বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

আঞ্চলিক সংঘাতের শঙ্কা

আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৬ এএম

আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার বিরোধ অনেক পুরোনো। হঠাৎ করেই বাইরে বের হয়ে এসেছে ছাইচাপা আগুনের হলকা। তাতে পানি ঢালতে এক হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াও। তুরস্ক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে আজারবাইজানকে। দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এমতাবস্থায় আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার চলমান যুদ্ধ আঞ্চলিক সংঘাতে মোড় নেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
গত সোমবারও আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার বাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়েছে। যুদ্ধের সম্মুখভাগ এলাকার পাশাপাশি জাতিগত আর্মেনীয় অধ্যুষিত অঞ্চল নাগরনো-কারাবাখের আঞ্চলিক রাজধানী স্টেপানাকার্টেও ভারী কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়। অন্যদিকে আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গাঞ্জাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। এর আগে রোববারও এই শহর আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। আর্মেনিয়ার প্রতি সরাসরি সমর্থন রাশিয়া ও বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলোর। আজারবাইজানের পক্ষে তুরস্ক।
পাহাড়-পর্বতময় কারাবাখ অঞ্চলের কেন্দ্রে অবস্থিত স্টেপানাকার্ট শহর। আঞ্চলিক এই রাজধানীর ওপরে গত শুক্রবার থেকে গোলাবর্ষণ চলছে। আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের গাঞ্জা শহরের পাশাপাশি বেলাগান, বারদা ও টারটার শহরে গোলাবর্ষণ করেছে আর্মেনিয়ার বাহিনী। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের উপদেষ্টা হিকমেত হাজিয়েভ এক টুইটার বার্তায় অভিযোগ করেন, আর্মেনিয়ার লোকজন ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকাতেও হামলা করছে। রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার আরও ২১ জন যোদ্ধা নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে মোট ২২৩ যোদ্ধার মৃত্যুর খবর এল।
অন্যদিকে কারাবাখভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টার (গ্রিনিচ মান সময় রাত আড়াইটা) দিকে নতুন করে গোলাবর্ষণ শুরু করে আজারবাইজানের বাহিনী। মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ভারী কামানের গোলা পড়ার পর একের পর এক বিস্ফোরিত হচ্ছে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ধ্বংসাবশেষ।
কেন এই সংঘাত?
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সর্বশেষ এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে গত ২৭ সেপ্টেম্বর। এর আগে গত ১২ জুলাইয়েও এক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু এ সংঘাতের ইতিহাস কয়েক দশকের পুরোনো। ককেশাস অঞ্চলের এই দুই দেশই ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ।
বিবিসির খবরে বলা হয়, দুই দেশের সংঘাতের মূলে ওই নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল। এলাকাটি জাতিগত আর্মেনীয় অধ্যুষিত। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় ভোটাভুটিতে অঞ্চলটি আর্মেনিয়ার সঙ্গে থাকার পক্ষে রায় দেয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। সেই যুদ্ধ থামে ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে। এরপর থেকে এলাকাটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের সমর্থনে আর্মেনিয়ার সরকার। আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যস্থতায় দশকের পর দশক আলোচনা হলেও শান্তি চুক্তি অধরা থেকে গেছে।
আর্মেনিয়ার বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী খ্রিষ্টান। অন্যদিকে তেলসমৃদ্ধ আজারবাইজান মুসলিম-অধ্যুষিত। প্রতিবেশী তুরস্কের সঙ্গে আজারবাইজানের সম্পর্ক নিবিড়। আর আর্মেনিয়ার পক্ষে আছে রাশিয়া। যদিও দেশটির সঙ্গে আজারবাইজানের সম্পর্কও ভালো।
আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নেয়ার আশঙ্কা
চলমান সংঘাতে এরই মধ্যে ২৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বেসামরিক নাগরিক। যুদ্ধ এখনই থামাতে যৌথভাবে আহŸান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। তবু পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ নেই।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে বিরোধ মেটাতে ১৯৯২ সালে গঠিত হয় ওএসসিই মিনস্ক গ্রæপ। এর বর্তমান কোÐচেয়ার ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। গ্রæপটি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, এই সংঘাত এখনই থামাতে হবে। কোনো প্রকার পূর্বশর্ত ছাড়াই যুদ্ধবিরতির আহŸান তাদের। তবে কোনো পক্ষ থেকেই এখন পর্যন্ত কার্যকর সাড়া নেই।
মূলত আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার এই যুদ্ধ আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা বাধিয়েছে তুরস্কের ভ‚মিকা। দেশটি প্রকাশ্যে আজারবাইজানের পক্ষ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ওই যৌথ আহŸান প্রত্যাখ্যান করতেও দেরি করেনি আঙ্কারা।
আর্মেনিয়া বলে আসছে, এই সংঘাতে তুরস্ক সরাসরি জড়িত। তুর্কি যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যে আর্মেনিয়ার একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভ‚পাতিত করেছে। তুরস্ক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কাবারাখের সঙ্গে সরাসরি সীমান্ত রয়েছে ইরানের। বৃহস্পতিবার আজারবাইজানের একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভ‚পাতিত করেন কারাবাখের যোদ্ধারা। সেটি পড়ে ইরানের সীমানায় গিয়ে। এ অবস্থায় ইরানেরও এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, এএফপি ও বিবিসি।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন