শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

করোনাকালে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের সঙ্কট

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২০, ১২:২৭ এএম

মানুষের বাকস্বাধীনতা এবং স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র মুখ্য ভূমিকা পালন করে। মানুষের সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, নিজের মতামতকে স্বাধীনভাবে তুলে ধরা। সব মতামত যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, এমন নয়। দ্বিমতও থাকে। তবে গণতন্ত্র এই মত-দ্বিমতকে সমন্বয় এবং শ্রদ্ধার মাধ্যমে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। মুলত সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করার সুন্দরতম একটি নীতি হচ্ছে গণতন্ত্র। হাজার বছর ধরে মানুষের মতামতকে শ্রদ্ধা জানানোর এই গণতন্ত্র সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে আসছে এবং দেশে দেশে সরকার একে ধারণ করে শাসন ব্যবস্থা চালাচ্ছে। বিশ্বের বহু দেশ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো দেশে গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশ রয়ছে, কোনো কোনো দেশে খন্ডিত রূপে রয়েছে। বিশ্বে গণতন্ত্রের পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক, রাজতান্ত্রিক এমনকি একনায়কতন্ত্রেরও অস্তিত্ব রয়েছে। এসব শাসনব্যবস্থার মধ্যে গণতন্ত্রই সর্বাধিক জনপ্রিয়। কারণ হচ্ছে, গণতন্ত্র মুক্তভাবে সাধারণ মানুষের কথা বলা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকে নিশ্চিত করে। অন্য কোনো তন্ত্রে এ সুযোগ কম। রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্রে এ সুযোগ নেই বললেই চলে। এসব তন্ত্রে রাজার কথাই শেষ কথা। ভুল হোক বা শুদ্ধ হোক, তার কথা মেনে চলতে হয়। ফলে গণতন্ত্রের সূচনা লগ্ন থেকে স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ গণতন্ত্রকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নীতি হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে। বিশ্বের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোও গণতন্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা মেনে নিয়েছে এবং এ নীতি অবলম্বন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক রীতিনীতি যেন কিছুটা হলেও হোঁচট খাচ্ছে। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর গণতন্ত্র নাজুক হয়ে পড়ছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের সর্বাধিক পরিচিতি থাকলেও এসব দেশের গণতান্ত্রিক ধারা যেন ম্রিয়িমান হতে চলেছে। গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে। এর কারণ, দেশগুলোর রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা নিযুক্ত তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একনায়কতান্ত্রিকতার দিকে ধাবিত। গণতান্ত্রিক ধারায় জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হলেও তাদের মধ্যে এক ধরনের গোয়ার্তুমি দেখা দিয়েছে। তারা জনগণের মতামতের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। জবরদস্তিমূলক আচরণ করছে।

দুই.
বিশ্বে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারত। মনে করা হয়, এ দেশগুলোতে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সবচেয়ে বেশি মানা হয়। তবে দেশগুলোর গণতন্ত্র এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-এর ডেমোক্রেসি ইনডেক্স সূচকে দেখা যায়, ১৬৭ টি দেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ২৫ এবং ভারতের ৫১। অন্যদিকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যের অবস্থান ১৪। অথচ যেসব দেশের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না, সেসব দেশ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় শীর্ষে রয়েছে। সূচকের শীর্ষ দশে পর্যায়ক্রমে রয়েছে, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক ও কানাডা (যৌথভাবে), অস্ট্রেলিয়া এবং সুইজারল্যান্ড। এ দেশগুলোতে পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বজায় রয়েছে। সূচকটি প্রকাশিত হয়েছে চারটি ক্যাটাগরিতে। এগুলো হচ্ছে, পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রু টিপূর্ণ গণতন্ত্র, হাইব্রিড গণতন্ত্র এবং কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন ব্যবস্থা। পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে ২৪টি, ত্রু টিপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের মধ্যে ৫৭টি, হাইব্রিড গণতন্ত্রের মধ্যে ৩৯টি আর কর্তৃত্বপরায়ণ দেশের মধ্যে রয়েছে ৫৪টি। বাংলাদেশ রয়েছে হাইব্রিড গণতন্ত্রের মধ্যে এবং অবস্থান ৮০ তে। কর্তৃত্বপরায়ণ দেশের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে জর্ডান ও কুয়েত। এ ধারার শাসন ব্যবস্থায় বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য এবং আশে-পাশের দেশগুলো রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, পুর্ণ গণতান্ত্রিক, ত্রু টিপূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং হাইব্রিড গণতান্ত্রিকে দেশের মধ্যে ১২০টি দেশ রয়েছে। অর্থাৎ এসব দেশে কম-বেশি গণতন্ত্র রয়েছে। বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা এই সূচক থেকে ধারণা পাওয়া যায়। সূচক অনুযায়ী, এখনো যেকোনো শাসন ব্যবস্থার চেয়ে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতিই বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ আস্থাশীল। যেসব দেশের গণতন্ত্র ত্রু টিপূর্ণ কিংবা হাইব্রিড অবস্থায় রয়েছে, সেসব দেশের মানুষ পূর্ণ গণতন্ত্রের জন্য কোনো না কোনোভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। দেশগুলোর শাসন ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে ধারণ করে প্রবর্তিত হলেও গণতন্ত্র বিকাশের ক্ষেত্রে মূলত ক্ষমতাসীনরাই অন্তরায় হয়ে আছে। তারা গণতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের ক্ষমতায় রাখতে নানা ধরনের ছল-চাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের মনোভাবই হচ্ছে, গণতন্ত্রের মোড়কে থেকে যে কোনোভাবে ক্ষমতায় থাকা। গণতন্ত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের মূল প্রক্রিয়া যে নির্বাচন, তাতে কারচুপি এবং ভোটাধিকার হরণ করে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে যেনতেনভাবে তারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। ত্রু টিপূর্ণ ও হাইব্রিড গণতন্ত্র যেসব দেশে বলবৎ, সেসব দেশের ক্ষমতাসীনদের অনেকেই বিতর্কিত নির্বাচন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছে। এমনকি যেসব সরকার পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে, ক্ষমতায় গিয়ে তারা কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব ধারণ করছে। এমন সরকার আমাদের এই উপমহাদেশেও রয়েছে। ভারতের কথাই যদি ধরা হয় তবে দেখা যাবে, দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে পুরোপুরি কর্তৃত্বপরায়ণ আচরণ করছে। গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান হলেও দেশটির সরকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের সমান দৃষ্টিতে দেখছে না। এখানে মুসলমানরা চরম নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে। এমনকি দেশ থেকে মুসলমানদের বিতাড়নের মতো নিবর্তনমূলক আইনও করেছে দেশটির সরকার। ফলে বিশ্বব্যাপী দেশটির গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার যে সুনাম ছিল, তা বিতর্কের মুখে পড়েছে। এজন্য দেশটির গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা দায়ী নয়, দায়ী রাষ্ট্র পরিচালনায় নিযুক্ত শাসক শ্রেণী। ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রের মোড়কে একনায়কতান্ত্রিক শাসন পরিচালনা করছে। বলা যায়, পূর্ণ গণতন্ত্রের দাবীদার দেশটির সরকার তার সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করছে না। বরং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নিপীড়ন-নির্যাতন, হত্যা এবং বিতারণের মাধ্যমে নির্মূলীকরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে। দেশটিকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে মনোযোগ দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারাকে পিষ্ট করছে।

তিন.
করোনা বিশ্বে শুধু মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপরই অভিঘাত হানেনি, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়ও আঘাত হেনেছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অধীন ছোট-বড় এবং প্রভাবশালী দেশগুলোতে গণতন্ত্রের অবনমন দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি হয়ে উঠেছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে তার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই পুরো বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তার বক্তব্যের কারণে দেশটির গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ট্রাম্প এমন সময় এ বক্তব্য দিয়েছেন, যখন আগামী ৩ নভেম্বর দেশটির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, তিনি (ডোনাল্ড ট্রাম্প) কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, এ ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে পারছেন না। নির্বাচনে পরাজিত হলে আগে দেখতে হবে আসলে কী ঘটেছে। ফল দেখেই বলতে পারব ক্ষমতা ছাড়ব কিনা। ট্রাম্প বলেন, তার বিশ্বাস মহামারীর সময় ডাকযোগে বর্ধিত ভোট না হলে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো প্রয়োজনই হতো না। তার এমন জবাবে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির নেতৃবৃন্দ ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ক্ষুদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, ট্রাম্পের এ বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের চিরায়ত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পরিপন্থী। দেশটিতে গণতান্ত্রিক উপায়ে অবাধ নির্বাচন হয় এবং নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প এর ব্যত্যয় ঘটাতে চাচ্ছেন। তিনি ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ। তার এমন আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে। দেশটির আগামী নির্বাচন নিয়ে সর্বশেষ জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন ৭ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। ট্রাম্প বিগত চার মাসের জরিপে বাইডেনের চেয়ে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে। অর্থাৎ জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের সম্ভাবনা বেশি। বাইডেনেই এই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই ট্রাম্পের মধ্যে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। গোয়ার্তুমি চরিত্রের অধিকারী ট্রাম্প তা মানতে নারাজ। তিনি চাচ্ছেন, যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে। এক্ষেত্রে নির্বাচন না হলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে তার দল এবং বিরোধী দল সমবিভ্যহারে বলেছে, নির্বাচনে পরাজিত হলে ট্রাম্পকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরও ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়তে না চাইলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী দিয়ে নামানো হবে। অবশ্য রিপাবলিকান পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ট্রাম্পের এ কথা চূড়ান্ত নয়। আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীই শপথ গ্রহণ করবেন। দেখা যাচ্ছে, করোনা মানুষের জীবনের জন্য যেমন প্রাণঘাতী হয়ে আছে, তেমনি কোনো কোনো দেশের সরকারকে একনায়কতান্ত্রিক হয়ে উঠতে প্রেরণা জুগিয়েছে। করোনাকে তারা একটি উছিলা হিসেবে নিয়েছে। তারা দেখাতে চাচ্ছে, করোনা মোকাবেলা এবং জনগণের অত্যন্ত নাজুক সময়ে তাদের সরকারই যথেষ্ট। সরকার একাই সব সামাল দিচ্ছে। এজন্য আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য ট্রাম্প প্রাণপণে চাচ্ছেন, যে করেই হোক করোনার একটি ভ্যাকসিন অক্টোবরের মধ্যে বাজারে আনতে। তার বদ্ধমূল ধারণা, এই ভ্যাকসিন আনতে পারলে তার নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সহজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ করোনা এবং এর ভ্যাকসিনকে একটি উসিলা হিসেবে নিয়ে গণতান্ত্রিক দেশের অনেক সরকার একক কৃতিত্বের দাবিদার হতে চাইছে। এই কৃতিত্বের দাবিদার হতে গিয়েই তাদের মধ্যে একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী ৫০টির বেশি দেশের জাতীয় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার প্রধানদের মধ্যে ক্ষমতা না ছাড়ার মনোভাব সৃষ্টিসহ কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, গণতন্ত্রের মূলে রয়েছে যথাসময়ে নির্বাচন করা এবং সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। করোনা এর মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তা শাসক শ্রেণীর জন্য শাপেবর হয়ে উঠেছে। করোনার কারণে বিরোধী দল ও মতের লোকজনের কর্মকান্ড মুক্তভাবে চালাতে না পারা এবং শাসক শ্রেণীর নানা অপকর্মের বিরোধিতা করতে না পারায় তারা অনেকটা নির্ভার ও টেনশনমুক্ত অবস্থায় রয়েছে। এই টেনশনমুক্ত অবস্থাই তাদেরকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণও দেখছে, সরকার যত ভুল-ত্রু টি করুক না কেন, করোনা মোকাবেলায় সে ছাড়া মাঠে আর কেউ নেই এবং তাকেই এ কাজ করতে হচ্ছে। ফলে সরকারের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া তাদের কিছু করার থাকছে না। এ সুযোগে কোনো কোনো দেশের সরকার গণতান্ত্রিক ধারা থেকে সরে কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার অভিলিপ্সা জাগিয়ে দিয়েছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে। কোনো কোনো সরকার করোনার উছিলায় বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ভিন্ন মতকে সংকুচিত করে ফেলেছে। পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে চলেছে।

চার.
করোনা যেমন বিশ্বের অনেক দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছে, তেমনি অনেক সরকারকেও নড়বড়ে করে দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, করোনা পরবর্তী বিশ্বে রাজনীতির এক নতুন ধারার সূচনা হবে। এতে অনেক দেশের সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে। কারণ, করোনার সময়ে সরকারগুলোর মধ্যে যে একনায়কতন্ত্রসুলভ আচরণ দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে মানুষ তার জবাব দেবে। এতে অনেক দেশের সরকারের গদি উল্টে যেতে পারে। তখন মানুষ করোনাকালে সরকারের আচরণ নিয়ে ভাবার ফুরসত পাবে। বিচার করার সুযোগ পাবে, দুঃসময়ে সরকার তাদের জন্য কি করেছে এবং কার্যকরভাবে পাশে ছিল কিনা। তবে করোনাকে উপলক্ষ করে শাসক শ্রেণী যেভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরছে এবং পরবর্তীতে তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সম্মান করে যথাযথভাবে দেশ পরিচালনা করবে কিনা, কিংবা উপযুক্ত সময়ে স্থগিত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে কিনা সেটাই প্রশ্ন।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন