শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পটিয়ায় গভীর রাতে স্টেশনে কোটি টাকার পোনার হাট

প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস কে এম নুর হোসেন পটিয়া থেকে : রাত ১১টা হলে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেল পথের পটিয়া রেলস্টেশন যেন মানুষ আর মাছের পোনার মিলন মেলা। জুন, জুলাই, আগস্ট- এ তিন মাস এ দৃশ্য দেখা যায়। স্টেশন চত্বরেই পোনা বিক্রেতাদের হাঁকডাক ‘মিঁয়েইল্যা- মিঁয়েইল্যা’, দুয়েইল্যা-দুয়েইল্যা। মিয়েইল্যা বলতে কয়েক ধরনের পোনার মিশ্রণকে স্থানীয় ভাষায়- মিঁয়েইল্যা বলে। দুয়েইল্যা বলতে দুই আঙ্গুল সমান পোনাকে দুয়েইল্যা বলে। রাত ১০ থেকে পটিয়া রেল স্টেশন চত্বরে পোনা বিক্রেতারা কাঁধে ভাড় নিয়ে আসে। ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে পোনা বিকিকিনি। চট্টগ্রামের স্থানীয় উপজেলাগুলো ছাড়াও কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া, বাঁশখালী, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি জেলা-উপজেলা থেকে পোনা ক্রয়ের জন্য লোকজন আসেন এ স্টেশনে। রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, পাঙ্গাস, মাগুর, সিলভার কার্প, থাই মাগুর, সরপুঁটি, বিগহেড, গøাস কার্প, শিং, চিতলসহ অনেক মাছের পোনা বিক্রি হয়। প্রতি ভারে ৬ কেজি অথবা ৮ কেজি পোনা থাকে। পোনার জাত ভেদে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা বিভিন্ন দরে বিক্রয় হয়ে থাকে।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মাছ চাষ ও রেণু উৎপাদন হয়ে থাকে। হাটহাজারীর হালদা নদীর ডিম এনে মাছের রেণু উৎপাদন করার পর চাষীরা তা পোনায় রূপান্তর করে। হালদা নদীর মাছের ডিম থেকে সৃষ্ট পোনা উন্নতমানের এব্ং বড় জাতের মাছ হয় বলেই মাছ চাষীরা হালদার পোনার প্রতি আকৃষ্ট বেশি। পটিয়ায় পোনা উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা হালদা নদীতে মাছ ডিম ছাড়ার সাথে সাথে অধিকাংশ ডিম পটিয়ায় সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। মাছের জন্য পটিয়ার জলাশয়গুলোর পানি অতি উপযোগী হওয়ার কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর মধ্যে হাইদগাঁও, কচুয়াই, কেলিশহর, খরনা, খানমোহনা, ধলঘাট, আশিয়া, জঙ্গলখাইন, হুলাইন, জিরি, কাশিয়াইশ, শিকলবাহা, শোভনদÐীসহ পটিয়া পৌর এলাকা এবং পশ্চিম পটিয়ার কর্ণফুলী থানার অধীনে কয়েকটি এলাকার পুকুরগুলোতে পোনা চাষ করেন পোনা ব্যবসায়ীরা। সেসব এলাকা থেকে পোনা সংগ্রহ করে পটিয়া পৌরসদরের রেলস্টেশন বাজারে এনে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন। বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পোনা বিক্রির মওসুম হওয়ায় রেলস্টেশনের পোনার বাজার এ চার মাস জমজমাট থাকে বলে পোনা ব্যবসায়ীরা জানান। এ স্টেশনে প্রতিদিন ৩০/৩৫ লাখ টাকার পোনা বিক্রয় হয়। সেই সাথে মাছচাষকে কেন্দ্র করে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে পটিয়ায়। কর্মসৃজন হয়েছে হাজারো বেকারের।
মাছ ও পোনা বেচা-কেনা নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়ারা ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসাকে উপজীব্য করে ৩৫ হাজার মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। পোনা বহন শ্রমিকেরা প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টাকা আয় করেন। রেলস্টেশনের পোনার বাজার ছাড়াও পটিয়ায় একটি সরকারি মৎস্য প্রজননকেন্দ্র ও বেসরকারি মৎস্য পোনা উৎপাদনকারীগুলোর মধ্যে হযরত ওয়াশিল ফকির মৎস্য হ্যাচারি, মায়ের দোয়া মৎস্য খামার, ইউনাইটেড অ্যাকুয়া ফার্মস, জম জম ফার্মস, শাহ আমানত হ্যাচারি, তাহের শাহ মৎস্য আড়ত, হক অ্যাগ্রোভেট হ্যাচারিসহ আরো অনেক স্থানে পোনা বিক্রি হয়।
মৎস্যচাষী সূত্রে জানা গেছে, এক ডেক্সিতে চার-ছয় কেজি, আর এক ভাড়ে হয় আট থেকে দশ কেজি পরিমাণ পোনা থাকে। প্রতি ভাড় চার-পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া ইঞ্চি হিসেবে বিশেষ করে চিতল মাছের পোনা একশ’টির মূল্য আড়াই হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মৌসুমে এ বাজারে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পোনা কেনাবেচা হয়।
এসজে ফিস প্রোডাক্সস হ্যাচারির মালিক ও দক্ষিণ ভূর্ষি ইউপি চেয়ারম্যান মোহম্মদ সেলিম বলেন, প্রতিদিন রেলস্টেশন পোনার হাটে রাত ১১টার পর শুরু হয়ে শেষ রাত পর্যন্ত চলে। বারোশ’ থেকে দেড় হাজার ভাড় মাছের পোনা বিক্রি হয়ে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
মিনময় ২ জুন, ২০১৯, ৯:৫৯ পিএম says : 0
আমি শিং মাছের পোনা চাই
Total Reply(0)
রশিদ ১৬ জুলাই, ২০২০, ৫:৪৯ এএম says : 0
আমি পাঙ্গাশ মাছের পোনা চাই
Total Reply(0)
রশিদ ১৬ জুলাই, ২০২০, ৮:২৩ এএম says : 0
আমি পাঙ্গাশ মাছের পোনা চাই
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন