই দ্রুতগতিতে এইসব অভিবাসন প্রত্যাশীরা ইইউ’র দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
২০১৫-১৬ সালে বলকান অভ্যুত্থানের পর থেকে ট্রানজিট রুট হিসেবে দারিদ্র্যপীড়িত বসনিয়াকে এড়িয়ে চলেছে অভিবাসনপ্রত্যাসী ও শরণার্থীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বসনিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চল মহা সমারোহে শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে রয়টার্সের প্রতিবেদন।
বসনিয়ান সীমান্তরক্ষী পুলিশ কর্মকর্তা আজুর জিভিক বলেন, অনেকেই রাবার নৌকায় করে ড্রিনিয়া নদী ধরে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন এবং খরস্রোতা নদীতে ডুবে যাওয়ার ঘটনাও অনেক। তবু তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ইউরোপে প্রবেশের।
বসনিয়া সীমান্তের পরিত্যক্ত ভবনটিতে আশ্রয় নেওয়া অভিবাসীদের মধ্য থেকে ৫০ জন মঙ্গলবার রাতে ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে ঢুকতে রওনা হয়। কিসের স্বপ্নে তারা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলছেন তা বোঝা গেল একজনের হর্ষধ্বনিতে। বললেন, 'ইতালি, আসছি তোমার কাছে।'
ইদানীং বসনিয়া-হার্জেগোভিনা হয়ে ক্রোয়েশিয়া অতিক্রম করে স্লোভেনিয়াও হয়ে উঠেছে ইউরোপে ঢোকার রুট। মধ্য ইউরোপের এই তিনটি দেশ পাশাপাশি এই দেশগুলো থেকে অড্রিয়াটিক সাগর পাড়ি দিলেই ইতালি। বসনিয়ার জঙ্গলে যাদের অবস্থানের খবর রয়টার্স দিয়েছে, তাদের পরবর্তী গন্তব্য ক্রোয়েশিয়া বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে ভেলিকা ক্লাদুসা শহর সংলগ্ন বনে একটি পরিত্যক্ত কারখানা ভবনে তারা আশ্রয় নিয়ে আছে। এই মানুষগুলোর মধ্যে বাংলাদেশী ছাড়াও পাকিস্তান, মরক্কো, আলজিরিয়ার নাগরিক রয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে। বুধবার সকালে রয়টার্সের সাংবাদিক অনেককে দেখেছেন আগুন ধরিয়ে শীত পোহাতে। সেই আগুনে রান্নার কাজও চলছিল। রাতে থাকার জন্য পলিথিন দিয়ে তাঁবু খাটিয়েছেন তারা।
এই অভিবাসী তরুণরা বসনিয়ার বিহাক ও ভেলিকা ক্লাদুসা শহরের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত বলে জানিয়েছে রয়টার্স। বসনিয়ান কর্তৃপক্ষ অভিবাসন প্রত্যাসীদের এই দলটিকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। একইসঙ্গে তারা শহরের বেশ কয়েকটি অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে। ১৯৯০ সালের যুদ্ধের পরে বসনিয়া অভিবাসীদের বরাবরই স্বাগত জানিয়ে এসেছে। কিন্তু সম্প্রতি তারা অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার নীতিতে কঠোরতা অবলম্বন করতে যাচ্ছে এবং অভিবাসীদের বোঝা দাবি করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিগতভাবে বিভক্ত বসনিয়ার সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার নেতৃত্বাধীন অঞ্চল বরাবরই অভিবাসী অভ্যর্থনায় অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে। ফলে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বসনিয়ার সারজেভো এবং ক্রাজিনা সীমান্তে আশ্রয় নেওয়ার দিকেই ঝুঁকেছেন। সূত্র : রয়টার্স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন