বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিলেটে গণধর্ষন মামলার সন্দেহভাজন আসামী রাজন পরিবারের অভিশাপ, অপরাধের চাষী আইনুল

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২০, ৯:৪৮ পিএম

এক বালিকা বধূকে নৃশংসভাবে পাশবিক নির্যাতন করেছে সিলেট ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মী। দেশের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ঘটে এ কলঙ্কময় ঘটনা। এরপর র‌্যাব পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয় এজহারনামীয় ৬ আসামী। এরমধ্যে প্রধান আসামী ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর ও অর্জুন লস্কর আদালতে তথ্য প্রদান করে ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত রাজন ও আইনুদ্দিন। এজাহারের বাইরে এ দুই আসামীকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় র‌্যাব। সন্দেহভাজন এ দুই আসামীও এখন ৫দিনের রিমান্ডে। এ দুই আসামী গ্রেফতারের পর দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত রাজন সিলেট বিয়ানীবাজারের চারখাই ইউনিয়নের নাটেশ^র গ্রামের এক চৌধুরী পরিবারের সন্তান। তার এক চাচা বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। দীর্ঘদিন থেকে নগরীর হাতিমবাগ এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে তার পরিবার। পিতৃহীন এ পরিবারের ৩ ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। তার ছোট ভাই সাজন চৌধুরী বছর ১০ পূর্বে আত্মহত্যা করে মারা যায়। খুব চুপচাপ স্বভাবের রাজন চৌধুরী ্ওরফে রাজু ভীতু প্রকৃতির। সে ২০১১ সালে নগরীর হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। তারপর একাদশে ভর্তি হয় সরকারী কলেজে। সেখানে যুক্ত হয় ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে। ছাত্রলীগ রাজনীতির বড় ভাইদের সাথে সখ্যতার পাশাপাশি অনেক নেতার আপনজন হয়ে উঠে রাজন। তার মধ্যে দিয়ে বেপরোয়া রূপে নিজকে জাহির করে। ক্রমশ অপরাধ ও অপরাধির সাথে গড়ে তোলে বন্ধন। সেই গরমে নিজ পরিবারের সদস্যদের উপর মানসিক নির্যাতন চালাতো রাজন। তার কারনে অশ্রুসিক্ত থাকতেন মৃত পিতা সহ জীবিত মায়ের চোখ। কিন্তু চুপচাপ ছেলেটি পাড়ার কাউকে দেখলে মাথা নিচু করে চলে যেতো। কিন্তু মনের ভেতরে আড়াল করে রাখা ভয়ংকর চরিত্র প্রকাশ পায় গণধর্ষণ ঘটনা পরবর্তী গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে।

তার অপকর্মের প্রধান সহযোগী মো: আইনুদ্দিন । অশিক্ষিত আইনুদ্দীন সিএনজ্ওি চালাতো । শহরতলীর মেজরটিলার ভাটিপাড়া এলাকায় তার বসতবাড়ি। কুখ্যাত মজিদ ডাকাতের দুর-সর্ম্পকের নাতি সে। সেকারনে অপরাধের সাথে তার নাড়ির বন্ধন। ভিটামাঠি বিক্রি করে নগরীর টিলাগড় সংলগ্ন গোলাপবাগে ভাড়াবাসায় বাস করতো আইনুদ্দীন। টাউট-বাটপারী তার নেশা-পেশা। এলাকার মানুষ ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে তাকে চিনে জানে। তাদের সাথে আনোগোনও দেখতেন তারা। ডিবি পুলিশের সাথে সর্ম্পকের কারনে বিভিন্ন স্তরের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্েযদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে।

সেকারনে এলাকার মানুষকে নানা ভাবে ফাঁসিয়ে হয়রারী করতো। ২০১৯ সালে শিবগঞ্জের এক ব্যবসায়ীকে এক মোবাইল ঘটনায় হয়রানী করে। ্ওই ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশের অফিসেও নিয়ে য্ওায়া হয়। মাদক গ্রহন ও বিক্রির সাথে এখন জড়িত হয়ে পড়ে। সেই ব্যবসার সূত্রে কলেজ কেন্দ্রিক ছাত্রলীগে নেতাকর্মীদের সাথে তার যোগাযোগ। অসামাজিক কার্যকলাপেও সে সিদ্ধ হস্ত। মেয়েদের টার্গেট করে বাগে এনে ব্যবহার করতো বিভিন্নভাবে।

একাধিক সূত্র জানায়, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষিতা বালিক বধূও সাথেই ছিল তার যোগাযোগ। আইনুলের ফোন পেয়ে এমসি কলেজ গেটে নামেন ও তরুণী এ ব্যাপারে নির্যাতিতার স্বামী ও এই মামলার বাদী গণমাধ্যমকে জানান, গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার আগে স্ত্রী সহ প্রাইভেটকারযোগে হযরত শাহপরান (র.) এর মাজার জিয়ারতে যান তিনি। জিয়ারত শেষে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে মাজার থেকে রওয়ানা দেন। এসময় তার স্ত্রীর মোবাইলে একটি কল আসে। মোবাইল আলাপের পর পর তার স্ত্রী বলেন, ‘আমার একজন বন্ধু দেখা করার জন্য কল করেছে। তার সঙ্গে এমসি কলেজের গেটে দেখা করবো।’ এতে সম্মতি জানান তিনি। এরপর এমসি কলেজের মূল গেইটের সামনে গাড়ি থামান তিনি। নববধূর স্বামী জানান, স্ত্রীর সেই বন্ধুর নাম আইনুল। তিনি দেখা করতে আসার পর আমি পাশের দোকানে সিগারেট কিনতে যাই। দোকান থেকে এসে গাড়িতে উঠার সময় ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর আমাকে ডাক দিয়ে আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বাজে কথা বলতে থাকে। এসময় আমি প্রতিবাদ করলে তারা জোর করে গাড়িতে তোলে আমাদের ছাত্রাবাসে নিয়ে আসে। সেখানেই স্বামীকে আটকে রেখে গাড়ির মধ্যে স্ত্রীকে গণধর্ষণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় তারা। এদিকে, এ ঘটনায় এজাহারভূক্ত আসামিদের সাথে সন্দেহভাজন হিসেবে আইনুলকেও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ধারন করা হচ্ছে, এ এলাকায় অপরাধের চাষী আইনুল। তার মাধ্যমে বিপথগামী হচ্ছে শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন উঠতি যুবক। সেকারনে তার মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে অপরাধ জগতের অনেক অজানা তথ্য। সেই সাথে গণধর্ষনের আগে-পরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার খবরাখবর।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রাজনীতিক নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় থেকে হেন কোন অপরাধ নেই যেখানে হাত নেই আইনুলের। সে প্রভাব দেখা স্থানীয় মানুষদের। কারন তার পেছনে শাসক দল ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সর্ম্পক। কিন্তু সে আড়ালে কারন তার নিজস্ব কোন রাজনীতিক পরিচয় নেই, তবে অসৎ রাজনীতিক নেতাকর্মীদের তল্পিবাহক আইনুল। ধর্ষণ মামলার এজাহারে তার নাম না আসাও একটি বিস্ময়। কেন বাদ দিয়ে এজাহার দাখিল করছেন নির্যাতিতার স্বামী সেই প্রশ্ন্ সচেতন মহল সহ এলাকাবাসীর মনে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন