শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নিরাপদ প্রজননের লক্ষে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ইলিশ আহরনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে

বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় জেলেদের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিশেষ নজরদারীর দাবী

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২০, ৩:৪৪ পিএম | আপডেট : ৫:২৬ পিএম, ১২ অক্টোবর, ২০২০

 

উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন সুযোগ সৃষ্টিতে উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য সব ধরনের মাছ আহরন সহ সারা দেশে ইলিশ আহরন,পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। অন্যান্য বছর আশি^নের প্রথম উদিত চাঁদের হিসেবে বড় পূর্নিমার দিন সহ আগের ও পরের মোট ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌশুম হিসেবে ”িঞ্হিত করা হলেও এবার সবধরনের তথ্যÑউপাত্ত বিশ্লেষন ও গবেষনার মাধ্যমে ১৩ অক্টোবর ম্যধ্যরাত থেকে ৪ নভেম্বর সময়কেমূল প্রজননকাল হিসেবে চিঞ্হিত করা হয়েছে। তবে এ মূল প্রজননকালের আহরন নিষিদ্ধ সময়ে ভারতীয় জেলেরা যাতে বঙ্গোপসাগরে আমাদের নৌ সীমা থেকে ইলিশ লুটে নিতে না পাড়ে সে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতার দাবী জানিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের মৎসজীবীগন।

মূল প্রজননকালের এসময়ে ইলিশ আহরন বন্ধে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তর সহ আরো কয়েকটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল ছাড়াও দেশের উপক’লীয় ৩৬টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ইউনিয়ন থেকে উপজেলা হয়ে জেলা পর্যায়ে পুলিশÑপ্রশাসন ছাড়াও নৌবাহিনী, কোষ্ট গার্ড, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপি এসব টাস্ক ফোর্সের সাথে কাজ করবে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশ অনুযায়ী ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমদ্দিন থেকে পশ্চিমে সৈয়দ আউলিয়া পয়েন্ট, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট-এর ধলচর দ্বীপ ও মনপুরা দ্বীপ, চট্টগ্রাম উপক’লের মীরসরাই উপজেলার শাহেরখালী হয়ে হাইতকান্দীÑমায়ানী পয়েন্ট এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া থেকে গন্ডামারা পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যাধীক প্রচুর্য লক্ষ করা যায়। উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের প্রধান ঐ প্রজনন ক্ষেত্রে আগামী ২২দিন সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া সারাদেশে ইলিশ আহরন ও পরিবহন সহ বিপননও বন্ধ থাকবে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ তার জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। একটি পরিপক্ক ইলিশ প্রতিদিন শ্রোতের বিপরিতি ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে পারে। উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মূক্তভাবে ভাসমান ডিম থেকে ফুটে বের হবার পরে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নর্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরন করে। এরা খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্কতা অর্জনের লক্ষ্যে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২Ñ১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্কতা অর্জন করে প্রজননক্ষম হয়ে তারা আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে আসে। সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় জাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে মৎস বিজ্ঞানীগন ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহিৃত করায় অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০০১৮-এর ৭Ñ২৮ অক্টোবর দেশব্যাপী ইলিশ আহরন বন্ধ থাকায় উপকূলের প্রজননস্থল সহ অভ্যন্তরীন মূক্ত জলাশয়ে ৪৮% মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। এসময়ে প্রজনন সাফল্য ৮০%-উন্নীত হয়। ইলিশ আহরন নিষিদ্ধের ফলে দেশে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি উৎপাদিত ডিমের ৫০%-এর সাফল্যজনক পরিস্ফুটন ও ১০% বেঁচে থাকলেও ইলিশ পরিবারে ৩ হাজার কোটি জাটকা যূক্ত হয়। এসময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সমুহে পরিক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩% ইলিশের রেনু পাওয়া যায়।
গত দুই দশক ধরে ইলিশ নিয়ে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন সোয়া দ্ ুলাখ টন থেকে গত বছর ৫ লাখ ৩৩ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। যা চলতি অর্থ বছরে ৫.৪০ লাখ টনে ও আগামী অর্থবছরে সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হবার ব্যাপারে আশাবাদী মৎস্য অধিদপ্তর। আর সারাদেশে মোট উৎপাদনের ৬৬Ñ৭০% ইলিশ উৎপাদন হচ্ছে বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীন ও উপকলীয় মূক্ত জলাশয়ে। গত দুই দশকে বরিশাল বিভাগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ১৫০%-এরও বেশী।
নিষিদ্ধকালীন ২২দিনে এবার ইলিশ আহরন বিরত জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে সরকার দেশের উপক’লীয় ১৫২টি উপজেলার ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৮২ জেলে পরিবারের জন্য ২০ কেজি করে ১০ হাজার ৫৬৬ টন চাল সরবারহ করবে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ২ লাখ ৮২ হাজার ৫শ জেলে পরিবারের জন্য বরাদ্ব রাখা হয়েছে ৫ হাজার ৬৫০ টন।
‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’এর আওতায় ২০০৫ সালেই সর্বপ্রথম প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের আহরণ বন্ধ রাখা হয় ১০ দিন। ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনে ও ২০১৬ সালে থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়। আমাদের অর্থনীতিতে জাতীয় মাছ ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২%। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, সারা বিশ্বে উৎপাদন হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে গত দেড় দশকে ইলিশের উৎপাদন প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০% বাংলাদেশে উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, দেশের ৪০টি জেলার ১৪৫ উপজেলার দেড় হাজার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ জেলে পরিবার ইলিশ আহরনে সম্পৃক্ত। যার ৩২% সার্বক্ষণিক এবং ৬৮% খন্ডকালীন। এছাড়া ইলিশ বিপনন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরন সহ জাল, নৌকা ও বরফ তৈরী এবং মেরামত কাজেও প্রায় ২০-২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাতেই প্রায় সোয়া ৩ লাখ জেলে এ পেশার সাথে জড়িত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন