শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এক সপ্তাহে নিহত ৮

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষ আহত শতাধিক আতঙ্কে স্থানীয়রা

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আনাস ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে সপ্তাহব্যাপী সংঘর্ষে এক নারীসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২ জন স্থানীয় যুবকও রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দফায় দফায় এ হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। এ সময় কমপক্ষে ক্যাম্পের শতাধিক ঝুপড়ি ঘর ও ৫০টির মত দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। এ নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পের পরিস্থিতি এখন থমথমে।

জানা গেছে, নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্প থেকে অন্যান্য ক্যাম্পে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ৫ শতাধিক রোহিঙ্গাকে। রোহিঙ্গাদের এ খুনাখুনিতে স্থানীয়দের মাঝেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, দোকান বরাদ্দ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে দ্ব›দ্ব। আরসা বাহিনী, আলিয়াকিন বাহিনী, আনাস গ্রুপ ও মুন্না গ্রুপসহ একাধিক গ্রæপ রয়েছে।

এই সংঘর্ষ আরো ভয়াবহ হতে পারে এবং সব ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে কর্মরত এনজিও কর্মীদের গতকাল কক্সবাজার শহরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট এনজিওসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত সকল এনজিও কর্মকর্তাদের স্ব স্ব কর্তৃপক্ষ থেকে এই নির্দেশ দেয়া হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠায় এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার দুপুর একটার কিছু সময় আগে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয় এনজিও অফিস থেকে। এনজিও কর্মীরা ক্যাম্প থেকে দ্রুত ফিরে আসতে প্রয়োজনীয় গাড়ির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এই সংঘর্ষ শুরু হয় গত ১ অক্টোবর বিকেল থেকে। তখন রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্তগুলাগুলি চলে। সকালে সমিরা আক্তার নামের একজনকে মৃত্যু উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি হলেন কুতুপালং ৩ নম্বর ক্যাম্পের এফ ব্লকের মৃত ছৈয়দ আলমের মেয়ে। গত ৪ অক্টোবর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপে আবারো দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই জন রোহিঙ্গা নিহত হয়। ভোর ৪টার দিকে কুতুপালং ক্যাম্প-২ ওয়েস্ট এর ডি ৫ ব্লকের মৃত সৈয়দ আলমের ছেলে ইমাম শরীফ ও ডি -২ ব্লকের মৃত ইউনুসের ছেলে শামসুল আলম এতে নিহত হয়।
গত ৫ অক্টোবর রাত ১১টা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত আনাস ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়। এতে মোহাম্মদ নাসিম নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত যুবক কুতুপালং ডি-৪, ২ ওয়েস্ট ক্যাম্পের মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। কুতুপালং ক্যাম্পের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আতিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার কুতুপালং ক্যাম্পে দু’গ্রুপ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হলে এতে ৪ জন নিহত হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে বলে জানা গেছে। এতে মুন্না গ্রুপের প্রধান মুন্না ও তার বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন এবং একজন মাইক্রো ড্রাইবারসহ স্থানীয় দুইজন যুবক ও নিহত হয় বলে খবর পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিন সূত্রে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের চাকমারকুল এলাকায় র‌্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে ধাওয়া করে ৯ জন রোহিঙ্গা ডাকাত গ্রেফতার করে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে। কক্সবাজারস্থ র‌্যাব-১৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা জানিয়েছেন।

কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ জানান, আনাস গ্রুপ ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে সংঘটিত ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে কয়েকশ’ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু কুতুপালং ক্যাম্প ছেড়ে অন্য ক্যাম্পে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দোকানপাট বন্ধ আছে। রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এদিকে দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কারসাজিতে পরপর দুই বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভোগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রোহিঙ্গাদের এমন অপরাধ কর্মকান্ড ও সহিংস আচরণে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকেও ভাবিয়ে তুলেছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা জানান, কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রেজিস্ট্রার্ড এবং আনরেজিস্ট্রার্ড কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বরত ১৪নং এপিবিএনের ইন্সপেক্টর ইয়াছিন ফারুক বলেন, নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপের সঙ্গে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।
উখিয়া থানার ওসি আহাম্মদ সঞ্জুর মোরশেদ জানান, দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনায় এই পর্যন্ত ৮ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সংঘর্ষের খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন