শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চক্রের মূল হোতা স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান গ্রেফতার

মেডিক্যালের প্রশ্নপত্র ফাঁস : জড়িত কয়েক কোচিং সেন্টার-চিকিৎসক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান আব্দুস সালাম প্রেস থেকে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বের করতেন। এরপর তারই খালাতো ভাই অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন মুন্নুকে তা সরবরাহ করা হতো। জসিম তার বিভিন্ন সহযোগীর কাছে ফাঁস করা প্রশ্ন সরবরাহ করতেন। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা আব্দুস সালামকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। গত সোমবার রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি। গতকাল ঢাকায় সিআইডি কার্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

সিআইডি সূত্র জানায়, মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন মুন্নুকে আগেই গ্রেফতার করা হয়। জসিমকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান আব্দুস সালাম প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা। মূলত তার হাত ধরেই প্রশ্নফাঁসের প্রক্রিয়ার শুরু। আর প্রশ্নফাঁসের এই প্রক্রিয়ায় জড়িত পাঁচ-ছয়জন অসাধু চিকিৎসক এবং তিন-চারটি কোচিং সেন্টারও।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম বলেন, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সন্ধান পায় সাইবার পুলিশ। ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এস এম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেফতারের পর সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, সানোয়ারের তথ্যের সূত্র ধরে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন ভ‚ঁইয়াসহ জাকির হোসেন দিপু এবং পারভেজ খানকে। জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়।
সিআইডি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে কী পরিমাণ সম্পদ তারা গড়েছেন তদন্ত করছি। মানি লন্ডারিং মামলার প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে তদন্ত করছি। আসামিদের নামে-বেনামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য পেয়েছি। শুধু একজনের কথা যদি বলি, জসিমের মোট ৩৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পেয়েছি। এসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণ ২১ কোটি ২৭ লাখ। তার স্ত্রী শারমিন আরা জেসমিন ওরফে শিল্পীর ১৪টি অ্যাকাউন্টে জমার পরিমাণ তিন কোটি ৭৮ লাখ। আমারা লক্ষ্য করেছি, যখন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হয়, সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বরে এই অ্যাকাউন্টগুলোতে ক্রেডিট বেশি হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ২০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে সিআইডির সাইবার পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত করতে গিয়ে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সঙ্গে জড়িত আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে সাইবার পুলিশ। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে মাস্টারমাইন্ড আব্দুস সালামের নাম। অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ হলে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে। প্রশ্নফাঁসের এই প্রক্রিয়ায় পাঁচ-ছয়জন অসাধু চিকিৎসক এবং তিন-চারটি কোচিং সেন্টার জড়িত থাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

গ্রেফতার সালামের সম্পদ সম্পর্কে জানতে চাইলে আশরাফুল আলম বলেন, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা নেই বললেই চলে; তবে তার নেশা হলো জমি কেনা। তিনি কী পরিমাণ জমির মালিক তা জানার চেষ্টা করছি। মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে ভর্তি অনেকেই এখন চিকিৎসক। মামলার তদন্ত শেষে পরে জালিয়াতি করে ভর্তি ও পাস করা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে। আব্দুস সালামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
সাদ্দাম ৭ অক্টোবর, ২০২০, ৯:০৬ এএম says : 0
তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি
Total Reply(0)
taijul Islam ৭ অক্টোবর, ২০২০, ৯:২৩ এএম says : 0
তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন