বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

অনন্য এক শাসককে হারাল আরব বিশ্ব

শেখ সাবাহ আল-সাবাহর মৃত্যু

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:১৩ এএম

কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-সাবাহ’র মৃত্যুতে উপসাগরীয় অঞ্চল এক প্রকৃত ক‚টনীতিবিদকে হারাল। স্বস্তিকর প্রভাব সৃষ্টিকারী শেখ সাবাহ’র সর্বশেষ ভ‚মিকা ছিল একজন আমির হিসাবে। তবে তার দীর্ঘতম ভূমিকা ছিল একজন ক‚টনীতিক হিসাবে যা তাকে জনপ্রিয় করেছিল। ২০০৬ সালে সিংহাসনে আরোহণের আগে শেখ সাবাহ আল সাবাহ কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে কয়েক দশক অতিবাহিত করেছিলেন। কুয়েতকে তার বৃহত্তম প্রতিবেশী সউদি আরবের আওতায় আনার পরিবর্তে তিনি বর্তমানে ৫০ লাখেরও কম জনসংখ্যার একটি ছোট দেশকে উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত করতে সহায়তা করেছিলেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৯১ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

শেখ সাবাহ্র জন্ম এক অন্য কুয়েতে, যা অচিরেই ভেঙে পড়া মুক্তোর ব্যবসার উপর নির্ভর করতো। নয় বছর পর আবিষ্কার হওয়া তেল কুয়েতকে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশে রূপান্তরিত করে। ১৯৬৩ সালে তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন এবং ৪০ বছর ধরে এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৯০ সালে কুয়েত দখল করে নেন ইরাকি শাসক সাদ্দাম হুসেন। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোট কুয়েতকে সাদ্দামের দখল মুক্ত করায় আমেরিকার সাথে তার দীর্ঘকালীন বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। জুলাই মাসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমেরিকান বিমানবাহিনীর বিমান তাকে চিকিৎসার জন্য মিনেসোটার মায়ো ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিল।

কুয়েতকে দখল মুক্ত করার যুদ্ধটি বহুপাক্ষিকতার প্রতি তার বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছিল। শেখ সাবাহ ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত ছয় সদস্যের একটি উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের অন্যতম স্থপতি ছিলেন। যদিও সংস্থাটি কোনও শক্তিশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট হয়ে ওঠার পরিবর্তে শুধু বুলি সর্বস্ব রয়ে গিয়েছিল, তবুও শেখ সাবাহ এটিকে রক্ষা করতে আগ্রহী ছিলেন। ২০১৩ সালে এর তিন সদস্য সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং বাহরাইন চতুর্থ সদস্য কাতারের উপর অবরোধ আরোপ করলে, তখন এতে কুয়েত অংশ নিতে অস্বীকার করেছিল এবং শেখ সাবাহ এই বিরোধের মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিলেন।

সম্ভবত ক‚টনীতিটি একটি ইতিবাচক বিকল্প ছিল। কারণ এটি না করলে ঘরোয়া রাজনীতি অশান্ত হয়ে উঠতে পারতো। উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলির মধ্যে অনন্য কুয়েতের নিরেট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি দারুণ সংসদ রয়েছে। আইনবিদদের সাথে বিরোধের কারণে শেখ সাবাহ এটিকে একাধিকবার বিলীন করেছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, তেলের স্বল্প দামের কারণে কুয়েতের অর্থনীতিতে একটি ফাটল ধরেছে। তাই শেখ সাবাহএক বাজেটের সমস্যাগুলির মুখোমুখি হতে হয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত শুধুমাত্র সরকারী সেক্টরের বেতন দেওয়ার জন্য ট্রেজারিতে এখন নগদ রয়েছে। তারপরেও আমির শেখ সাবাহ একটি জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে রয়ে গেছেন। ২০১৫ সালে যখন জিহাদীরা কুয়েত সিটির একটি শিয়া মসজিদে বোমা হামলা চালায় এবং ২৭ জনকে হত্যা করে, তখন তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সান্ত¡না জানাতে ঘটনাস্থলে ছুটে গেছিলেন, যা এঅঞ্চলের দাম্ভিক শাসকদের মধ্যে বিরল এক ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ।

কুয়েত এবছর শাসক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় উপসাগরীয় দেশ। ওমানের সুলতান কাবুস গত জানুয়ারীতে মারা যান। উভয়ই এঅঞ্চলে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরনীয়, যা তাদের স্বাধীনভাবে বিদেশ নীতি অনুসরণ করার স্বাধীনতা দিয়েছিল। সুলতান কাবুসের মতো শেখ সাবাহও ইরানের সাথে চুক্তি করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ক‚টনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তাদের মৃত্যুর সাথে উপসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য আরও বিঘিœত হল এবং তা নতুন তরুণ ও গোঁয়াড় শাসকদের দ্বারা সউদি আরব এবং ইউএএর হাতে চলে যাবে। সবথেকে বেশি প্রয়োজনের সময়টিতেই উপসাগর তার সবচেয়ে কার্যকর ক‚টনীতিককে হারাল। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন