নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আবু মুহাম্মদ আমিন উদ্দিন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। গতকাল রোববার তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নির্ধারিত আসনে বসেন এবং কার্যক্রম শুরু করেন।
নিজ কক্ষে বসেই তিনি সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে আপিল বিভাগে চলমান মামলার শুনানিতে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। দায়িত্ব ভার গ্রহণের পরপরই ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বারের অন্যান্য আইনজীবীরাও তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। গত ৮ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট সাংবিধানিক এ পদে নিয়োগ দেন। অন্যদিকে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল দায়িত্বভার গ্রহণের দিনই পদত্যাগ করেছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং মো. মমতাজউদ্দিন ফকির। তারা দু’জনই নিজ নিজ পদত্যাগপত্র সলিসিটর কার্যালয়ে জমা নেন। মমতাজ উদ্দিন ফকির পদত্যাগের কারণ হিসেবে বলেন, একান্ত ব্যক্তিগত কারণে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। এর বাইরে কিছু হয়নি।
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্র জানায়, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গত ২৭ সেপ্টেম্বর করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। তার শারীরীক অবস্থা জটিল হয়ে পড়লে এ পদে আসীন হওয়ার মতো সম্ভাব্য ব্যক্তি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভেকেট এএম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং মমতাজউদ্দিন ফকিরের নাম আলোচনায় আসে। তবে প্রেসিডেন্ট শেষ পর্যন্ত এএম আমিনউদ্দিনকেই অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নেন। এ নিয়োগের কারণে আশাহত হন মুরাদ রেজা এবং মমতাজ উদ্দিন ফকির। হতাশা থেকেই তারা পদত্যাগ করেছেন বলে জানায় সূত্রটি।
অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণকারী আবু মুহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন ১৯৬৩ সালে সিলেট মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। এসএসসি পাসের পর ঢাকা সিটি কলেজ এইচএসসি পাস করেন । স্নাতক ডিগ্রি নেন ঢাকা কলেজ থেকে। পরে সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে এলএলবি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন আমিন উদ্দিন। ১৯৮৯ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে এবং ২০০৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারের সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হোন। ২০১৯-২০২০ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হোন। সর্বশেষ ২০২০-২০২১ সালের মেয়াদেও দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি একই বারের সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০০-২০০১ সালে এএম আমিন উদ্দিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল। দুই অতিরিক্ত জেনারেলের পদত্যাগের পর এখন আমিন উদ্দিনের নেতৃত্বে একজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল রয়েছেন। এছাড়া ৬৭ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৫৫ জন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল রয়েছেন। নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল দায়িত্ব নেয়ার পর এসব পদে ব্যাপক রদবদল ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন তার অধীনস্থ আইন কর্মকর্তারা।
নারী নির্যাতন মামলা অগ্রাধিকার
ভিত্তিতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে : এদিকে ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের মামলা তালিকা ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নব নিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। দায়িত্বভার নেয়ার পর গতকাল রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। তার মতে,মামলা জট হ্রাস করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। অধস্তন আদালতগুলোতে কর্মরত পাবলিক প্রসিকিউটরদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচার বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে যে কোনো মামলায় লড়ার জন্যে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মামলায় আসামি কে সেটা দেখবো না। আমি দেখবো মামলা। রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব। এ এম আমিন উদ্দিন বলেন,প্রথম অগ্রাধিকার হলো মামলার জট কীভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া। আর মরহুমদ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যে কাজগুলো করে গেছেন, সেই কাজগুলো এগিয়ে নেয়া। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার যে উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী নিচ্ছেন, সেটা খুবই ইতিবাচক। সমাজে মূল্যবোধটা ফিরিয়ে আনতে হবে। ‘দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা নিষ্পত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি-সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নতুন এই অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে দেশের সব আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরদের (পিপিই) সঙ্গে আলোচনা করে তালিকা ধরে ধরে নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন