শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

লামার রক্তে দিয়েই জয় হবে করোনা!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২০, ৪:৫৫ পিএম

ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে গোটা বিশ্বে জরুরি ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস জয়ের অসংখ্য চেষ্টা চলছে। দক্ষিণ আমেরিকার একটি প্রাণী ‘লামা’ এ ক্ষেত্রে মানুষকে সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে।

সম্প্রতি, গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণার স্বার্থে এক লামা শাবকের শরীর থেকে সংগ্রহ করা রক্তে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পেয়েছেন। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে জন্মের কারণে লামা শাবকের নাম রাখা হয়েছে ‘উইন্টার’। মলিকিউলার ভাইরোলজিস্ট হিসেবে সাভিয়ে সেলেন্স বলেন, ‘লামার রক্তের রহস্য হলো অ্যান্টিবডি। সেই অ্যান্টিবডি অত্যন্ত ছোট, কাঠামোও খুব সহজ। মানুষের তুলনায় গঠন অনেক সরল। তবে সহজ-সরল হলেও এই অ্যান্টিবডি অত্যন্ত শক্তিশালী। বেশ কার্যকরভাবে ভাইরাসের মোকাবিলা করতে পারে।’

নিজের মলিকিউলার ভাইরোলজিস্টদের টিমসহ সাভিয়ার সেলেন্স সাফল্যের সঙ্গে লামা ও মানুষের অ্যান্টিবডির মধ্যে স্থিতিশীল যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন। সেই কৌশলের ফলে মানুষের শরীর কোষ ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে না। সাভিয়ে সেলেন্স বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘লামার অ্যান্টিবডি যেটা করে তা হলো, এটি করোনা ভাইরাসের শীর্ষ অংশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। তখন ভাইরাস আর মানুষের কোষে ডকিং করতে, অর্থাৎ যুক্ত হতে পারে না। ফলে কোনো সংক্রমণ ঘটে না। ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে ওঠে।’

সাভিয়ে সেলেন্স তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছেন, যেগুলি শ্বাসনালীকে আক্রান্ত করে। করোনা মহামারির সূচনা থেকে তাঁর ঘুম প্রায় লোপ পেয়েছে। ১৫ সদস্যের টিম নিয়ে তিনি ল্যাবেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন। সেলেন্স মনে করেন, ‘লামার সামান্য রক্ত থেকে বিশেষ এই অ্যান্টিবডি তৈরির কোষ বের করা কঠিন কাজ। সেগুলির মধ্য থেকেও আবার ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতাশালী কোষ বেছে নিতে হয়।’

গবেষণাগারে অসংখ্য পরীক্ষার পর হ্যামস্টারের উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। ওষুধ তৈরির লক্ষ্যে চলতি বছরের শেষে মানুষের উপরও পরীক্ষা চালানো হবে। সাভিয়ে সেলেন্স বলেন, ‘কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি প্রবেশ করানোই আমাদের লক্ষ্য। এর মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মানুষের সাময়িক রক্ষাকবচ হিসেবেও এটি প্রয়োগ করতে চাই।’

শিল্পক্ষেত্রে বড় আকারে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করা সম্ভব হলে সেটি হবে সমাজে পরোক্ষভাবে টিকাদান কর্মসূচির মতো উদ্যোগ। সেলেন্স বলেন, ‘চারিদিকে চাপের মুখে আমি ও আমার সহকর্মীরা চালিত হচ্ছি। সঙ্গে বৈজ্ঞানিক কৌতূহলও কাজ করছে। কীভাবে আমরা এই ভাইরাস জয় করতে পারবো? আমাদের লামার অ্যান্টিবডি কি সত্যি এত কার্যকর? আমরা সেটা প্রমাণ করতে চাই। তাই আমরা বাড়তি পরিশ্রম করছি।’ গবেষণার ফলাফল সত্যি বেশ সম্ভাবনাময়। সবকিছু ঠিকমতো চললে আগামী বছরই লামার এই অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বাজারে এসে যাবে।

গোটা বিশ্বের করোনা গবেষকদের কাছে সেরা তারকা হয়ে উঠবে ‘উইন্টার' নামের এই আশ্চর্য লামা। লামার মালিক কুন ফানমেখেলেন বলেন, ‘এই প্রাণী ও তার স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদান করা আমার কাছে সবচেয়ে জরুলি বিষয়। প্রকৃতি আমাদের সব কিছু দিতে পারে। উইন্টার সেরা আদর্শ হিসেবে তা দেখিয়ে দিচ্ছে। আমাদের শুধু সেটা শিখতে হবে।’ সত্যি এমন ওষুধ সফল হলে উইন্টার অবশ্যই আরও খোরাক পাবে বলে ধরে নেয়া যায়। সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন