মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইসলামী শিক্ষা না থাকায় সমাজে ধর্ষণ বেড়েই চলছে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২০, ৩:৩৭ পিএম

ইসলামী শিক্ষা ও অনুশীলন না থাকার কারণেই সমাজে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ বেড়েই চলছে। সিলেটের এম সি কলেজের ছাত্রবাসে গণধর্ষণের ঘটনা আমাদের সমাজিক মর্যাদাকে ম্লান করে দিয়েছে। ইসলামী শিক্ষার অভাবে আজ সন্তানদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। সমাজ দেশ রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে হলে ইসলামী জ্ঞানার্জন, কৃষ্টিকালচারের চর্চা এবং অনুশীলনের বিকল্প নেই। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদগুলোতে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ইসলামের শিক্ষা ও অনুশীলন না থাকার কারণেই সমাজে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ বেড়েই চলছে। সিলেটের এম সি কলেজের ছাত্রবাসে ধর্ষণের ঘটনা আমাদের সমাজিক মর্যাদাকে মøান করে দিয়েছে। পেশ ইমাম বলেন, আগামী ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিশু ও শিক্ষক দিবস। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানদের প্রতিপালনে মা-বাবার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকাও কম নয়; পড়া লেখার পাশাপাশি সন্তানদের মানবিক মূল্যবোধ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ পূর্ণমাত্রায় বিকশিত করার লক্ষ্যে শিক্ষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ইসলামী শিক্ষার অভাবে আজ সন্তানদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। আল্লাহপাক সকল সন্তানদের উত্তম আদর্শবান হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন!
রাজধানীর চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আজ জুমার বয়ানে বলেছেন, পবিত্র কুরআনের সূরা ফাতহের ২৯ নং আয়াতের শুরুতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, " মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতশীল"। যেহেতু হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)এর পর পৃথিবীতে আর কোন নবী-রাসূল আসবেন না, যেহেতু উম্মতের জন্য তিনি পবিত্র কুরআনের সাথে সাথে স্বীয় সাহাবীনগণকেও নমুনা হিসেবে রেখে যাবেন তাই পবিত্র কুরআনও সাহাবায়ে কেরামের গুণাবলী বর্ণনা করে মুসলমানদেরকে তাঁদের অনুসরণ-অনুকরণে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই আয়াতেও তাঁদের গুণাবলীর বর্ণনা এসেছে। এই গুণাবলীর মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখিত গুণটি হল তাঁরা কাফেরদের মোকাবেলায় কঠোর এবং নিজেদের বেলায় পরস্পর সহানুভূতিশীল ছিলেন। কাফেরদের প্রতি তাঁদের কঠোর মনোভাব সর্বক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে। সেই সাথে নিজেদের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহানুভূতি ও ভালবাসার উজ্জল দৃষ্টান্তও তাঁরা স্থাপন করেছেন। বর্তমান যুগে আমাদের মাঝে সাহাবায়ে কেরামের এই ঈমানী গুণের বড় অভাব রয়েছে। খতীব বলেন, বন্ধুত্ব ও শত্রুতা কোনটাই নিজের জন্য না হয়ে আল্লাহর জন্যই হতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে "যে ব্যক্তি তার ভালবাসা ও শত্রুতা আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে ন্যস্ত করে দেয় সে তার ঈমানকে পূর্ণতা দান করে"।
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জুমার বয়ানে বলেন, মানুষ যদি আল্লাহ তায়ালার ওলী তথা প্রিয়পাত্র হতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত করতে হবে। সহিহ আল বুখারীতে হাদিসে কুদসিতে এসেছে যে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত করতে থাকে আমার নৈকট্য লাভের জন্য, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসি অর্থাৎ তাকে আমার ওলী বানিয়ে নেই। যখন তাকে আমি ভালবাসি তখন আমি তার কান, চোখ, হাত, পা নিয়ন্ত্রণ করি। অতপর (অবস্থা এমন হয়ে যায় যে) সে যদি আমার কাছে কোন প্রার্থনা করে তখন আমি তা অবশ্যই কবুল করি। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু থেকে আশ্রয় চায়, আমি তাকে আশ্রয় দেই।
নফল ইবাদতের দ্বারা কিয়ামতে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন যখন বান্দার ফরজ ইবাদতে ঘাটতি দেখা দিবে তখন আল্লাহ তা’য়ালা ফেরেস্তাদেরকে বলবেন, দেখতো আমার বান্দার কোন নফল ইবাদত আছে কিনা? অতপর তা দ্বারা তার ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। এভাবে সকল ইবাদতের ঘাটতি নফল দ্বারা পূরণ করে বান্দাকে জান্নাতে দেয়া হবে।
পেশ ইমাম বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন বার রাকাত নামাজ নিয়মিত আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে ঘর বানান হবে। আর তা হলো জোহরের নামাজের আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, ঈশার পরে দুই রাকাত ও ফজরের পূর্বে দুই রাকাত।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ফজরের পূর্বের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু থেকে উত্তম।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, এই দুই রাকাত নামাজ আমার কাছে সমগ্র পৃথিবী থেকে উত্তম। জোহরের পূর্বের চার রাকাত নামাজ তাহাজ্জুদের নামাজের সমকক্ষ। আদম (আ.), নূহ (আ.), ইবরাহীম (আ.), মুসা (আ.), ঈসা (আ.) সকলেই এই নামাজ আদায় করতেন। হাদিস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি আসরের আগে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে নিস্পাপ বানিয়ে দেন এবং জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।
মাগরিবের পরে ছয় রাকাত আওয়বীনের নামাজ আদায় করলে বার বছরের নফল ইবাদতে সাওয়াব তাকে দান করা হয় এবং তার পাপরাশি যদি সমুদ্রের ফেনা পরিমাণও তাও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর যে, সুন্নাত নামাজ আদায় করা হয় তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। উসুলবিদগন বলেন, যে আমল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম জীবনে সর্বদাই আদায় করেছেন এবং জীবনে একবার কি দুইবার তা তরক করেছেন তাকে সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ বলে। কিতাবুল ফিকহি আলাল মাজাহিবিল আরবায়া কিতাবে আছে যে, সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আমল না করলে কিয়ামতের দিন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পাবে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ইলিয়াস বিন নাজেম ২ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৪৫ পিএম says : 0
ইনকিলাবকে ধন্যবাদ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন