অবশেষে পিরোজপুরে ‘৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’র প্রকল্প এলাকা সহ চীনা নাগরিকদের কর্মস্থল ও আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীও নজরদারী যোরদার করেছে। গত বুধবার রাতে প্রকল্পের অফিস থেকে সাইটে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে যাবার সময় চীনা টেকনিশিয়ান প্যান ইউং জুন’কে (৫৮) ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। এঘটনায় ঐ রাতেই পিরোজপুর সদর থানা পুলিশ সিরাজ শেখ (৩৫) ও রানা (২৫) নামের দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। খুব সহসাই চীনা নাগরিক হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উঘাটন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন পিরোজপুরের এসপি হায়াতুল ইসলাম।
গত বুধবার রাতে চীনা নাগরিকের এ হত্যাকান্ডের ঘটনার পরে পুলিশ সহ বিভিন্ন আইনÑশৃংখলা বাহিনী যথেষ্ঠ তৎপড় হলেও এতদিন চীন নির্মান প্রতিষ্ঠান সহ স্থানীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দায়িত্ব নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ইতোমধ্যে পুলিশের রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স দিয়ে একটি পুলিশ চৌকি প্রকল্প এলাকায় বসান হয়েছে। কিন্তু যেখানে ৩৮ জন বিদেশী নাগরিক কর্মরত, সেখানের নিরাপত্তার বিষয়ে যতটা মনযোগ সহ নজরদারী প্রয়োজন ছিল,তাতে কিছুটা ঘাটতি ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে প্রকল্প এলাকায় একটি সশস্ত্র আনসার ক্যাম্প ছিল। কিন্তু ছিনতাইকারীদের নিহত প্যান ইউং জুন নিয়মিতভাবেই সন্ধার পরে একাই সাইট অফিস থেকে শ্রমিক মজুরী পরিশোধের জন্য বিপুল পরিমান নগদ টাকা বহন করতেন বলে জানা গেছে। এ কারেনই স্থানীয় ছিনতাইকারী চক্র দীর্ঘদিন বিষয়টি অনুসরন করে ঐদিন প্যান ইউং-এর ওপর হামলা চালায় বলে মনে করছেন একাধীক অপরাধ বিশেষজ্ঞ।
তবে পিরোজপুরের এসপি এক্ষেত্রে পুলিশের কোন ধরনের উদাশীনতা বা নজরদারীর ঘাটতির বিষয়টি অস্বিকার করে নিয়মিতভাবে ঐ এলাকায় পুলিশী টহল অব্যাহত ছিল বলে দাবী করেছেন। এমনকি প্রকল্পে দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের সাথেও পুলিশ নিয়মিত যোগাযোগ রাখত বলে জানিয়েছেন তিনি। এসপি বিষয়টিকে সম্পূর্ণ বিচ্ছন্ন ঘটনা বলে দাবী করে অত্যন্ত দ্রæততম সময়ের মধ্যে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের চিঞ্হত করা সহ এর মূল মোটিভ উদঘাটনের কথাও জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিদেশী নাগরিকদের নিছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিক করার কথাও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা/মোংলা মহাসড়কের পিরোজপুরের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৯৫ মিটার দীর্ঘ ‘৮ম বাংলাদেশÑচীন মৈত্রী সেত’ুটি নির্মিত হচ্ছে চীনা অনুদান বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে। ৮৯৪ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যায়ের ৬৫৪ কোটি টাকা চীন সরকার সম্পূর্ণ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও সেতুটির সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজা সহ জমি অধিগ্রহনে ২৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। এ সেতুটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলের সাথে বৃহত্বর খুলনা ও যশোর ছাড়াও মোংলা, বেনাপোল ও ভোমড়া বন্দর সহ দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ২০২২-এর জুনের মধ্যে চীনা পরামর্শক ও নির্মান প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করবে বলে জানিয়ে ইতোমধ্যে ৫৫ ভাগ কাজ শেষ করার কথা বলেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন