মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারত থেকে এসেছে পচা গোশত

চট্টগ্রাম বন্দরে তোলপাড়

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রাম বন্দরে ভারত থেকে আসা পঁচা মহিষের গোশত নিয়ে তোলপাড় চলছে। দুর্গন্ধে বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বন্দর ইয়ার্ডে। গোশতভর্তি কন্টেইনারের আশপাশেও যাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা দুর্গন্ধের সাথে সেখানে মাছি উড়ছে ভনভন করে। এতে বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, এক শ্রেণির অসাধু আমদানিকারক নিম্নমানের ভারতীয় মহিষের গোশত এনে বাজারজাত করছে। এতে একদিকে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। অন্যদিকে দেশীয় প্রাণিসম্পদ খাতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, রাজধানী ঢাকার ১১১, বীর উত্তম সিআরদত্ত রোডের ইগলু ফুডস লিমিটেড ভারত থেকে ৪০ ফুট কন্টেইনারে প্রায় ২৮ মেট্রিক টনের মতো মহিষের গোশত নিয়ে আসে। কন্টেইনারটি খালাসের দায়িত্ব পায় আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার মক্কা-মদিনা ট্রেড সেন্টারের ১২ তলায় অবস্থিত মেসার্স কর্ণফুলী লিমিটেড নামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান। গোশতভর্তি কন্টেইনারটি জাহাজ থেকে নামিয়ে ইয়ার্ডে রাখার পরপর সেখান থেকে চরম দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এতে সেখানে কর্মরত বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী এবং পরিবহন চালক-সহকারীদের শ্বাস বন্ধের উপক্রম হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, ভারত থেকে আসা মহিষের গোশতের ওই কন্টেইনারটি বন্দরের ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের ফ্রিজার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমদানি করা গোশত পঁচে গেছে। তিনি জানান, ভারত থেকে মহিষের গোশত আমদানি হচ্ছে। এসব চালান খালাস করতে হলে আমদানিকৃত গোশত জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এমন সনদ নিতে হয়। ইদানিং প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে এমন সনদ দেয়া বন্ধ থাকায় আমদানিকারকরা আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন। শুল্ক পরিশোধ করে এসব আমদানি গোশত তারা ছাড় করে নিচ্ছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, মহিষের গোশতভর্তি কন্টেইনারটি রেফার ইয়ার্ডে রয়েছে। মাসখানেক আগে কন্টেননারটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সেটি খালাস কিংবা অপসারণ না করলে নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেটি নিলামে তুলবে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের করার কিছু নেই। তবে পরিবেশ দূষণ যাতে না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে ভারত থেকে আসা পঁচা গোশতের বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতরের নজরে নেয়া হয়। খবর পেয়ে অধিদফতরের কর্মকর্তারা বন্দর ইয়ার্ডে গিয়ে কন্টেইনারটি পরিদর্শন করেন। তারা সেখান থেকে পঁচা গোশতের দুর্গন্ধ বের হওয়ার প্রমাণ পান। কন্টেইনারটি ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ করার প্রমাণও পান পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এরপর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে পরিবেশ অধিদফতরে তলব করা হয়। শুনানি শেষে আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা পরিবেশ ক্ষতিপূরণ আরোপ করা হয়।

পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মো. নুরুল্লাহ নুরী ইনকিলাবকে বলেন, ভারত থেকে মহিষের গোশত আমদানি করে তা পরিবেশ সম্মত উপায়ে অপসারণ না করে পরিবেশ দূষণের দায়ে ইগলু ফুডস ও মেসার্স কর্ণফুলী লিমিটেডকে ক্ষতিপূরণ আরোপ করা হয়। এর পাশাপাশি কন্টেইনার খালাসে তিনটি নির্দেশনা দেয়া হয়। এগুলো হল-পরিবেশ সম্মত উপায়ে কন্টেইনার পরিষ্কার করতে হবে। পঁচা গোশত এমনভাবে খালি করতে হবে যাতে কোন প্রাণী তা ভক্ষণ করতে না পারে। এসব পঁচা গোশত থেকে মাটি, পানি ও বায়ু যাতে দূষিত না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে মহিষের গোশত আমদানি কয়েক মাস বন্ধ থাকে। সম্প্রতি হোটেল-রেস্তোঁরা খুলে যাওয়ায় ফের আমদানি শুরু হয়েছে। গোশত আমদানিতে প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে কোয়ারেন্টাইন সনদ দেয়া বন্ধ থাকায় আমদানিকারকেরা আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এসব পণ্য খালাস করছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রায় এক বছর আগে কতিপয় আমদানিকারক ভারত থেকে নিম্নমানের মহিষের গোশত আমদানি শুরু করেন। শুরুতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর আমদানির ব্যাপারে সনদ দিলেও পরবর্তীতে দেশীয় প্রাণিসম্পদের সুরক্ষা এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে সনদ দেয়া থেকে বিরত থাকে। এরপরও আমদানিকারকদের কেউ কেউ আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে এসব গোশত খালাস করে নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ ধরনের গোশত আমদানি নিরুৎসাহিত করার পক্ষে। তাছাড়া আমদানিকৃত এসব গোশতের গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। হোটেল-রেস্তোঁরায় ভোক্তা ও গ্রাহকদের অজান্তেই নিম্নমানের এ ধরনের গোশত খাওয়ানো হচ্ছে। এতে ভোক্তাদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, আমদানি করার পরও বাজারে চাহিদা না থাকায় অনেক চালান খালাস নেয়া হচ্ছে না। এসব চালান নিলামে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন